কেন লোডশেডিং? কীভাবে পরিত্রাণ মানুষের– বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাস

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ  © সংগৃহীত

দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড দাবদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সঙ্গে আছে অসহনীয় লোডশেডিং। গত কয়েক বছরের তুলনায় গরমের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমান সরকারের আমলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হওয়ার পরও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। এবার এর কারণগুলো দেশবাসীকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সোমবার (৫ জুন) নিজের ফেসবুকে আলাদা দুটি স্ট্যাটাসে লোডশেডিংয়ের নেপথ্য কারণ এবং কীভাবে লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে তা জানান তিনি।

স্ট্যাটাসগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশে কেন হচ্ছে লোডশেডিং? কিভাবে পরিত্রাণ পাবে সাধারণ মানুষ? শিরোনামের স্ট্যাটাসে নসরুল হামিদ লেখেন, তীব্র গরমে কষ্ট করছে বাংলাদেশের মানুষ। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক পাখা, এসি ও এয়ার কুলারের ব্যবহার বাড়ছে। মানুষ স্বস্তির জন্যই এসব যন্ত্রের মুখাপেক্ষী হচ্ছে বাধ্য হয়েই। 

তীব্র গরম এবং সেই সাথে লোডশেডিংয়ের কারণে সবার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কারোরই কাম্য নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত লোডশেডিংয়ের পেছনে বেশকিছু কারণ আছে, যা সবারই জানা প্রয়োজন।
 
আপনাদের অজানা নয়, করোনা মহামারির ধাক্কা, পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস ওয়েলসহ সব প্রকার জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, সেই সাথে প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যে সংকট এখনও চলমান। 
 
অন্যদিকে, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে লাগামহীনভাবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি যথা গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস ওয়েল আমদানিতে অনেকটা প্রভাব পড়েছে। ফলে বর্তমানের এ অনাকাঙ্ক্ষিত লোডশেডিং। তবে আমরা খুব দ্রুতই জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। আশা করি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে।
 
আপনারা জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবিচল নেতৃত্বে দিনরাত পরিশ্রম করে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ২০০৮ সালেও মাত্র ৪৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেতেন, সেখানে আজ শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে, যা বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় নজিরবিহীন ঘটনা। শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে জাতীয় অর্থনীতি ও সব ধরনের উৎপাদনে অভাবনীয় গতি এসেছে। এতে দেশজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। 
 
চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিগত এক যুগে আমরা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি ৫ গুণেরও বেশি। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭,৩৬১ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভসহ)। ফলে উৎপাদন সক্ষমতার দিক থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের নজিরবিহীন ঊর্ধ্বগতির কারণেই আমরা এ অনাকাঙ্ক্ষিত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছি।
 
আমি সর্বোপরি আপনাদের ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসাথে আশ্বস্ত করতে চাই, এ পরিস্থিতি সাময়িক। খুব দ্রুতই আমরা ভালো অবস্থায় ফিরে আসব।
 
অনেকের মনে থাকার কথা ২০০৮ সালের আগে সারা দেশে দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। আশা করি আপনাদের সেই  আস্থা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে। সবাই মিলে আমরা দ্রুততম সময়ে এই ভোগান্তি পাড়ি দিতে সমর্থ হব।
 
প্রথম স্ট্যাটাসের তিন ঘণ্টা পর ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সেই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন: বাংলাদেশে কেন হচ্ছে লোডশেডিং? কীভাবে পরিত্রাণ পাবে সাধারণ মানুষ?


 
তীব্র গরমে কষ্ট করছে বাংলাদেশের মানুষ। একই সাথে বৈদ্যুতিক পাখা, এসি ও এয়ার কুলারের ব্যবহার বাড়ছে, মানুষ স্বস্তির জন্যই এসব যন্ত্রের মুখাপেক্ষী হচ্ছে বাধ্য হয়েই। গত ৩ জুন তারিখেও ১৩ হাজার ৬শ ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ, তারপরও লোডশেডিং।

আওয়ামী লীগ সরকার এই দেশের সব গ্রামে, শহরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছে, এই সরকার জনগণের সরকার, তাই জনগণের সহযোগিতা নিয়েই এই সংকট মোকাবিলা করতে চায় সরকার।

আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ৬ বিভাগে

বিএনপি-জামায়াতের তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতায় থাকলে আজকে দেশে কী অবস্থা হতো একবার চিন্তা করুন! যেখানে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েও দেশে লোডশেডিং করতে হচ্ছে, সেখানে ৩ হাজার মেগাওয়াটে কী পরিস্থিতি হতো আরেকবার ভাবুন। আসুন যার যার যায়গা থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করি।
 
এদিকে, আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি জুন মাসেও কম বৃষ্টি হতে পারে। জুন মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।
 
দেশে ৫ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল দিনাজপুরে ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে আগামী সপ্তাহের আগে বৃষ্টি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছেন তা আবহাওয়াবিদরা।


সর্বশেষ সংবাদ