বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ করছে দেশবাসী

প্রতীকী
প্রতীকী  © সংগৃহীত

সারাদেশে গেল কয়েকদিনের তীব্র খরতাপে মানুষতো বটেই গৃহপালিত পশুপাখি ও বন্যপ্রাণীরাও রয়েছে চরম কষ্টে। মাঠঘাট খালবিল শুকিয়ে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাজার হাজার টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে গেছে আড়াইশ ফুটের নিচে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বৈদ্যুতিক পাম্প লাগিয়েও পানি উঠানো যাচ্ছে না বহু গভীর-অগভীর নলকূপে। 

এদিকে, মসজিদে আসার আগে বাড়ি থেকে ওজু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যশোর-কুষ্টিয়ার গ্রামগুলোতে। চলতি ইরি বোরো মওসুমে ধানের উৎপাদন কম এবং তাতে চিটা হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ। গেল কয়েকদিনের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ করছে দেশবাসী।

আবহাওয়া অধিদপ্তরও বলছে, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আর এর মাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, টানা প্রায় ১৩ দিন ধরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙায় রেকর্ড করা হচ্ছে। আর এটি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর আশপাশেই থাকছে।

আয়োজন করে না হলেও জেলাটির বিভিন্ন মসজিদে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছেন মুসল্লিরা। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, দেশের প্রায় অধিকাংশ মসজিদে এমন প্রার্থনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন, ইসলামী রীতি অনুযায়ী তাদের কেউ কেউ বিশেষ নামাজের জন্য বৃষ্টির প্রার্থনা করেছেন।

গত দশ দিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকা থেকে কুষ্টিয়া যশোর হয়ে সাতক্ষীরার সুন্দরবন পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৮-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় সরাসরি সূর্যতাপে হুলফুটানো গরম অনুভূত হচ্ছে। ফ্যানের নিচেও তীব্র গরম। কোথাও স্বস্তি নেই।

১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল বগুড়ায় তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৪৪ ডিগ্রি। গত তিন দিনে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল ঢাকার তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ২০ এপ্রিলের আগে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। বরং তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এমনকি তা অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে।

বৃষ্টির জন্য যেভাবে নামাজ পড়বেন
এখন তীব্র তাপদাহ। পুড়ছে মানুষ ও পশু-পাখি। এমন প্রচণ্ড গরমে এক পশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশু-পাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপপ্রবাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন।

এহেন পরিস্থিতিতে তাঁরই দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। ইসলামি পরিভাষায় এই দোয়ার নাম ইসতিসকা বা সিক্তকরণের দোয়া এবং নামাজের নাম ‘সালাতুল ইসতিসকা’ বা ‘বৃষ্টি কামনায় নামাজ’।

ইসতিসকার নামাজের পদ্ধতি
বৃষ্টি প্রার্থনায় সম্মিলিতভাবে জামাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এরপর ইমাম সাহেব কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। মুসল্লিরাও তখন কায়মনোবাক্যে তাঁর সঙ্গে শরিক হয়ে দোয়া-প্রার্থনা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ