চা বিক্রি করে স্ত্রীকে পড়িয়েছেন ঢাবিতে, ভাইকে করিয়েছেন এমবিএ

মো: হান্নান
মো: হান্নান  © সংগৃহীত

পরনে দামি শার্ট-প্যান্ট, চলা ফেরায় বেশ পরিপাটি। হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি ও পায়ে সু। সব সময় থাকেন ফরমাল ড্রেসে। তিনি একজন সামান্য চা বিক্রেতা। তবে সবাই তাকে স্মার্ট চা বিক্রতা হিসেবেই চেনে। কেননা শুধু পোশাকেই নয় আধুনিকতা তিনি ধারণ করেন তার মননে। নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও  চা বিক্রি করে স্ত্রীকে পড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছোট ভাইকে করিয়েছেন এমবিএ।

গত ১০ বছর ধরে রাজধানীর পান্থপথ সিগলালে ফুটপাতে তিনি চা বিক্রি করেন। বর্তমানে তিনি এক ছেলে সন্তানের বাবা। তেমন কোন ব্যাংক ব্যলেন্স, গাড়ী-বাড়ি না থাকলেও সময় কাটান বেশ হাসি-খুশিতে। নাম তার মো: হান্নান। ভোলার দৌলতখাঁন উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তিনি।

তিনি জানান, পরিবারের দৈন্যদশায় পড়শোনাটা ঠিক মতো করতে পারেননি। পারিবারিক অসচ্ছলতা, দারিদ্রতা আষ্টে পিষ্টে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, উপায়ন্ত না পেয়ে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন অট্টালিকায় ঠাসা জনসমুদ্রের নগরী রাজধানীতে। অচেনা এই নগরীতে এসেও কি করবেন, কি ভাবে চলবেন, পড়ে গেলেন গভীর চিন্তায়। কিন্তু পরিবারের হাল ধরতে হবে। তাই রাজধানীর পান্থপথে ফুটপাতে একটি চায়ের দোকানের পরিকল্পনা করেন। যেই পরিকল্পনা সেই কাজ। দেখতে দেখতে কেটে গেল ১০ বছর। আর এই দশ বছরে নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়ে পড়াশোনা করালেন ছোট ভাই ও স্ত্রীকে। তার ছোট ভাই এমবিএ শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। পরিবারে সদস্যদের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দিতে এখনও দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। খুব বড় কিছু হতে না পারলেও স্ত্রী সন্তান ও যৌথ পরিবার নিয়ে বেশ ভালোই আছেন।

স্মার্ট চা বিক্রেতা মো: হান্নান বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ১০ বছর আগেই নিজের পড়া লেখা বাদ দিয়ে পরিবারের হাল ধরি। সেখান থেকে আজকের এই পর্যন্ত আসা। বর্তমানে পরিবার নিয়ে ভালোই আছি। আমার ছোট ভাইকে এমবিএ করিয়েছি। বর্তমানে সে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জব করে। আমার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টাস শেষ করেছে। এখনও তার কোন জব হয়নি। চেস্টা চলছে। এসএসসির পর থেকে আমার ওয়াইফের হাল ধরি। বাবা-মাসহ পরিবারে সবার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। বাবা নেই। সবাইকে পড়া-লেখা করিয়েছি। এই দিক দিয়ে আমি বেশ সফল। তবে ব্যাংকে তেমন টাকা পয়সা জমাতে পারিনি।

সবসময় কেন ফরমাল ড্রেসে থাকেন এ বিষয়ে বলেন, যেহেতু রাস্তার পাশে বিজনেস। সম্মানও থাকতে হবে। সম্মানের সহিত সবাই কথা বলতে হবে। ফলে আমাকে সেই ভাবে চলাফেরা করতে হবে। সেই ভাবে পোশাকাদি পরতে হবে। কেই আমাকে তুই বলবে না। বা বলবে না এই বেটা একটা চা দে। এই গ্লাসটা ধুয়ে দে। এই জন্যে আমি সবসময় স্মাটভাবে চলফেরা করি। এখন মানুষ আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। কেউ আমাকে খারাপ ভাষায় কথা বলে না। 

আরও পড়ুনঃ সাত কলেজের সাবজেক্ট চয়েসের সময় বাড়লো

 এই স্মাট চা বিক্রেতা আরও বলেন, ক্রেতার অনেক হ্যাপি। অনেক খুশি। অনেকে রাত তিনটা দিকেও অনেকে আসে চা খেতে। আমার এখানে ক্রিকেটার নাসির, সাব্বির, এফডিসি থেকে আসে বিভিন্ন টিভি-সিনেমার তারকারা। মন্ত্রনালয় থেকেও আসে অনেকে।

তার দোকানে ৭-৮ প্রকারে চা পাওয়া যায়, যার বিভিন্ন নামও রয়েছে। ফিল্টার পানি দিয়ে তৈরি হয় এই সব চা গুলো। থাকে হরেক রকমের মসলা। দ্রব্য মূল্যের এমন ঊর্ধগতির মধ্যেই কোন চায়ে দাম বাড়াননি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার এখানে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ চা বিক্রি হয়। যা এই শহরে কোথাও বিক্রি হয় না। কেউ বিক্রি করতে পারে না। অনেক চা বিক্রি হয়। আল্লাহ তাআলা আমাকে এতো দেয়।

স্মার্ট এই চা বিক্রেতার চা খেয়ে ক্রেতারাও বেশ খুশি। রাজধানীর বিভিন্ন যায়গা থেকে চা খেতে আসেন অনেকে। বিভিন্ন যায়গা থেকে প্রাইভেটকারে আসেন চা খেতে। উত্তর বাড্ডা থেকে আসা ইউনুস নামে এক ব্যক্তি বলেন, চা টা বেশ ভালো। অন্যান্য যায়গা থেকে একদম আলাদা।

প্রতিদিনই চা খেতে আসেন জুয়েল মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, এখানে টক চা পাওয়া যায়। কাঁচা মরিচ ও তেতুলের বেশ মজা। এটা ডায়বেটিসের জন্য উপকারি। 

 


সর্বশেষ সংবাদ