আমাদের দেশটা সুন্দর হবে কিভাবে?

লেখক ড. কামরুল হাসান মামুন ইনসেডে
লেখক ড. কামরুল হাসান মামুন ইনসেডে   © টিডিসি ফটো

নিউমার্কেটের ফাস্ট-ফুড দোকানের দুই কর্মচারীর মাঝে ঝগড়া। মার খাওয়া এক কর্মচারী নিয়ে আসে তার ঢাকা কলেজের মাস্তান বন্ধু তার পক্ষে এসে মারামারি করার জন্য।

ঢাকা কলেজের বন্ধুরাও মার খেয়ে কলেজে ফিরে মিথ্যে নালিশ করে কলেজের ছাত্রদের উত্তেজিত করে এটিকে ঢাকা কলেজ বনাম নিউমার্কেট ঝগড়া বানিয়ে ফেলে। এই কাজে প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছে সরকারি দলের ট্যাগ। সুতরাং তাদের দলের কেউ মার খাবে আর তার প্রতিশোধ হবে না?

এই যে কান নিয়েছে চিলে তাতেই চিলের পিছে ছুটছে সবাই মিলে এটাই প্রমাণ করে এই দেশের ছাত্ররা কতটা অশিক্ষিত। যার দায় শিক্ষক, অভিভাবক এবং সরকারের। এই ছাত্ররা যদি সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হতো, এই ছাত্ররা যদি জানতো লেখাপড়া শেষে তাদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাহলে তারা এমন করে চিলের পেছনে দৌড়াতো না।

আমি আমার ছাত্র জীবন থেকেই দেখে আসছি ছাত্রনেতারা কোন মার্কেটে অপকর্ম করে মার খেয়ে এসে হলের ছাত্রদের দলেবলে নিয়ে গিয়ে লংকা কাণ্ড ঘটিয়ে দেওয়া। যেটা আমরা বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জেও দেখি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মাঝে মারামারি।

আরও পড়ুন : ইহুদীদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে কীভাবে বড় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হব?

আমাদের প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে সেখানকার গ্রামবাসীদের মারামারির কথাও আমরা প্রায়ই পত্রিকায় পাই। আমরা কতটা বর্বর ও প্রিমিটিভ সেটা এইরকমের ঘটনা থেকে আঁচ করা যায়।

কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত আমাদের আমাদের সমাজের সর্বস্তরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই দলের মারামারিতে শেষ হয়। সত্যিকারের লেখাপড়া থাকলে এইসব আমাদের মনে সুপ্ত অবস্থায় চলে যেত। আমরা যে মানসম্পন্ন শিক্ষার দিক থেকে অশিক্ষিত তার প্রমাণ পেতে খুব বেগ পেতে হয় না। চোখ মেললেই চারপাশে তার প্রমাণ মেলে।

ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া, রিকশা গাড়িকে মেরে দিয়েছে বা এক গাড়ি অন্য এক গাড়িকে মেরে দিয়েছে তার জন্য ঝগড়া, বাসে ভাড়া নিয়ে বাস কন্ডাক্টরের সাথে ঝগড়া ইত্যাদি সর্বত্র। এমন বর্বর আচরণ বর্তমান বিশ্বের কোন সভ্য দেশে অচিন্তনীয়।

এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এখনো মানুষ হতে পারিনি এটাই আমাদের ব্যর্থতা। এর কারণ আমরা আজ পর্যন্ত একটা সত্যিকারের আলোকিত সক্ষম সরকার পেলাম না যারা দেশের মানুষকে সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে জোর দিবে।

বাংলাদেশ তো সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা। অথচ এই দেশটাকে আমরা কুৎসিত বানিয়ে ফেলেছি। লজ্জা লাগে না? যেই দেশের মাটি উর্বর না সেইসব অনেক দেশ দেখলে হিংসে হয়।

আমাদের দেশটা সুন্দর হবে কিভাবে? যারা সুন্দর করার দায়িত্বে তারা তাদের সন্তানদের স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পাঠিয়ে দেন অন্য দেশে। যারা সুন্দর করার দায়িত্বে তারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ দেখেন অন্য দেশে। অথচ নিজ দেশকে তাদের সন্তানদের জন্য সুন্দর করে গড়ে তোলার কোন তাগিদ অনুভব করে না। আর দেশের জনগণও তাই। তারাও সেই দুষ্ট নেতাদের জন্যই জীবন দিয়ে দেয়। এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ দেখিনা।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ