করোনা সংক্রমণ দ্রুত বিস্তার ও শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়ার কারণ

  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরিবার চারটি প্রধান জেনাসে বিভক্ত—আলফা করোনাভাইরাস, বিটা করোনাভাইরাস, গামা করোনাভাইরাস, ও ডেল্টা করোনাভাইরাস। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন এ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, মানুষের জন্য ক্ষতিকর সাতটি করোনাভাইরাসের মধ্যে তিনটি করোনাভাইরাস, SARS-CoV- 1, MERS-CoV ও সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস, SARS-COV-2 মানুষের মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ছয় জনের একজন মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়। ট্রেন্ডস ইন মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, সার্স-কোভ-১ ও মার্স-কোভ ভাইরাসের কারণে আক্রান্তদের মৃত্যু হার যথাক্রমে প্রায় ৯ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ ছিল, তবে এ দুইটি ভাইরাসের সংক্রমণ তুলনামূলক অনেক সীমিত পর্যায়ে আছে।

বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণ পূর্বের দুইটি ক্ষতিকর করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুসে সমস্যা, দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ডায়াবেটিস রোগ আছে, তাঁদের কোভিড-১৯ দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার বিশাল ঝুঁকি রয়েছে।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রদত্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলমান মারাত্মক সংক্রমক সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের কারণে বিশ্বে ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৭৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

নভেল করোনা সংক্রমণ দ্রুত বিস্তারের কারণ

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি ও থুতুর মাইক্রো-ড্রপলেটের মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির কাশির তরল ড্রপলেটগুলোই করোনাভাইরাসের মূল বাহক, আর এগুলো ছয়/সাত ফুট পর্যন্ত যেতে পারে। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী ‘সার্স-কোভ-২’ ভাইরাস হাঁচি, কাশি ও থুতুর মাইক্রো-ড্রপলেটের মধ্যে তিন ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে এবং এই ভাইরাস মাইক্রো-ড্রপলেট হিসেবে প্ল্যাস্টিক, স্টেইনলেস স্টিল, পিজবোর্ডের (পুরূ ও শক্ত কাগজবিশেষ) সহ অন্যান্য বিভিন্ন পৃষ্ঠের ওপর পতিত হয়ে আদ্র বা শুষ্ক অবস্থায় ঘন্টার পর ঘন্টা, এমনকি দিনের পর দিন টিকে থাকতে সক্ষম। সে কারণে এই মারণ ভাইরাস বাতাসসহ বাড়ি/ঘর/শপ/প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে ব্যবহৃত জিনিষপত্র, গণপরিবহনে ব্যবহৃত আসন বা বডি পার্টসের মাধ্যমে বিস্তারে সক্ষম।

মানুষের চর্ম করোনাভাইরাসের আদর্শ পৃষ্ট (surface)। মানুষের চর্মের (মূলত হাত) সাথে ভাইরাসের শক্তিশালী পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোগ হয়। মানুষ যদি কোন পৃষ্টের উপরে থাকা ভাইরাস (যেমন, প্ল্যাস্টিক, স্টেইনলেস স্টিল) হাত দিয়ে স্পর্শ করে, ভাইরাস হাতের চামড়ার সাথে লেগে যায়।

যদি কেউ হাত দিয়ে মুখমন্ডল বিশেষভাবে মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ করে, ভাইরাস দেহে সংক্রমিত হয়। সাধারনত মানুষ প্রতি দুই থেকে পাঁচ মিনিটে একবার হাত দিয়ে মুখমন্ডল স্পর্শ করে (তথ্য সূত্রঃ ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন)। করোনাভাইরাস সংস্পর্শ বা শ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহ কোষে প্রবেশ করে স্বতস্ফুর্তভাবে অসংখ্য ভাইরাস সৃষ্টি করে।

২০০২-২০০৩ সালে সংঘটিত মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাস সার্স-কোভ-১ এর সাথে ২০১৯-২০২০ সালের চলমান বৈশ্বিক মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাস সার্স-কোভ-২ এর অনেক সাদৃশ্য থাকলেও, উভয়ের বাহিরের আবরণের ‘স্পাইক’ প্রোটিনের গঠনে পার্থক্য রয়েছে। ৩০ মার্চ, ২০২০ তারিখের ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কোভিট-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসের (সার্স-কোভ-২) বাহিরের আবরণে স্পাইক প্রোটিনগুলো ২০০২-২০০৩ সালের মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাসের (সার্স-কোভ-১) চেয়ে অনেক বেশী সন্নিবিষ্ট হওয়ায়, বর্তমানে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস দ্বারা মানুষের দেহের কোষগুলো দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রোগ বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ।

সার্স-কোভ-১ ও সার্স-কোভ-২ উভয় ভাইরাসই রিসেপটর-বাইন্ডিং ডোমেন এর মাধ্যমে মানুষের কোষের একই রিসেপটর ‘hACE 2/এইচএসিই ২’ (হিউম্যান এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২)-তে সংযুক্ত হয়। এইচএসিই ২-তে সংযুক্ত হওয়ার জন্য উভয় ভাইরাসের রিসেপটর-বাইন্ডিং ডোমেনে স্পাইক প্রোটিনের দুইটি হটস্পটস, হটস্পট-৩১ ও হটস্পট-৩৫৩ আছে। কিন্তু উভয় ভাইরাসের রিসেপটর-বাইন্ডিং ডোমেনের হটস্পটগুলির গঠনে কিছুটা ভিন্ন হওয়ায়, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের দুইটি হটস্পটস, সার্স-কোভ এর দুইটি হটস্পটস এর তুলনায় এইচএসিই ২ এর সঙ্গে বন্ধনে অধিক স্থিতিশীল ও নিবিড়।

সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের রিসেপটর-বাইন্ডিং ডোমেনের হটস্পটগুলোর স্পাইক প্রোটিনের ভিন্ন গাঠনিক বৈশিষ্টের কারণে সার্স-কোভ-১ এর তুলনায় মানুষের কোষের এইচএসিই-২ কে তীব্রভাবে আসক্তির মাধ্যমে দ্রুত সংক্রমণ বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।

নিউমোনিয়া ও তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণ

যখন একজন নভেল করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি/কাশি/থুতুর মাধ্যমে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সমৃদ্ধ তরল ড্রপলেট নির্গত করে, অনাক্রান্ত ব্যক্তিরা তা শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে বা কোন পৃষ্টের উপরে থাকা ভাইরাস যুক্ত শুস্ক/আদ্র ড্রপলেটগুলো হাতের মাধ্যমে স্পর্শ করে মুখমন্ডলে পরিবাহিত করে। এইভাবে ভাইরাস নাকে ও গলায় প্রবেশ করে। সম্প্রতি ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পাঁচদিনে প্রতি মিলিলিটার থুতুতে (sputum) উচ্চমাত্রায় (সত্তর লক্ষ কপি ভাইরাস) এবং একইভাবে কফেও উচ্চমাত্রায় কোভিট-১৯ রোগের ভাইরাস বহন করে।

যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইন্সটিউটের বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রকাশনার প্রিপ্রিন্ট অনুযায়ী, কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস নাকের অভ্যন্তরের আবরণে (the lining of the nose) বসবাসের আনন্দদায়ক জায়গা খুঁজে পায়। যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইন্সটিউটের বিজ্ঞানীদের মতে, নাকের অভ্যন্তরের আবরণের কোষগুলো এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২/এসিই২ (angiotensin-converting enzyme 2/ACE2) নামক এক ধরণের সেল-সারফেস রিসেপটর দ্বারা সমৃদ্ধ।

সমগ্র দেহ কোষের এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২/এসিই২ সাধারণত মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এসিই২ রিসেপটর, কোষগুলোকে সুরক্ষিত না রেখে সংক্রমণ সূচিত করে কারণ ভাইরাস কোষে প্রবেশ করতে এই রিসেপটর ব্যবহার করে। কোষে প্রবেশ করেই, ভাইরাস কোষের মেশিনসমূহ হাইজ্যাক করে, তাদের অসংখ্য কপি তৈরি করে এবং নতুন কোষগুলোকে আক্রমণ করে (সূত্রঃ যুক্তরাস্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞান ভিত্তিক ওয়েব সাইট ‘সায়েন্স’)।

শ্বাসতন্ত্রকে প্রধান দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়; ওপরের অংশ বা আপার রেসপিরেটরি ট্রাক্ট (নাক, ন্যাজোফ্যারিংস, ফ্যারিংস বা গলবিল ও স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংস) এবং নিচের অংশ বা লোয়ার রেসপিরেটরি ট্রাক্ট (নিম্ন শ্বাসনালী ও ফুসফুস)। বিশেষভাবে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস যখন মানবদেহে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে, আক্রান্ত ব্যক্তি অসংখ্য ভাইরাস নির্গত করতে থাকে। এই কারণে লক্ষণগুলো প্রথমদিকে অনুপস্থিত থাকতে পারে (সূত্রঃ যুক্তরাস্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞান ভিত্তিক ওয়েব সাইট "সায়েন্স")।

দ্য জার্নাল এনালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস যে কোন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করার পর লক্ষণ প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় লাগে। অথবা কিছু ক্ষেত্রে নতুন আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশ বা আপার রেসপিরেটরি ট্রাক্ট সংক্রমণের কারণে জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা বা মাথা ও শরীরে ব্যথার মত লক্ষণ হতে পারে।

যদি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাথমিক অবস্থায় নভেল করোনাভাইরাসকে (SARS-CoV-2) প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, তখন ভাইরাস ফুসফুসকে আক্রমণ করতে শ্বাসনালী (Windpipe) দিয়ে নিম্নমুখে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয় এবং সেখানে ভাইরাস মারাত্মক রুপ ধারণ করে (সূত্রঃ যুক্তরাস্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞান ভিত্তিক ওয়েব সাইট ‘সায়েন্স’)। ভাইরাস প্রবেশের পর ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিবৃত করে কোষে তীব্রভাবে আঘাত করে।

শ্বাসনালীর নিচের দিকের শাখা-প্রশাখা দেখতে গাছের মতো বলে একে বলা হয় ব্রংকিয়াল ট্রি। শ্বাসনালির শাখা-প্রশাখা ঘিরেই গড়ে ওঠে ফুসফুস। ফুসফুসের শাখা-প্রশাখার টারমিনাল বা সর্বশেষ বিভাজন থেকে তৈরি হয় ক্ষুদ্র বায়ুথলিগুলো, যাকে এলভিওলি (alveoli) বলা হয়। আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি এন্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ অনুযায়ী, মানুষের ফুসফুসে ২৭৪-৭৯০ মিলিয়ন বায়ুথলি আছে; বায়ুথলির সংখ্যা ফুসফুসের আকারের উপর নির্ভরশীল। বায়ুথলিগুলো (এলভিওলি) এক স্তরের ‘এপিথেলিয়াল কোষ’ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। এই এপিথেলিয়াল কোষও এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (এসিই২) রিসেপটর দ্বারা সমৃদ্ধ।

নাসাপথ (নাক) দিয়ে বায়ু সরাসরি বায়ুথলিতে যাতায়াত করতে পারে। বায়ুথলি পাতলা আবরণ দ্বারা আবৃত এবং প্রতিটি বায়ুথলি সরু রক্তের কৈশিক নালিকা (capillaries) দ্বারা পরিবেষ্টিত। বায়ুথলি ও রক্তের কৈশিক নালিকার গাত্র এত পাতলা যে এর ভেতর দিয়ে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে। সাধারণত, অক্সিজেন নাসাপথ দিয়ে বায়ুথলিগুলোর মাধ্যমে রক্তের কৈশিক নালিকায় যায়; তারপর অক্সিজেন সমস্ত দেহে পৌঁছায়।

দেহের রোগ প্রতিরোধতন্ত্র জীবাণুকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ফলে ফুসফুসের আরো ক্ষতি হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের সাথে লড়াই করার ফলে, স্বাস্থ্যসম্মত অক্সিজেন পরিবহনে বাধাগ্রস্থ হয়। দেহের শ্বেত রক্ত কণিকা (white blood cells) কেমোকাইন উন্মুক্ত করে। কেমোকাইন আরোও অধিক পরিমানে রোগ প্রতিরোধী কোষকে জড়ো করে, যা ভাইরাস আক্রান্ত ফুসফুসের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। একারণে সৃষ্ট তরল ও মৃত কোষগুলি পুঁজে পরিণত হয়।

এটি কোভিড-১৯ রোগের ফুসফুসে নিউমোনিয়ার অন্তর্নিহিত রোগতত্ত্ব বা প্যাথলজি, যার লক্ষণসমূহ হচ্ছে-- কাশি; দ্রুত, অগভীর শ্বাসক্রিয়া (rapid, shallow respiration); ও জ্বর (সূত্রঃ যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েব সাইট ‘সায়েন্স’)। যদিও শরীরের কোষগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছাতে গভীর শ্বাসক্রিয়া প্রয়োজন, কিছু কোভিড-১৯ রোগী অক্সিজেনের ভেন্টিলেটার সাপোর্ট ছাড়াই এই ক্ষেত্রে আরোগ্য লাভ করে।

কিন্তু অন্য আক্রান্তদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া খুব আকস্মিকভাবে অধিকতর খারাপের পর্যায়ে যায়, যাকে বলা হয় অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস)। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায় এবং চরম শ্বাসকষ্ট হয়। এক্সরে এবং কম্পিউটেড টমোগ্রাফি স্ক্যানে দুটি কালো ফুসফুসেই সমভাবে, ছড়ানো ছিটানো বিভিন্ন আকারের সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। ভাইরাসের তীব্র সংক্রমণে বায়ুথলিগুলো শ্লেষ্মা (mucus), রক্তের শ্বেত কণিকা, তরল পদার্থ ও ফুসফুসের ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষের রাবিশ দ্বারা ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো পূর্ণ হয়ে যায়।

এ ধরণের মারাত্মক কেসে, ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগীর ফুসফুস বিকল করে দেয়। সাধারণভাবে, এই সমস্যা দূর করার জন্য রোগীকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রেখে যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। ভেন্টিলেটর চাপ দিয়ে ফুসফুসে বাতাস ঢোকায় এবং দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মারা যায়।

কোভিড-১৯ বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিরোধ

করোনাভাইরাস তিনটি মৌলিক উপাদান, রাইবোনিউক্লিক এসিড/আরএনএ, প্রোটিনস, এবং লিপিডস দ্বারা গঠিত হয়। সাবান ভাইরাসের সাথে হাতের ত্বকের আঠালো শক্ত সংযোগ অপসারণ করাসহ ভাইরাসের লিপিড, আরএনএ ও প্রোটিনের মধ্যস্থিত ‘ভেলক্রো’ এর মত পারস্পরিক বন্ধন ছিন্ন করে। ফলে ভাইরাস ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। জীবানুনাশক.এলকোহল সমৃদ্ধ যৌগিক পদার্থ (সাধারণত ৬০-৮০ শতাংশ ইথানল সমৃদ্ধ) একইভাবে ভাইরাসকে নির্মুল করতে সক্ষম। মুখে ও নাকে মাস্ক ব্যবহার করলে সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত ব্যক্তির ভাইরাস বহনকৃত তরল ড্রপলেট থেকে অনেকাংশে রক্ষা পায়। কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক শিষ্টাচার বা দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সুষম খাদ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, শিম বা ডাল জাতীয় প্রোটিনসহ ভিন্ন জাতীয় (Diversity) শাকসবজি ও ফলমূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ নিশ্চয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। Diversity অর্থাৎ ভিন্নতা গুরুত্বপূর্ন এ কারণে একই জাতীয় খাদ্যে উপকারী সকল উপাদান থাকে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, দেহের রোগ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সুস্থ জীবনযাত্রার (অর্থাৎ সুষম খাদ্যাভ্যাস সহ পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ পরিহার, ধূমপান ত্যাগ ইত্যাদি) বিশাল গুরুত্ব রয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেইল: drmaasgar@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ