নতুন কিছু শিখতে গেলে কেন আমরা শিখে উঠতে পারি না?

ঝংকার মাহবুব
ঝংকার মাহবুব  © ফাইল ছবি

নতুন কিছু শিখতে গেলে আমরা দুই-এক সপ্তাহ বা দুই-এক মাস চেষ্টা করার পরে নিজে নিজেই দ্রুত একটা কনক্লুশন ড্র করে ফেলি—‘আমি পারতেছি না’ বা ‘আমাকে দিয়ে হবে না’ বা ‘এইটা আমার জন্য না’ এই টাইপের। সাথে সাথে কপালের দোষ, ফ্যামিলি মেম্বারদের দোষ, ডিভাইসের দোষ, ট্যালেন্টের কমতির দোষ, বিরাট কোহলি দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার দোষ, পরীমনি-রাজহংসের দোষ বা অন্য কিছুকে দোষ দিয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাই।

তবে মাঝে মধ্যেই ‘আমি পারতেছি না’ বা ‘আমাকে দিয়ে হবে না’ গ্রুপের মধ্যে অল্প কিছু পোলাপানকে দেখি, যারা না পারলেও কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকে। হচ্ছে, নাকি হচ্ছে না; চিন্তা না করে প্যাডেল মারতে থাকে। খারাপ লাগুক, আর ভালো লাগুক; সেই অ্যাঙ্গেলে প্যারা না নিয়ে রেগুলার শিখতে থাকে। লাভ-লস চিন্তা না করে; ঘাম ঝরাতে থাকে। এই সব ‘আমি পারতেছি না কিন্তু লেগে আছি’ টাইপের মানুষরাই ছয় মাস, এক বছর বছর পরে হয় একটু বেশি, না হয় একটু কম ভালো; কিছু না কিছু একটা করে ফেলে।

সো, তুমি যদি স্লো-লার্নার বা ফার্স্ট-লার্নার যেটাই হও না কেন, নতুন কোন স্কিল ডেভেলপ করতে গেলে নিচের ১০টি মাইন্ডসেট, স্ট্রাটেজি বা টেকনিক মাথায় রাখবে-

১. তুমি যে স্কিল ডেভেলপ করতে চাও; সেটা স্পেসিফিকভাবে ঠিক করে নেক্সট দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে একজাক্টলি কোথায় যেতে চাও সেটা ফাইনাল করে ফেলো। স্পষ্ট করে কাগজে লিখে ফেলো। দরকার হলে সেটা লিখে নিজেই নিজেকে ইমেইল করে দাও।

২. যেই টার্গেটটা এচিভ করতে চাও, সেটা ছাড়া অন্য কোন অল্টারনেটিভ অপশন রাখা যাবে না। বেশি অপশন থাকলে একটা ছেড়ে আরেকটায় লাফ দেবে। তখন কোনটাই হবে না। তাই একটাই গোল সেট করবে এবং মিনিমাম পাঁচটি কারণ (ফাইনান্সিয়াল, ইমোশনাল, ফ্যামিলিগত, জেদ, ইত্যাদি) কারণ লিখে ফেলবে। এই কারণগুলার সারমর্ম হচ্ছে, এই স্কিলটাই তোমাকে ডেভেলপ করতে হবে। এইটাই মাস্ট। এইটা ছাড়া অন্য কোনকিছু কেন করা যাবে না। সেই কারণগুলো লিখে ফেলবে।

আরও পড়ুন: আন্দাজে দাগিয়ে কেউ বিসিএসে টিকে যায় না

৩. চারপাশের শত শত ডিস্ট্রাকশন থেকে নিজের শারীরিক এবং মানসিক ফোকাস কীভাবে ধরে রাখবে সেই স্ট্রাটেজি অবশ্যই ঠিক করতে হবে। 

৪. পুরা দুই বছরকে কয়েকটা ছোট ছোট ভাগে ভাগ করতে হবে। ধরো, এই ছয় মাসের হাই লেভেলের গোল এইটা। পরের ছয় মাসের হাই লেভেলের অবজেকটিভ ওইটা। তার পরের ছয়মাসে সেটা। এমন করে। এরপর প্রথম দেড়-দুই মাসের বিস্তারিত কী কী করবে, কতটুকু করবে সেটা লিখে ফেলবে।

এমনভাবে লিখবে যেন কতটুকু এগোতে পারতেছো, সেটা চেক করতে পারো। এইভাবে প্রতি দেড়-দুই মাস পর পর, পরের দেড়-দুই মাসের বিস্তারিত কাজকর্ম লিখে ফেলবে। সেটা এক্সিকিউট করবে। চেক করে দেখবে সঠিকভাবে গুচ্ছ কিনা।

৫. সব সময় টার্গেট অনুসারে এগোতে পারবে না। কখন কোন কিছুতে বেশি সময় লাগবে বা ফ্যামিলি, অসুস্থ, পরীক্ষা বিভিন্ন কারণে হালকা পিছিয়ে যাবে। তখন একটু পিছিয়ে গেলে, কীভাবে সময় বাড়িয়ে দেবে। টাইম কীভাবে এডজাস্ট করে ম্যানেজ করবে, সেই চিন্তা যখন দরকার পড়বে তখন করে ফেলতে হবে। হালকা একটু পিছিয়ে গেলে কান্নাকাটি, হতাশ, টেনশন, আফসোস না করে স্ট্রাটেজি বের করতে হবে। হয়তো দুইদিন বেশি লাগবে। তারপরেও মন শক্ত রেখে চেষ্টা বাড়াতে হবে।

৬. দ্রুত কামাই করার চিন্তা করা যাবে না। এক-দুই মাস পরেই হাজার-হাজার ডলার কামাবে। সেটা চিন্তা করা যাবে না। একটা মিনিমাম লেভেলে যাওয়ার আগে কামাই করার চিন্তা একদম করতে যাবে না। মিনিমাম ছয় মাস ১০০% শেখাতে ফোকাস করো। তারপর কামাইয়ের কথা চিন্তা করতে পারবে। আর কামাই করতে করতেও কিন্তু শিখতে থাকতে হবে।  

৭. একটা ব্যালেন্সড লাইফস্টাইল এবং লার্নিং হ্যাবিট ডেভেলপ করতে হবে। যাতে তোমার খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পরিশ্রম, বিশ্রাম, এক্সারসাইজ, মাইন্ডসেট একটু ব্যালেন্সড কন্ডিশনে থাকে। খুব তাড়াহুড়া করা যাবে না। অধৈর্য্য হওয়া যাবে না। আননেসেসারি এক্সট্রা মেন্টাল প্রেসার নেয়া যাবে না। ধৈর্য্য ধরে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: সার্টিফিকেট দেখে কেউ চাকরি দিবে না: ঝংকার মাহবুব 

৮. মাঝে মধ্যে ব্যর্থ হবে। অপমানিত হবে। টিটকারীর শিকার হবে। হেয় প্রতিপন্ন হবে। কেউ কেউ কথা শোনাবে। আবার নিজের উপর নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবে। লো কনফিডেন্স চলে আসবে।

তখন মনে রাখবে–ফেইলিউর, পিছিয়ে পড়া, চড়াই-উতরাই, উপহাসের পাত্র হওয়া, রিজেক্টেড হওয়া তোমার গ্রোথ এবং লার্নিংয়ের একটা অংশ। সেটা মেনে নিয়ে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সেটা নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং তোমার কাজ চেষ্টা করা। বাকিটা কপালে যখন আছে হয়ে যাবে; এমন একটা স্ট্রং মাইন্ডসেট রাখতে হবে। 

৯. সিমিলার ফিল্ডের এবং সম-মানের মানুষদের সাথে ডিসকাস করতে হবে। প্র্যাকটিস করতে হবে। হেল্প চাইতে হবে। কিন্তু কখনো শর্টকাট খোঁজা যাবে না। শেখার ক্ষেত্রে কপি, চুরি বা দুই নাম্বারি করা যাবে না। অসৎ হতে পারবে না। অসৎ হলে চুরি বা কপি করলে অন্য কারো ক্ষতি হবে না। তোমারই ক্ষতি হবে। তবে অবশ্যই হেল্প নিতে পারবে। বুঝে নিতে পারবে। বুঝে নিয়ে তারপর নিজে নিজে করতে পারবে। তাহলেই হবে। 

১০. ১০০% সবকিছু তোমার মুখস্ত থাকবে না। তোমাকে মুখস্ত করতে কেউ বলতেছে না। তুমি বোঝার চেষ্টা করবে। শেখার চেষ্টা করবে। তারপর দুইদিন, দুই সপ্তাহ পরে ভুলে যাবে। এরপর আমি যদি তোমাকে দুইদিন সময় দেই এবং তুমি দুইদিন ঘেঁটে যদি সেই জিনিসটা বুঝে ফেলতে পারো, তাহলে আবার রিভিশন দিয়ে কাজটা করে দিতে পারবে। তাহলে চিন্তা করার কোন কারণ নাই।

এমনকি ইন্টারভিউতে গেলেও তোমাকে ১০০% সব প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত দিতে হবে; এমন কোন কথা নাই। দুই-চার-দশটা ইন্টারভিউতে খারাপ করবে। কেন খারাপ করছো সেটা নিয়ে বাসায় এসে আবার শেখার চেষ্টা করবে। এইটা করতে করতেই একদিন হুট করে কিছু একটা হয়ে যাবে।

মনে রাখবে, সবাইকে একদম টপ লেভেলের স্কিল্ড পার্সন হতেই হবে এমন কিছু না। কেউ একটু বেশি পারবে। কেউ একটু কম পারবে। কিন্তু যারাই লেগে থাকবে, আজ না হয় কাল, তাদের কিছু না কিছু একটা হবে। এরপর–
বাকি যা আছে কপালে।

একটা লম্বা সময় কোন একটা কিছুর পেছনে ইনভেস্ট করলে, তুমি কতটুকু সফল হবে সেটার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি না। তবে আমি একটা গ্যারান্টি দিচ্ছি সেটা হচ্ছে—তুমি এনাফ চেষ্টা না করেই ছেড়ে দিচ্ছ। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]

লেখক: প্রোগ্রামার ও সাবেক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ