এই ভাবনাগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিসিং

কামরুল হাসান মামুন
কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ফটাে

সকালবেলা এক প্রিয় ছাত্রী ফোন করে জানালো আমেরিকায় তার নতুন জীবনের কথা। কথায় কথায় অনেক কথা হয় যার মধ্যে ছিল কোর্স ওয়ার্ক-এ কি সাবজেক্ট নিয়েছে আর ক্লাসগুলো কেমন লাগছে। বলল ক্লাস করে খুবই আনন্দ পাচ্ছে। সবগুলো সাবজেক্টই এখানেও পড়েছে। কিন্তু ওর মনে হচ্ছে এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিখেনি বলে মনে হচ্ছে।

প্রচন্ড ধাক্কা পেলাম এবং কষ্টও পেলাম। এবারই প্রথম এমন কথা শুনলাম তাও না। আমাদের যত ছাত্র বিদেশে যায় তাদের প্রায় সবার একই ধরনের অভিজ্ঞতা। ওখানে ক্লাসগুলো কেবল ভালো লাগে তা না একই সাথে ভালো নম্বরও পায়। যেই ছাত্র এখানে জিপিএ-৩ পেতে কষ্ট হতো সেও ওখানে অনেক কঠিন সাবজেক্ট যেমন কোয়ান্টাম মেকানিক্স, ইলেক্ট্রোডিনামিক্স, স্টাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সে ৪-এ ৪ অথবা কাছাকাছি পায়।
 
আমার সেই ছাত্রী বলছিল ওখানে অনেক কষ্ট করতে হয়। ক্লাসের চেয়ে বেশি প্রব্লেম ও এসাইনমেন্ট দিয়ে আমাদের ব্যস্ত রাখে। মোট নম্বরের ৬০ থেকে ৭০ নম্বরই  প্রব্লেম ও এসাইনমেন্টের উপর। এত এত প্রব্লেম ও এসাইনমেন্টের গ্রেডিং করা কোর্স শিক্ষকের জন্য কঠিন। সেই সময়ে সে এর চেয়ে ভালো কাজ যেমন গবেষণা করতে পারে। তার জন্য কোর্স শিক্ষককে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ঢাবির সকল সনদ ফি এখন অনলাইনে

তাছাড়া তার নিজের পিএইচডি ছাত্র ও পোস্ট-ডকতো হেল্প করার জন্য আছেই। আমরা বিদেশী সিস্টেম নেই কিন্তু ফুল প্যাকেজ নেই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া এমন হওয়া উচিত যেন কোর্স টিচারই কোর্সের মা-বাপ। কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেই সুযোগ পায় না। দুইটা ইনকোর্স নিতে হবেই। ফ্লেক্সিবিলিটি না। কারণ হবেই। 

অথচ হতে পারতো ৬০% মার্কসের পরীক্ষা কোর্স টিচার ইনকোর্স নিয়ে, এসাইনমেন্ট দিয়ে, ক্লাস টেস্ট নিয়ে নিতে পারতো। আর আমাদের ফাইনাল পরীক্ষায় আছে এক্সটার্নাল নামক এক যন্ত্রনা। এর ফলে প্রশ্নগুলো একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে বা ছকে করতে হয়। ইচ্ছেমত শিক্ষক তার নিজের মত করে প্যাটার্ন তৈরী করতে পারে না।

এইসব সমস্যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত হতে দিচ্ছে না। কোর্স টিচারকে আরো ক্ষমতায়িত করলে ছাত্ররা আরো ভালো নম্বর পেত। বিদেশে গিয়ে এখানে যারা ৩ বা তার কাছাকাছি পায় ওখানে গিয়ে এত বেশি পায়? এইসব আমাদেরকে ভাবতে হবে এবং এর সমাধান খুঁজতে হবে।

তাছাড়া যাদের টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়ার যোগ্যতা তাকে পূর্ন কোর্স পড়াবার দায়িত্ব দিয়ে দেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে  পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। ভালো মানের পোস্ট-ডক নিয়োগ দিতে হবে। পিএইচডি এবং পোস্ট-ডক দিয়ে ল্যাব ক্লাস, প্রব্লেম ক্লাস ও এসাইনমেন্ট দেখার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষকদের কিভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় তার জন্য ভাবতে হবে। এই ভাবনাগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিসিং।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ