বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি, কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারেননি

আলম শিমুল
আলম শিমুল  © টিডিসি ফটো

১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী একেজেড আলম শিমুল। সম্প্রতি তিনি তার এমন সাফল্য নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছে। বলেছেন তার শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ের কথা। একইসঙ্গে উঠে এসেছে তার সাফল্যের গল্পও। শিমুলের কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের তাওফিকুল ইসলাম হিমেল


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
আলম শিমুল: আমার প্রয়াত বাবার স্বপ্ন ছিল, ‘তার ছেলে জজ হবেন’। আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি, কিন্ত তিনি তা দেখে যেতে পারেননি সেজন্য অনেক খারাপ লাগছে। এ সাফল্য সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আমি এবং আমার পরিবারের জন্য পরম প্রাপ্তি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিজেএস পরীক্ষার যাত্রা শুরু হয় কীভাবে?
আলম শিমুল: ১৫তম বিজেএস ছিল আমার প্রথম বিজেএস। আমি এলএলবি শেষ করে ১৫তম বিজেএসে আবেদন করি। কিন্তু আমি প্রিলিমিনারিতে অকৃতকার্য হই। তারপর এলএলএম শেষ করে ২০২২ সালের অক্টোবরে ১৬তম বিজেএস টার্গেট করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তারপর ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ ১৬তম বিজেএলের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেই।

No photo description available.

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দীর্ঘ এ যাত্রায় কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণিত করেছে?
আলম শিমুল: আমার প্রয়াত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম চুন্নুর স্বপ্ন ছিল ‘আমি জজ হবো’৷ বাবা আমার এলএলবি শেষ হওয়ার পর মারা যান। তিনি দেখে যেতে পারেননি আমার সাফল্য। বাবার এ স্বপ্নই আমার জন্য ছিল অনুপ্রেরণা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বলুন, কোথায়-কীভাবে বেড়ে উঠা
আলম শিমুল: আমি আমার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের ব্রাইট কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে। আমার বাবা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তার বিভিন্ন শাখায় বদলির সুবাদে আমারও প্রাথমিক শিক্ষা জীবন কয়েকটি স্কুলে সম্পন্ন হয়।

আমি আমার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার হাজীগঞ্জ সরকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তারপর আমার বেড়ে উঠা হাজীগঞ্জ শহরেই। আমি আমার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেছি হাজীগঞ্জ থেকেই। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য এমন কোনো স্মৃতি আছে কিনা, যা আপনি আগে কখনো বলেননি?
আলম শিমুল: আমার এমন স্মৃতি খুব কমই স্মরণে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমি ছিলাম ব্যাক বেঞ্চার এবং পড়াশোনায় খুবই অ-মনোযোগী। ক্লাসে মনোযোগ দিতাম না।

আরও পড়ুন: সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় পঞ্চম ঢাবির শিমুল

এজন্য আমাকে ঢাবি আইন বিভাগের একজন শিক্ষক একাধিকবার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সেই শিক্ষক মানুষ হিসেবে খুবই ভালো ছিলেন। কাকতালীয়ভাবে সেই শিক্ষককে আমি বিজেএসের ভাইবা বোর্ডে পেয়েছিলাম। তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। যদিও তিনি আমাকে কোন প্রশ্ন করেননি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
আলম শিমুল: বিজেএস পরীক্ষায় ১০০০ নম্বরের রিটেনে গেইম চেঞ্জার হলো সাধারণ বিষয়গুলোর (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাঙলাদেশে ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী) ৪০০ নম্বর। এই ৪০০ নম্বরে যারা এগিয়ে থাকবেন তারাই সুপারিশ প্রাপ্ত হবার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। তাই আইনের পাশাপাশি সাধারণ বিষয়গুলোতে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই পরীক্ষার প্রস্তুতি কখন থেকে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আলম শিমুল: বিজেএসের সিলেবাস যেহেতু অনেকটাই একাডেমিক পড়াশোনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ; সেহেতু বিজেএসের চিন্তা মাথায় রেখে প্রতিটি আইন প্রথম বর্ষ বা প্রথম সেমিস্টার থেকেই ভালোমতো পড়া উচিত। যদিও আমি প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম এলএলবি সম্পন্ন করার পর থেকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা। কোন ধাপটি বেশি কঠিন বলে মনে হয়েছে? কোনটার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
আলম শিমুল: সবচেয়ে কঠিন ধাপ হলো রিটেন। কেননা, এতে ১০০০ নম্বর এবং টানা ১০টি পরীক্ষা দিতে হয়। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য আমি সাধারণ বিষয় সমূহের জন্য বিসিএসের গাইড পড়েছিলাম। আইনের বিষয়গুলোর জন্য বেয়ার এক্টের পাশাপাশি প্রিলি মাস্টার ও বিজেএস প্রিলি মাস্টার বই পড়েছি।

No photo description available.

রিটেন প্রস্তুতি: সাধারণ বিষয়গুলোর জন্য বিসিএসের গাইডের পাশাপাশি সুফী প্রকাশনীর বিজেএস সিরিজের বইগুলো পড়েছিলাম। আইনের বিষয়গুলোর জন্য প্রিলিমিনারির জন্য পড়া বই ও বেয়ার এক্টের পাশাপাশি "রিটেন মাস্টার" বইটি পড়েছিলাম। ভাইবা প্রস্তুতি: প্রিলিমিনারি ও রিটেনের জন্য পড় বইগুলোর পাশাপাশি ভাইবা মাস্টার ও মাইন্ড গেইম বই পড়েছিলাম। পাশাপাশি Lex Digest কোচিং এ নিয়মিত মক ভাইবা দিয়েছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা?
আলম শিমুল: আমার চেষ্টা থাকবে বিচারপ্রার্থীদের যথাসম্ভব "বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি"-এর মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। অবশ্য বর্তমান আইনে এটি করা বাধ্যতামূলক। মামলার জট নিরসনে এবং আদালতে হওয়া কালক্ষেপণকারী কর্মকান্ড রুখতে সচেষ্ট থাকবো ইনশাআল্লাহ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা এ পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তাদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিলে সফল হওয়া সম্ভব?
আলম শিমুল: আমার মতে, যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কম বই পড়া এবং তা গুছিয়ে পড়া উচিত। আর বারবার রিভিশন করা উচিত। বেশি রিভিশন করা গেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যা লেখার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলম শিমুল: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভকামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence