স্বাস্থ্যখাতে এআই: আগামী প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

বেইজ হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং হুইটিংটন হসপিটাল এনএইচএস’র কনসালটেন্ট (উইমেন্স হেলথ) ডা. আশফাক এম খান
বেইজ হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং হুইটিংটন হসপিটাল এনএইচএস’র কনসালটেন্ট (উইমেন্স হেলথ) ডা. আশফাক এম খান  © ফাইল ফটো

‘ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ‘স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা’ নিশ্চিত করণের নতুন চ্যালেঞ্জ। বদলে যাওয়া বিশ্বে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সবই যখন হচ্ছে হাতের মুঠোয়, জাদুর কাঠি যখন বদলে দিচ্ছে সবকিছু; চাওয়ায় পরিণত হচ্ছে মানবের সব প্রত্যাশা। তখন সে পরিবর্তনের আঁচ থেকে বাদ যায়নি দেশ-বিদেশের স্বাস্থ্যসেবাও। নতুন পৃথিবীর স্বাস্থ্যখাতে আশা জাগানিয়া নতুন বিষয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ যা সংক্ষেপে ‘এআই’। ঠিক এমন পরিবর্তনের মূহুর্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে এআই চালু, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ বা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ, দেশের স্বাস্থ্যখাতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে’র সম্ভাব্য কারিগরি ও ব্যবহারিক নানা দিক নিয়ে নানা জিজ্ঞাসাসহ স্বাস্থ্যখাতে এআই’র ভূমিকা, ইতিবাচক নেতিবাচক নানা দিক এবং এখাতে এআই’র প্রভাব বা পরিবর্তন ক্ষমতাসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাজ্যের বেইজ হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং হুইটিংটন হসপিটাল এনএইচএস’র কনসালটেন্ট (উইমেন্স হেলথ) ডা. আশফাক এম খান। তিনি এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন আমাদের সাথে; প্রথম পর্বে তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক খাঁন মুহাম্মদ মামুন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন দেশের স্বাস্থ্যখাতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেলিজেন্স’ চালুর উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে; এ খাতে এআই কতটা প্রভাব ফেলবে বা পরিবর্তন আনবে?

ডা. আশফাক এম খান: দেশের স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তি দুইভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি যদি প্রযুক্তিটাকে নিয়ে আসেন সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি; মানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় বা ইন্সটিটিউট পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিৎ জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির জন্য। এখন বাংলাদেশে যে ট্রেন্ড আছে, এখানে প্রচুর ইউটিউবার আছে, এখানে অনেক ইনফ্লুয়েন্সার রয়েছে—তারা আমার চাইতেও ভালো করে তথ্য প্রচার করনতে পারবে। আমি হয়তো দশজন লোককে বোঝাতে পারবো, তিনি হয়তো এক হাজার লোককে বোঝাতে পারবেন। কিন্তু, আমরা তো তাদের ব্যবহার করতে পারছি না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা খুবই দরকারি ছিল—যা আমরা কোভিডের সময় দেখেছি। আমার এখনো মনে হয়, সাধারণ মানুষের মাঝে যে সচেতনতা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা তার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না।

আমি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’নিয়ে নিজেকে খুব বিশেষজ্ঞ বলবো না—তবে আমার যেহেতু উৎসাহ আছে এবং আমি এটি নিয়ে যেহেতু অনেকদিন পড়াশোনা বা কয়েকটি প্রজেক্টে কাজ করেছি, সেহেতু এআই নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার আলোকেই বলবো। ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’যদি আমাদের দেশের উপযোগী করে ব্যবহার করা যায় তাহলে তার বিরাট সুফল পাওয়া যাবে। সেজন্য আমাদের উপযোগী এবং সঠিক এআই নির্ধারণ করতে হবে। যেটি আজকে বলেন বা কালকে বলেন, কোন চিকিৎসকই দিতে পারবে না। আমার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন যতোই চেষ্টা করুক তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন না এবং চিকিৎসকরাও চাইলে তাদের একদম কাছে যেতে পারবে না; যেটি এআই বা ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’ পারবে। বিল গেটস যে মন্তব্য করেছে যে, আগামী দশ বছরে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে এআই। আমি তার সাথে শতভাগ একাত্মতা পোষণ করি। সেজন্য আমাদের সঠিক এআই নির্বাচন করতে হবে। আমাদের রোগীদের অভিযোগ ডাক্তাররা পাঁচ মিনিট সময় দেন। একই সময় দিয়ে এআই ঠিকই ডাক্তারের চেয়ে ভালো স্ক্রিনিং করতে পারবে, রোগ ধরতে পারবে। এটি একদম ভালো একজন চিকিৎসকের চেয়ে ভালো না হলেও সাধারণ একজন চিৎিসকের মানের চেয়েও খারাপ হবে না—তাহলে আমি এআই নিয়ে কাজ করতে অসুবিধা কি। এখন আমাদের পুরোনো চিন্তা থেকে বের হওয়ার সময় এসেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি দেশের বাইরে স্বাস্থ্যখাতেই কাজ করছেন; আপনার কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের স্বাস্থ্যখাত বা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ডা. আশফাক এম খান: বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য দুইটার দুইরকম পরিবেশ, দুইটা দুই পৃথিবীর অংশ; সেটা ইউরোপের দেশ এবং আমি বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাজ্যের সরাসরি মূল্যায়ন করবো না। তাদেরও অনেক ড্র ব্যাকস রয়েছে। তবে, তাদের সাথে আমাদের যে বড় পার্থক্য আমার মনে হয়েছে তা হলো, চিকিৎসকদের জবাবদিহিতার অভাব, যা প্রচন্ডভাবে আমাদের এখানে অনুপস্থিত। তাতে যে চিকিৎসা ব্যবস্থার খুব বেশি উন্নতি হবে-তা নয়; এতে অন্তত রোগীরা বোধ করবে যে, তার কথা শোনা হচ্ছে, তা রোগী হিসেবে তার বলার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করবে, রোগীর অধিকার নিশ্চিত করবে। দ্বিতীয়, আমাদের অনেক বড় স্থাপনা আছে, বিশাল হাসপাতাল হচ্ছে; আমাদের এখানে অনেক দামী দামী মেশিন কেনা হচ্ছে। আমি বাইরে দেখেছি, সেখানেও অনেকক্ষেত্রে এতো মেশিন থাকে না, আমরা তা পেয়েছি। এটা আমরা কিনে ফেলি বানিয়ে ফেলি, তারপর লোক খুঁজি মেশিন চালানোর জন্য—এটা খুব অব্যবহারিক দিক আমি বাংলাদেশেই দেখেছি। এটা সরকারি এবং বেসরকারি দুটোতেই আছে; আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, একটি স্বাস্থ্যসেবা চালাতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চিকিৎসক এবং নার্সদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে।

সেক্ষেত্রে ভবন কোন বিষয় নয়; তাহলে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য নিয়ে তো আপনি রীতিমতো হাসবেন, অতএব চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভবন কোনো বিষয় নয়। সেখানে যা লোকবল তাদের স্ট্যান্ডার্ডই অন্য রকম। আমাদের দেশে আমার মনে হয়েছে আমরা এখানে ঠিকমতো নজর দিচ্ছি না, এটাকে বলে ‘ওয়ার্ড পোজ ডেভেলপমেন্ট’। তার উপর ভিত্তি করে চাহিদাপত্র তৈরি করা, এটা অনেকটা তার বিপরীত হচ্ছে। আমি আগে হাসপাতাল বানিয়ে ফেলছি, আমি আগে মেশিন কিনে ফেলছি, তারপর আমরা লোক খুঁজছি কে হাসপাতাল চালাবে—এটা একটু অন্যভাবে দেখার দরকার আছে। তৃতীয়ত, যেটি বিশেষভাবে বলা দরকার, প্রাইমারি হেলথকেয়ার বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আমাদের এখানে খুব অবহেলিত; যেটা পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশে বা উন্নত দেশে এটি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কারণ হচ্ছে, প্রাইমারি হেলথকেয়ারকে যদি আপনি উন্নত করেন, তাহলে সেকেন্ডারি হেলথকেয়ারে চাপ কম পড়ে। তার মানে সরকারি হাসপাতাল বা বড় বড় ইন্সটিটিউটে চাপ কম পড়বে। আমাদের এখানে অসম্ভব, অসাধারণ কিছু মেধাবী চিকিৎসক এবং নার্স রয়েছেন; আমার মনে হচ্ছে, আমরা তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার না করে-তার বিপরীত ব্যবহার করছি। যার কারণে, এখানে প্রাইমারি হেলথকেয়ার অনেকটাই অবহেলিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তিগত উন্নতি কতটুকু হয়েছে? আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া বা সকলের জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং তার উত্তরণের উপায়।

ডা. আশফাক এম খান: প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে আছে। যে প্রযুক্তির কথা আমি বলবো-তা হচ্ছে, বাংলাদেশের টেলি-ব্যবস্থা। মানুষের হাতে হাতে ফোন আছে, এখানে ফোরজি, ফাইভজি ইত্যাদি আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তা ব্যবহার করেত পারছি না; দু-চারটা অ্যাপ আর কিছু তথ্য সংগ্রহ করা আর প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এক জিনিস না। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি সবসময়ই ব্যয়বহুল—এটি পৃথিবীর সব দেশেই। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, প্রযুক্তি যদি আপনি ঠিক মতো ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে সেটি সম্পূর্ণই অপচয়। আমি আজকেই কিছু মেডিকেল-পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এটাই বলছিলাম যে, মনে করেন, আপনি বিদেশ থেকে ২০০ মিলিয়ন খরচ করে একটি মেশিন কিনলেন এবং বাংলাদেশে এনে আপনি যদি এটি দিয়ে ১০ কোটি মানুষকে সেবা দেন তাহরে এ ব্যয় যৌক্তিক। কিন্তু, আপনি যদি এ মেশিন একটি অফিসে ফেলে রাখেন এবং তা দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষকে সেবা প্রদান করেন—তাহলে এটি পুরোটাই অপচয়।

আমাদের জানতে হবে কোন প্রযুক্তি আনলে আমাদের সাধারণ মানুষেরে উপকার হবে। এ নিয়ে আমাদের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অনেক চিন্তা করার দরকার আছে; এটি হালকা করে বসে বা এক দুটো মিটিং করে ঠিক করে ফেলার বিষয় না। সেজন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা দরকার যে, কোন প্রযুক্তি আমরা আনবো এবং এটি বিদেশেও একই অবস্থা। একদম একটি ছোট হাসপাতালেও একটি মেশিন কেনার সময় আমার যাকে বলি ‘বিজনেস কেস ডেভেলপ’ করা। আমি আমার বন্ধুদের কাছে শুনেছি এখানে ‘বিজনেস কেস ডেভেলপ’ বলে কোন বিষয় দেখা হয় না। এখানে একটা প্রোডাক্ট দেওয়া হলো, আমাদের কোনরকম বোঝানো হলো যে এটা হলে আমাদের ভালো হয়, আমরা সে প্রযুক্তিটি নিয়ে নিলাম। আমাদের এখানে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে, প্রযুক্তি নিয়ে নয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রযুক্তির অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে, দক্ষ জনশক্তি এবং অর্থায়ন অন্যতম; বাংলাদেশ তা কিভাবে মোকাবেলা করতে পারে? 

ডা. আশফাক এম খান: এটি নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল; আমরা তো এখনো কাজ শুরু করিনি। তবে, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এ নিয়ে চিকিৎসক এবং নার্সদের সচেতন করা। তাদের সচেতন করা গেলে এবং গণমাধ্যমে তা নিয়ে প্রচার আমাদের সচেতনতা বাড়াবে; এটি প্রথম চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, এআই’র গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি যখন আপনি দেখবেন যে এর কার্যক্ষমতা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ তখন আপনি নিজেই এটি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্বাস্থ্যখাতে এআই চালু হলে ঠিক কী কী পরিবর্তন আসবে?

ডা. আশফাক এম খান: আমার মনে হয় বিশাল, আমি আপনাকে শুধু একটি উদাহরণ দিবো আপনি শুধু ভেবে নেন তাহলে বুঝতে পারবেন। ২০০৬ সালের মোবাইল আর ২০২১ এর মোবাইল নিয়ে একটু ভেবে দেখেন-তাহলেই বুঝতে পারবেন স্বাস্থ্যখাতে কী পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের প্রভাব কোনোভাবেই কমবে না, তবে রোগ নির্ণয় করা আরও কম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে; স্বাস্থ্যখাতের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হবে। তখন চিকিৎসকদের হাতে অনেক তথ্য আসবে। এখন মার্ক জাকারবার্গের মেটাভার্সের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে হাসপাতালও থাকবে, কিন্তু কোনো ডাক্তার তো থাকছে না। তখন আপনি চোখের মধ্যে ডিভাইস লাগিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে গেলেন। তারপর না হয় আপনি সরাসরি ডাক্তারের কাছে গেলেন, এটিও এআই-এর উপরই ভিত্তি করে চলবে। সেজন্য পরিবর্তনগুলো আমাদের মানতে হবে এবং সে মানসিকতা রাখতে হবে।

আর এআইয়ের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি যদি ২০০ মিলিয়ন ডলার চায় তার বিপরীতে ১০ মিলিয়ন ডলারে দেওয়ার মতো কোম্পানিও পরদিন চলে আসবে এবং আমাদের দেশের বুয়েট কিংবা ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তার ২০ লাখ টাকার মধ্যে বানিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। সেজন্য আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। আর আপনি জানেন, আমরা যখন রেগে যায়, তখন সবই হয়ে যায়। পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে যে ৯ মাসে স্বাধীন হয়েছে। আমাদের পদ্মাসেতু হবে না, হবে না করে দিনশেষে হয়েই গেল। আমার মনে হয়, এআই নিয়েও আমাদের দেশের ছেলেরা নিজেরাই এআই তৈরি করে ফেলবে এবং তা সম্ভব;আর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তন এবং স্মার্টস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে এআই নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এআই‘র নেতিবাচক প্রভাব বা চ্যালেঞ্জগুলো আমরা কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি?

ডা. আশফাক এম খান: এআই’রও কিছু নেতিবাচক দিক আছে; ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি কোন ডাটা ব্যবহার করছেন এবং কোন ডাটা আপনি সংগ্রহ করছেন। মনে করেন, আমি প্রসূতি মায়েদের বাচ্চার গ্রোথ বা বৃদ্ধি নিয়ে একটি এআই কিনলাম; এটি মনে করেন, আমি এটি নিয়ে আসলাম জাপান থেকে বা ইউরোপ থেকে। তারা কিন্তু এটি তৈরি করেছে ইউরোপ বা তাদের মানের করে, সেখানকার মায়েদের বয়স অনুপাতে। এখন আপনি এ এআই এখানে ব্যবহার করলে আপনি দেখবেন যে, এখানে ৭০শতাংশের মতো বাচ্চা হবে আন্ডার গ্রোথ বা অপরিণত বুদ্ধিসম্পন্ন। কারণ, সে এআইয়ে তো এখানকার মহিলাদের তথ্য ব্যবহার করা হয়নি। ঠিক এখানটাই আমি কাজ করতে চাই; কথা বলতে চাই।

আমি চাই, সেসব এআইগুলোর সাথে সংযুক্ত করে দেশের জন্য একটি অ্যালগরিদম তৈরি করা। নাহলে দেখবেন যে, আমরা অনেক টাকা খরচ করে একটি এআই নিয়ে এসেছি এবং তার থেকে ভুল তথ্য পাচ্ছি। তখন ডাক্তাররা বলবেন, এ যে দেখেনে কাজ করছে না এবং রোগীরা বলবেন, এআই দিয়ে কোন কাজ হলো না। ভুল কথা বলে মেশিন। সেজন্য আমাদের দরকার এআই প্রযুক্তিকে নিজেদের দেশের এবং রোগীদের উপযোগী করে আমাদের নিজেদের মতো করে অ্যালগরিদম করা। তাহলেই আমরা এআই’র নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করতে পারবো এবং এআই’র সুফল অর্জন করতে পারব।


সর্বশেষ সংবাদ