গ্রামগঞ্জে লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের

লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের
লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের  © ফাইল ছবি

বন্যা ও ভারি বৃষ্টিতে যখন সারাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবি উঠছে, ঠিক তখনই পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বাধ সেধেছে তীব্র লোডশেডিং। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে হরহামেশাই। গ্রামগঞ্জে এর তীব্রতা আরও ভয়াবহ। শেষ সময়ের প্রস্তুতিকে শানিত করার জন্য চেষ্টা করছেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু তীব্র গরমে শেষ সময়ের প্রস্তুতি অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে চাহিদা কম থাকায় রক্ষণাবেক্ষণে যায় ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি গ্রুপের নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। ৮০০ মেগাওয়াট ইউনিট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী ৫ জুলাই উৎপাদনে ফিরতে পারে। একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটে কারিগরি ত্রুটির কারণে মঙ্গলবার থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৭৫ মেগাওয়াট। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশে কমবেশি বেড়েছে লোডশেডিং।

আয়েশা রিপা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী। তিনি চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনি জানান, ‘সারারাত ১ ঘণ্টাও ঠিক করে বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না থাকার ফলে আলোর স্বল্পতায় ভুগতে হয়। টেবিল ল্যাম্পের আলোতেও পড়তে পারি না, অল্প আলোতে পড়তে বসলে মাথা ব্যথা শুরু হয়। তীব্র গরমে পর্যাপ্ত ঘুমও হয় না। ফলে সকালে চোখ জ্বলা, মাথাব্যথার মতো সমস্যাগুলো দিন শুরু করছি।’

একই অবস্থা ঝিনাইদহের শৈলকুপার এইচএসসি পরীক্ষার্থী স্বাধীন বিশ্বাসের। তিনি জানান, প্রত্যেকদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিদ্যুৎ আসা যাওয়া শুরু হয়। সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ থাকে, আবার ৩-৪ ঘণ্টার জন্য চলে যায়। দিনের বেলায়ও একই অবস্থা।

দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলায়ও একই অবস্থা। দিনের বেলা তিন থেকে চার বার লোডশেডিং হয়।  বিদ্যুৎ একবার গেলে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেও আসে না। রাতের বেলাতেও একইকম পরিস্থিতি। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ গেলে ২-৩ ঘণ্টা পর আসে।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহমেদ সামি জানান, কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেজন্য গরমও বেড়েছে। এমন গরমের মধ্যে আবার দিনের বেলা অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা এইচএসসি ব্যাচ হিসেবে প্রস্তুতির জন্য সময় কম পাচ্ছি, এর মধ্যে আবার ৭০% সিলেবাস। তার উপর লোডশেডিংয়ের প্রভাবে আমার প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় দীর্ঘদিন থেকে লোডশেডিং সমস্যা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এ অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। বিগত ৫-৬ মাস ধরেই এমন লোডশেডিং। ২০২৪ সালেও এসেও এ অঞ্চলের মানুষ হারিকেন ব্যবহার করেন লোডশেডিংয়ের প্রভাবে। এভাবেই নিজের এলাকার অবস্থার কথা জানাচ্ছিলেন বিজিসি একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মুন।

তিনি বলেন, বিগত ৩ দিন ধরেই বিদ্যুৎ নেই। আজ সকাল ৫টায় এসেছিল। আবার ৭টায় চলে গেছে। লোডশেডিংয়ের ফলে পড়ালেখায় অনেক খারাপ প্রভাব পড়তেছে। অতিরিক্ত গরম পড়ালেখা করা কষ্টকর। দিনের চেয়ে রাতে পড়ার সময়টা মানুষ কাজে লাগায়। আর এর মধ্যে রাতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আর বেড়ে যায়।

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী রোববার শুরু হচ্ছে। এবার আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ও নকল মুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ২৯ জুন থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি/আলিম/এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল)/ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ৭ লাখ ৫০৯ জন। এছাড়া এবার মোট কেন্দ্র ২ হাজার ৭২৫টি ও মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ৪৬৩টি।

পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অভিভাবকরাও চিন্তিত। তারা বলছেন, সন্তানদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষায় লোডশেডিং, অতি বৃষ্টি ও বন্যার মতো সমস্যাগুলো অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। তীব্র লোডশেডিংয়ের প্রভাবে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিদ্যুতের স্বাভাবিক সরবরাহের দাবিতে অনেক স্থানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলেও শুনেছি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক সহকারী ম. তামিম বলেন, বিদ্যুৎ সক্ষমতার ৪-৫ হাজার মেগাওয়াট অকেজো হয়ে গেছে। আসলে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু জ্বালানির অভাবে এটি করা যাচ্ছে না। গ্যাস-কয়লা থেকে উৎপাদন কমলে লোডশেডিং বেড়ে যায়। রামপাল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরোদমে আনা গেলে কিছুটা স্বস্তি আসত।

এদিকে, গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সবশেষ ১৭ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে সিলেট নগরের ২৪টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ১৩টি উপজেলা কমবেশি প্লাবিত হয়।

এ অবস্থায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি, মাদ্রাসা ও কারিগরি পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে। এরপর গত ২৬ জুন সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আর পেছানো হবে না। আগামী ৯ জুলাই থেকে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো আগের রুটিন অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ