আশ্বাস নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন ধানমন্ডি আইডিয়ালের শিক্ষকরা

ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ
ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ  © ফাইল ফটো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আশ্বাসে একাডেমিক কার্যক্রম সচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের আন্দোরনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে কলেজের পূর্ব সময়সূচি অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে  গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের গর্ভনিং বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আইডিয়াল কলেজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির সহযোগী ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় ষড়যন্ত্রকারী গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য ও গভর্নিং বডির প্রভাবশালী সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের পদত্যাগ ও কলেজ গভর্নিং বডি বিলুপ্তির দাবি উঠেছে। এ দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন’ কর্মসূচি গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষকদের এক প্রতিনিধিদল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কলেজের বর্তমান অবস্থা ও তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরেন। এছাড়াও শিক্ষকদের আরেক প্রতিনিধিদল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কলেজের সার্বিক অবস্থা ও বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে বিস্তারিত আলোচনা করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদের দেওয়া আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলমান ‘একাডেমিক কার্যক্রম বৰ্জন’ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছেন। আগামীকাল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে কলেজের পূর্ব সময়সূচি অনুযায়ী সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন।

এতে আরও বলা হয়, যদিও দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। তবে পাশাপাশি কলেজের অভ্যন্তরে মুক্তমঞ্চে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন অব্যাহত রাখবেন।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গভর্নিং বডির অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকা লোপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে পাঠদান ছেড়ে আন্দোলনে নামেন রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানসহ অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন। তারা ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন।

এর আগে শিক্ষকরা গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অন্যান্য সদস্যদের অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরাও। এদিন সরেজমিনে, ক্লাস বর্জন করে একজোট হয়ে কর্মবিরতি পালন করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকলকে।

গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সবচেয়ে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তারা বলছেন, করোনা-কালীন সময়ে ২০২০ সালে গভর্নিং বডির মাধ্যমে কলেজের ফান্ড ভেঙ্গে ১১ কোটি টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। পাশাপাশি সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক বছরে বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। গভর্নিং বডি এ সম্পর্কে জেনেও কোন ব্যবস্থা নেননি। এটি সুকৌশলে করা হয়েছে। কিছু টাকা শিক্ষকদের বেতন হিসেবেও দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ আছে গভর্নিং বডির প্রত্যক্ষ মদদে প্রতি বছরে উপাধ্যক্ষকে কমিটির আহবায়ক করে বিনা। রশিদে ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শিক্ষার্থীদের ইউনিফরমের নিম্নমানের কাপড় ও জুতা সরবরাহ করে মুনাফা হিসাবে প্রাপ্ত ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ