প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য গুণে মেথি

নিয়মিত মেথি সেবন ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখে
নিয়মিত মেথি সেবন ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখে  © প্রতীকী ছবি

প্রাকৃতিক ভেষজের অন্যতম মহৌষধ মেথি। যা মসলা, খাবার ও পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাদ একটু তেতো হলেও ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে হৃদয়ের যত্নে মেথির গুণাগুণ অনস্বীকার্য। তাই বারডেম ও টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে মেথির স্বাস্থ্য গুণা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক নানা গুণে ভরপুর এই ভেষজ নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে ত্বকে তারুণ্যের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি জনিত সমস্যার এক মহৌষধ মেথি।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেথিতে রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি রয়েছে। যার ফলে এটা নিয়মিত সেবনে বুড়িয়ে যাওয়ার গতিটা অত্যন্ত ধীর হয়।

আরও পড়ুন: তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

এছাড়া প্রতিদিন সকালে নিয়মিত খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে কৃমিসহ শরীরের রোগ-জীবাণু মরে যায়। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

প্রাচীনকাল থেকেই চুল পড়ার সমস্যায় মেথির ব্যবহার লক্ষণীয়। সেদ্ধ মেথি সারা রাত রাখার পর নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় মাখলে চুল পড়া কমে যায়। তাছাড়া মেথিতে থাকা ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক উপাদান বের করার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি ও পেপটিক আলসার সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁঁচার উপায়

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মেথি সেবন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য মেথি কার্যকর। এমনকি পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি নারীদের মেনোপজের সময় শরীরে হরমোনের নানা ধরনের পরিবর্তনকালে মেথি অনন্য একটি পথ্য।

জ্বর-সর্দি-কাশি ও গলাব্যথায় মেথি অত্যন্ত কার্যকর
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেথি সেবনে সর্দিকাশি কমে যায়। এছাড়া লেবু ও মধুর সঙ্গে এক চা-চামচ মেথি মিশিয়ে খেলে জ্বর ছেড়ে যায়। মেথিতে থাকা মিউকিল্যাগ নামের একটি উপাদান গলাব্যথা সারাতে পারে। এজন্য অল্প পানিতে মেথি সেদ্ধ করে গড়গড়া করলে গলার সংক্রমণ দূর হয়।

এমনকি মেথি আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং নবজাতকের জন্য মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি করতে মেথি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মেথিকে সুপারফুড বলা হয়।

মেথি বীজে দ্রবণীয় ফাইবার বেশি থাকে, যা হজম এবং কার্বোহাইড্রেট শোষণকে ধীর করে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি। তাছাড়া মেথিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন থাকায় ত্বকের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বকে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন: খুশকি প্রতিরোধের উপায়

মেথির বীজ গরম প্রকৃতির এবং তাই যাদের কফ দোশা আধিপত্যশীল তাদের জন্য দুর্দান্ত। কাফা আধিপত্যের লোকেরা যে কোনও আকারে মেথি থাকতে পারে- ভেজানো, অঙ্কুরিত, পুরো বা অঙ্কুরিত। পিট্টা প্রভাবশালী দোশাযুক্ত ব্যক্তিদের বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে বা এর জল খেতে হবে। এটি অ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্য করবে।

মেথি বীজ খাওয়ার সঠিক উপায়
মেথির স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে এক টেবিল চামচ ভেজানো বীজ সকালে খালি পেটে খেতে হবে। তবে মেথি বীজ তেতো হওয়ায় না খেতে পারলে ডাল বা তরকারিতে যোগে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দিনে এক টেবিল চামচের বেশি মেথির বীজ খাওয়া যাবে না। এমনকি দৃশ্যমান ফলাফল দেখতে ২১ দিন নিয়মিত বীজ খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।


সর্বশেষ সংবাদ