তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

তুলসী পাতা
তুলসী পাতা  © সংগৃহীত

প্রাকৃতিক মহৌষধের এক অনন্য উপাদান তুলসী গাছ। যার গুণাগুণের কথা বলে শেষ হবে না। অতিসহজে প্রাপ্ত এই ঔষধি গাছের কদর প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত রয়েছে। কেননা সর্দি-জ্বরের এক কার্যকরী প্রকৃতিক উপকরণ এ পাতা। তাই সহজলব্ধ এ গাছটি গ্রাম-বাংলার মানুষদের উঠানে কিংবা বাড়িতে লাগিয়ে রাখতে দেখা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটুখানি তুলসী পাতার রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ঠান্ডাজনিত তথা সর্দি-কাশি-জ্বরসহ অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ও ফুসফুসের বিভিন্ন জটিলতায় তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী।

তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা নার্ভকে শান্ত রাখার পাশাপাশি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: যেসব রোগ দূরে রাখবে খেজুর

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মানসিক চাপের সাথে হার্টের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কেননা অতিরিক্ত হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরল হার্টে বিভিন্ন রোগে জন্ম দেয়। তুলসী পাতা রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা দূর হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক রোধ করা যায়। একই সাথে তুলসী রক্তের সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে নিয়মিত তুলসী সেবনে বহুল আলোচিত ডায়াবেটিস রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান। যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এ পাতায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক অ্যাসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। এছাড়া অগ্ন্যাশয়ের টিউমারের পাশাপাশি ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধেও তুলসী পাতা খুব কার্যকরী।

আরও পড়ুন: রোগ-বালাই রুখবে যেসব খাবার

ত্বকের যত্নে তুলসী বেশ উপকারী। কেননা, তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে। যা বয়সের ছাপ কমিয়ে চিরযৌবনা রাখতে সহায়তা করে। আবার তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এমনকি ত্বকের কোন পোড়া অংশে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল মিশিয়ে লাগালে জ্বালাপোড়া কমার পাশাপাশি কোনো দাগ পড়বে না।

পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসী পাতা দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি এবং গ্লুকোমারের মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে। এমনকি তুলসীতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো চোখের চুলকানি, অঞ্জনি, পিচুটিজাতীয় যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও তুলসীতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীর থেকে নানা রকমের বিষক্রিয়া পদার্থ বের করে আনতে সাহায্য করে। ফলে ডিহাইড্রেশন, পেটব্যথা, অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি থেকে দ্রুত উপশম ঘটে।

তুলসী পাতার অপকারিতা
অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবনে উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও লক্ষণীয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে এ পাতা সেবন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। বিশেষ করে গর্বভারণের সময় অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি তা নারীর বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত তুলসী সেবন শরীরের রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন: মাছ ও দুধ একসঙ্গে খেলে কি শ্বেতী বা ধবল রোগ হয়?

এছাড়া তুলসী পাতায় থাকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। ফলে অতিরিক্ত সেবনে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। তাই বিশেষ এ সময়ে তুলসী সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আবার তুলসী পাতায় পারদ ও আয়রনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। ফলে এ পাতা চিবোলে মিনারেলগুলো নির্গত হয়ে দাঁতের ক্ষয় করে ও ছোপ ফেলে দেয়। আবার তুলসী পাতা কিছুটা অ্যাসিডিক। অন্যদিকে মুখমন্ডল ক্ষারক জাতীয়। ফলে তুলসী চিবোলে তা দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দিতে পারে।

তুলসী পাতা সেবনের উপায়
তুলসী পাতা সেবনের আদর্শ উপায় চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া। তাই এক কাপ হার্বাল চায়ের জন্য ১/৪ কাপ তুলসী পাতা পানিতে ফুটাতে হবে। ফুটে গেলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ১ চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। তাই মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি কিংবা গলা ব্যথায় গুটিকয়েক তুলসী পাতা মধু ও লেবুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

নিয়মিত তুলসীপাতা সেবনে প্রকৃতিক ভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগব্যাধী থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তাই তুলসীপাতার প্রকৃতিক স্বাস্থ্য গুণ হাজার বছর ধরে স্বীকৃতি ও বহুল প্রচলিত।


সর্বশেষ সংবাদ