পারস্পরিক বদলি নয়, আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি চান শিক্ষকরা

ছবিতে জরিপের ফল
ছবিতে জরিপের ফল   © টিডিসি ফটো

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরিতে সভা ডাকা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা পারস্পরিক বদলি নয়; আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির দাবি জানিয়েছেন। 

শনিবার (২১ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক জরিপে বিষয়টি উঠে আসে। চার ঘণ্টাব্যাপী চলা এই জরিপে দেশের বিভিন্ন জেলা এবং স্কুল-কলেজের সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শিক্ষক অংশগ্রহণ করেছেন।

জরিপে মোট ভোট পড়েছে ৪ হাজার ৫৭৭টি। এর মধ্যে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের জন্য আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির দাবিতে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ৬৭৮ জন। শতকরায় যা মোট ভোটের ৫৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ঘুষ দিতে না পারায় যোগদান বঞ্চিত বহু শিক্ষক

জরিপে পারস্পরিক বদলি চান না এমন ভোটের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬টি। শতকরায় যা মোট ভোটের ২৪ শতাংশ। ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ রহিত করা ৭ নং পয়েন্ট প্রত্যাহার চেয়েছেন ৬৪০ জন। শতকরায় যা ১৫ শতাংশ। এছাড়া সমান ১ শতাংশ করে শিক্ষক পারস্পরিক বদলি এবং শূন্য পদের বিপরীতে বদলির দাবি জানিয়েছেন।

পারস্পরিক বদলি না চাওয়া শিক্ষকরা জানিয়েছেন, পারস্পরিক বদলি দিলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকরা শরের দিকে যেতে চাইবেন। তবে শহর অঞ্চলের শিক্ষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসতে চাইবেন না। ফলে এই বদলি শিক্ষকদের কোনো কাজে আসবে না। শূন্য পদের বিপরীতে বদলির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অথবা ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের জন্য আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দিতে হবে।

মো. ইমদাদুল হক নামে এক শিক্ষক জানান, পারস্পারিক বদলি নয়, প্রথমে শূন্য পদের চাহিদা নেওয়া হোক, তারপর বদলি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বদলির জন্য আবেদন নেওয়া হক। নতুন শিক্ষকগণ যেভাবে চাকরির আবেদন করে, যার ভাগ্যে যে প্রতিষ্ঠান মেলে সে সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পায়, ইনডেক্সধারী সকল শিক্ষকদের জন্য সেরকম আবেদন নেওয়া হোক, যার ভাগ্যে যে প্রতিষ্ঠান মেলে সে সেই প্রতিষ্ঠানে বদলি হবে। 

আরও পড়ুন: বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা তৈরির সভা কাল

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি পাবনা ,আমি শিক্ষকতা করি হবিগঞ্জে। আমার জানা মতে হবিগঞ্জের কেউ পাবনাতে চাকরি করে না, যদি পারস্পারিক বদলি দেওয়া হয় তাহলে আমার বদলি কখনো সম্ভব না। আমার অনুরোধ সকল শিক্ষকদের জন্য বদলি ব্যবস্থা করা হোক। কাউকে নির্দিষ্ট করে নয়, পারস্পরিক শর্ত দিয়ে নয়।

মো. হুমায়ুন কবীর জানান, বদলি নীতিমালা হচ্ছে ভাল কথা কিন্তু সেখানে শুধু এনটিআরসিএ কর্তৃক এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কথা বার বার ভেসে আসছে। তাহলে ইনডেক্সধারী অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে? যদি আপনারা কোনো নীতিমালা করেন তাহলে যেন সকল ইনডেক্সধারী শিক্ষক-কর্মচারীগণ সে নীতিমালার আওতায় চলে আসে। তবে এটা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং অসংখ্য শিক্ষা পরিবারের দীর্ঘ দিনের আশা আকাঙ্ক্ষার সফল সমাধান। আশাকরি বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে।

মো. ফরিদুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষক জানান, বদলি নীতিমালা হচ্ছে তার জন্য কর্তৃপক্ষকে স্বাগতম জানাই। বদলি ব্যবস্থা চালু করে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করুন এটা পুরো শিক্ষা পরিবারের প্রাণের দাবি।  এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি লাখ লাখ শিক্ষকরে স্বপ্নের সেতুর মতো। কিন্তু বদলি নীতিমালা সার্বজনীন হওয়া উচিত। তা না হলে আরেকটি বৈষম্য সৃষ্টি করবে যা কারো কাম্য নয়।

শূন্য পদের বিপরীতে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এনটিআরসিএ প্রতি তিন মাস পরপর শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করছে। এর কারণ বেকারদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়া। শূন্য পদের বিপরীতে বদলির ব্যবস্থা করলে বেকারদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

ফেসবুকের একটি জরিপে ৫৯ শতাংশ শিক্ষক আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির দাবি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মাউশি ডিজি আরও বলেন, আগামীকাল রবিবার বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরিতে আমাদের সভা রয়েছে। সেই সভায় আমি শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরবো। তবে সেখানে আরও কর্মকর্তারা থাকবেন। আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির জন্য সকলের মতামত থাকতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ