ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শহরে রাশিয়ার হামলায় ১৮ জন নিহত

ইউক্রেনের শহর ক্রিভি রিহতে রাশিয়ার হামলার পর একটি গাড়িতে আগুন জ্বলছে
ইউক্রেনের শহর ক্রিভি রিহতে রাশিয়ার হামলার পর একটি গাড়িতে আগুন জ্বলছে

ইউক্রেনের শহর ক্রিভি রিহতে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যাও কয়েক ডজন। এ শহরটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্মস্থান। তিনি জানিয়েছেন, এ হামলায় নিহতদের ৯ জনই শিশু। আবাসিক এলাকায় একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত হানার ফলে বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, এ হামলায় ঘটনার যেসব ছবি-ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে এক জায়গায় দেখা গেছে, একটি শিশু নিহত হয়ে খেলার মাঠেই পড়ে আছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে একটি ১০ তলা ভবনের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, রাস্তায় পড়ে আছে হতাহতরা।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্য ভেদ করতে সক্ষম, এমন একটি মিসাইল দিয়ে তারা ইউক্রেনের একটি রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে, যেখানে ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। ওই স্থানে ইউক্রেনে ইউনিট কমান্ডার ও পশ্চিমা প্রশিক্ষকদের একটি বৈঠক চলছিলো বলে দাবি তাদের। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ তারা দেয়নি।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার দাবিকে ‘নিষ্ঠুর অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলছে, রাশিয়া একটি ইস্কান্দার-এম ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেপণাস্ত্রটি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে আঘাত হানতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এ হামলাটি চালানো হয়। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর ক্রিভি রিহতে যেসব ভয়াবহ হামলা হয়েছে, এটি তার মধ্যে অন্যতম। এ হামলা এমন সময় হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন। জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, শুক্রবারের আক্রমণে অন্তত পাঁচটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ যুদ্ধ এখনও চলছে, কারণ রাশিয়া যুদ্ধবিরতি চায় না। আমরা তা দেখতে পাচ্ছি।

আবাসিক এলাকায় মিসাইলটি আঘাত হেনেছিল উল্লেখ করে ক্রিভি রিহর প্রতিরক্ষা প্রধান ওলেক্সান্দার ভিলকুল বলেন, মিসাইলটি আকাশে বিস্ফোরিত হয়েছিল, যাতে অনেক বেশি মানুষ আহত হয়। শিশুরা নিহত হয়েছে, তারা খেলার মাঠেই ছিল।

ইউক্রেনের ডিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের প্রধান সেরহি লিসাক জানান, অন্তত ৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট, তার বয়স মাত্র তিন মাস। শুক্রবার সন্ধ্যার ওই হামলার পরও আরও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ক্রিভি রিহর প্রতিরক্ষা প্রধান ওলেক্সান্দার ভিলকুল জানান, শহরে ব্যাপক ড্রোন হামলা হয়েছে।

ড্রোন হামলার ফলে অন্তত চারটি স্থানে আগুন ধরে যায় বলে তিনি জানিয়েছেন। একটি বাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং সেখানে বসবাসরত এক বৃদ্ধা আগুনে পুড়ে মারা যান। এ হামলার ঠিক আগের দিন যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক প্রধানরা কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে ইউক্রেনে অন্য দেশের শান্তিরক্ষী মোতায়েন নিয়ে আলোচনা হয়।

আরো পড়ুন: মাথায় গুলি নিয়ে চলে গেলেন আরেক জুলাই যোদ্ধা ‘হৃদয়’

চলমান বাস্তবতায় মনে হচ্ছে না যে এই যুদ্ধ রাতারাতি থামবে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেও ক্রিভি রিহ শহরের একটি ভবনে হামলা চালানো হয়, যাতে চারজন নিহত হয়েছিলো। একই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভেও ড্রোন হামলা চালানো হয়। সেখানেও তখন আরও পাঁচজন প্রাণ হারান বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি থেকে পিছু হটার অভিযোগ তুলেছে। ব্রাসেলসে এক ন্যাটো সামিটে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন এখনই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে পারেন। কিন্তু তিনি এখনও ইউক্রেনের বেসামরিক মানুষদের উপর বোমা বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানে এবং ‘আমরা শীঘ্রই বুঝে যাবো যে তারা আসলেই শান্তি চায়, নাকি এটি কেবল সময় ক্ষেপণের কৌশল।’ ইউরোপের দীর্ঘতম শহর হিসেবে পরিচিত ক্রিভি রিহতে প্রায় ছয় লাখ মানুষ বসবাস করে। এটি পূর্ব ইউক্রেনের সম্মুখভাগ থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত।


সর্বশেষ সংবাদ