জন্মদিনে কেক কাটার স্বপ্ন অধরাই থাকল বুলবুলের বন্ধুদের

বুলবুল আহমেদ
বুলবুল আহমেদ   © সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন মো. বুলবুল আহমেদ। একই সঙ্গে থাকতেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল রোমান। আজ বুলবুলের জন্মদিন। তবে বুলবুল এই এখন আর এই ধরণীতে নেই। বেঁচে থাকলে আজ (বৃহস্পতিবার) বুলবুলের ২২ বছর পূর্ণ হতো। 

আজ বুলবুলের জন্মদিন হলেও কোনো উচ্ছ্বাস নেই। আনন্দের বদলে বিষাদে কাঁদছেন বুলবুলের সহপাঠীরা। বুলবুলের স্মৃতিচারণা করে কাঁদছেন তারা।

বুলবুলের সহপাঠীরা জানান, ‘গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাঁর জন্মদিন সশরীরে সহপাঠীরা উদযাপন করতে পারেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে তাঁরা বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আজ সেসব মেমোরিতে দেখাচ্ছে। বুলবুলের শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই তাঁর জন্মদিনের মুহূর্তটি সামনে আসায় সহপাঠীরা আরও বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন।’

এদিকে বুলবুল শাহপরান হলের যে কক্ষে থাকতেন, দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ‘কক্ষে থাকা পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জন বাইরে রয়েছেন। অন্য তিনজন কক্ষে বিমর্ষ হয়ে বসে রয়েছেন। তবে বুলবুলের চৌকিতে তোশক গুটানো, রয়েছে কিছু ব্যাগ ও টেবিল ল্যাম্প। চৌকির পাশেই তার টেবিল ফ্যানটি পড়ে রয়েছে। একপাশে মশারিও অর্ধ টানানো অবস্থায় আছে। এছাড়া পড়ার টেবিলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে বইপুস্তক।’

বুলবুলের রুমমেট আবদুল্লাহ আল রোমান জানান, ‘মনে মনে পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, বুলবুলের এবারের জন্মদিনটি আমরা রুমমেট ও ঘনিষ্ঠজনেরা ঘটা করে পালন করব। জন্মদিনের কেক কাটার জন্য আমরা কয়েকজন আলাপ করে একটা রেস্টুরেন্টও বাছাই করে রেখেছিলাম। তবে বুলবুলকে চমক দিতে সেটা তাঁকে জানাইনি। এখন সেই আমাদের বড় চমক দেখিয়ে ছেড়ে চলে গেল। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।’

রোমান আরও বলেন, ‘রাত ১২টায় বুলবুলের জন্মদিনের ক্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিগত বছরের জন্মদিন উদযাপনের স্মৃতি চোখে ভাসছে। আমরা গুমরে গুমরে কাঁদছি।’

বুলবুলের বিভাগ ও হলের সহপাঠীরা বলছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির পর সশরীর ক্লাস শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চিরচেনা চেহারায় ফিরেছে। দুই বছর পর বুলবুলের জন্মদিনটি সামনে থাকায় তাঁরা সেটি ঘটা করে পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই বুলবুল চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’

বুলবুলের সহপাঠী আবু বকর বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৯ সালে সশরীর আমরা বুলবুলের জন্মদিন পালন করেছিলাম। ঘনিষ্ঠ সহপাঠীরা মিলে সেদিন বুলবুলকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এবং নিউজিল্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি, খেয়েছি। রাতে শাহপরান হলের সামনে তাঁর জন্মদিনের কেকও কাটা হয়েছিল। পরের দুই বছর করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তা করা হয়নি। এবার তাঁর জন্মদিনে আবারও আমাদের আনন্দে-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তিন দিন আগে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সব আনন্দ শেষ হয়ে গেল।’ 

সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় এক বান্ধবীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত গাজী কালুর টিলায় ঘুরতে যায় শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় (২০১৮-১৯ সেশন) বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল। পরে সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন তিনি। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বুলবুল মাটিতে লুটে পড়ে। পরে শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ