নটরডেমে ভর্তি হয়ে বাটন ফোন, বুয়েটে চান্স পেয়ে কেনেন ল্যাপটপ-অ্যান্ড্রয়েড

আবরারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র।
আবরারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র।  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নিম্ন আদালত। এছাড়া পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় মোট ২৫ জন আসামি ছিল। মামলায় অভিযুক্ত ২২ আসামী কারাগারে রয়েছেন, তিনজন পলাতক।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাবস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

এদিকে, নিম্ন আদালতের রায় হওয়ার পর আবরার ফাহাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনগুলো তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (১৪ মার্চ) রাতে তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ফেসবুকের এক পোস্টে এ তথ্য জানান। 

তিনি লিখেন, “ভাইয়ার (আবরার ফাহাদ) ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। বলা যায় এগুলো ওর শেষ স্মৃতি যেগুলো আমাদের পেতে বাকি ছিলো। নিম্ন আদালতের রায় হয়ে যাওয়ায় এগুলো আদালত থেকে ফেরত দিয়েছে। ভাইয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা, শেষ পর্যন্ত ওর কাছে থাকা এবং ওর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়তো এগুলো ব্যবহার করে দেওয়া বিভিন্ন পোস্ট। ফোনটা আর কখনো খোলা যাবেনা হয়তো যেহেতু আমরা পাসওয়ার্ড জানিনা। সিমগুলোও সম্ভবত বাতিল হয়ে গেছে।”

আরও পড়ুন: সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পাঠদান শুরু কাল

আবরার ফাইয়াজ জানান, তার ভাই বাটন ফোনটা কিনেছিলো ২০১৫ সালে নটরডেম কলেজে ভর্তির পর, ল্যাপটপ বুয়েটে চান্স পাওয়ার পরে আর অ্যান্ড্রয়েড ফোন ক্লাস শুরুর পরে।

“ল্যাপটপ বাসা থেকে কিনে দেওয়া হলেও ফোনটা কিনেছিলো সম্পূর্ণ নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে। বুয়েটের রেজাল্টের পর ক্লাস শুরুর আগে কুষ্টিয়াতে ছিলো যে ৫ মাস, সে সময়ে টিউশন করিয়েছিলো সে টাকাতে।”

তিনি আরও লিখেন, এখনো মনে আছে, ২০১৮ এর ২৬শে মার্চ আম্মু, আমি আর ভাইয়া ঢাকাতে গিয়েছিলাম ভাইয়ার সাথে। ভাইয়াকে হলে তুলে দিয়ে আমরা চলে আসবো। এর মধ্যে ভাইয়া বলেছিলো আমি থাকতেই ফোন কিনবে যাতে পরে কিনলে আমার খারাপ না লাগে। তাই ১লা এপ্রিল আমি, ভাইয়া আর আমাদের এক মামাতো ভাই বসুন্ধরা শপিংয়ে গেলাম ফোন কিনতে। সেদিন দুপুর ১২টার দিকে বেরিয়েছিলাম বাসা থেকে। সারাদিন তিনজন ঘুরে ঘুরে অনেক দোকানের অনেক ফোন দেখে শেষ পর্যন্ত ভাইয়া এই মোবাইলটা পছন্দ করেছিলো। সেদিন বাসায় ফিরতে প্রায় রাত ১২টা বেজে গিয়েছিলো। সেদিনের মতো আনন্দ খুব কম দিনই পেয়েছি সত্যি বলতে।”

আরও পড়ুন: হল খোলার পরেও খোলেনি ঢাবির ৪ হলের মেস

“তখন আমি কুষ্টিয়া থাকতাম আর ভাইয়া ঢাকাতে। সাধারণত ভাইয়া ফোন লক করে রাখতো অন্যদের মতই। কিন্তু যখন কুষ্টিয়া যেতো আমি যেন একটু ব্যবহার করতে পারি তাই লক অফ করে দিতো তখন।”

আবরার ফাইয়াজ আরও লিখেন, “ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেছে আজ প্রায় আড়াই বছর হতে চলেছে। তার অনেক প্রিয় ছিলো এই জিনিসগুলো। কিন্তু দেখুন এগুলো আছে, কিন্তু সেই মানুষটাই যে আর নেই!”


সর্বশেষ সংবাদ