আফসোস! আবরারের দুটো ইচ্ছে পূরণ করতে পারলাম না
- মুস্তাফিজুর রহমান সজীব
- প্রকাশ: ২৪ মে ২০২০, ০৮:৪৫ AM , আপডেট: ২৪ মে ২০২০, ০৯:০০ AM
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস আমি আবরার ফাহাদ রাব্বি'র দুইটা ইচ্ছে পূরণ করতে পারলাম না। একটি হলো সাঁতার শেখানো, আরেকটি বাইক চালাতে শেখানো। প্রতি ঈদে কুষ্টিয়া এসেই ফোন দিয়ে বলতো, ‘এইবার কিন্তু বাইক চালানো শেখাতেই হবে।’ কোনো ঈদের দিন বৃষ্টিতে পার হতো আবার কোনো ঈদ ব্যস্ততার সাথে। ওকে বাইকের পেছনে নেওয়ার সৌভাগ্য হলেও বাইকের সামনে নেওয়ার সৌভাগ্য আমার আর হলো না।
২০১৮ সালে শেষবার ফাহাদের সাথে ট্রেনে ঢাকা যাই। তারপর ট্রেনে ওর সাথে আর আমার আসা যাওয়া হয়ে উঠে নাই। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে যত সংখ্যক স্টেশন আছে, তার থেকে বেশি সংখ্যকবার ওর কল লিস্টে ওর আম্মুর ফোন নাম্বার আছে। কিছু সময় পর পর ওর ফোনে বেজে উঠে জেমসের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের রিংটোন। আর ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে-
“আব্বু কতদূর আছে আর? সাবধানে যেও। ব্যাগে রুটি-ডিমভাজি আছে খেয়ে নিও।” আবার কিছু সময় পরে- “আব্বু রুটি-ডিমভাজি খেয়েছো? যমুনা সেতু পার হয়েছো?” আবার কিছু সময় পরে- “সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এখনো ঢাকা পৌঁছাতে পারো নাই? ট্রেন কি লেট ছিলো?”
আমি মাঝে মাঝে ফোন কেড়ে নিয়ে ওর আম্মুকে বলতাম, জ্বী আপনার ছেলে আমার সাথেই আছে। আর ফোন দিয়েন না, ছেলেটা ফোন রিসিভ করতে করতে অসুস্থ হয়ে যাবে। পৌঁছায়ে আমি ফোন দিবোনে। ওর আম্মু তখন বলতো, ‘দাদাভাই ওকে নিয়ে অনেক টেনশন হয় আমার। ছেলেটাকে দেখে রেখো।’ আমি অভয় দিয়ে বলতাম, ‘আচ্ছা আপাতত দেখে রাখবো, যতদিন পারি।’
ফাহাদের আম্মু আমার দাদীর বোন। আমাদের দুইজনের বয়সের পার্থক্য মাত্র ১ মাস ১৬ দিনের হওয়া স্বত্বেও ওকে আমার চাচাজি বলে ডাকতে হতো। ভালো লাগতো না চাচাজি বলে ডাকতে। তাই অনেক সময় অনেক নামেই ডাকতাম। কখনো বলতাম, ‘রাধুনি’। কখনো বলতাম, ‘বিধবা বেডির জামাই’। আবার কখনোবা বলতাম, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী।’ তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হতো যখন ‘ফাহাদ’ বলে ডাকতাম।
কাল ঈদ। আমার ফোনে আর ‘ফাহাদ’ নামের কেউ কখনোই কল দিয়ে বলবে না, ‘এইবার কিন্তু আমাকে বাইক চালানো শেখাতেই হবে!’ আমি আজো অপেক্ষায় থাকি, কোনো এক ঈদের দিন আমাকে ফোন দিয়ে বলবে, ‘আমাকে কিন্তু বাইক চালানো শেখাতেই হবে।’ আমি আজো ওর স্মৃতি বয়ে বেড়াই। একসাথে থাকা মুহূর্তগুলো আজো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। কত রাত ওর সাথে গল্প করে পার করেছি। আর এখন কত রাত ওর গল্প মনে করে পার করতে হয়!
ওর স্মৃতি মাঝে মাঝে খুব বেশি মনে হলে আমার নির্ঘুম রাতটা আরো দীর্ঘ হয়ে উঠে!