‘পড়াশোনা শেষ, সবার প্রশ্ন কী করছি—তাই ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি’ 

ক্যাম্পাসেই ঈদ মাভাবিপ্রবির অনেক শিক্ষার্থীর

মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থী সাগর হালদার,
জয় সরকার, হেনামুল হাসান হিমু ও 
আব্দুর রহমান
মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থী সাগর হালদার, জয় সরকার, হেনামুল হাসান হিমু ও আব্দুর রহমান  © সংগৃহীত

ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে উৎসব, আনন্দ। কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী সে আনন্দ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। কেউ থাকছেন ক্যাম্পাসে, কেউবা ফিরছেন বাড়ি। কিন্তু সবার মনেই একটাই চিন্তা, ‘কবে আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাব?’ স্নাতক শেষের পর চাকরির প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) অনেক শিক্ষার্থী। সে কারণে ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার অনিশ্চয়তার অনুভূতি নিয়ে ফিরছেন বাড়ির পথে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর হালদার বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ঈদগুলো কত আনন্দময় ছিল! কত আগ্রহ আর স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই আগ্রহ ম্লান হয়ে গেছে, স্বপ্নও বদলে গেছে। এখন একটাই স্বপ্ন, একটি ভালো চাকরি ও বাবা-মায়ের জন্য কিছু করা। পড়াশোনা শেষ, আর চারপাশের সবার একটাই প্রশ্ন, ‘আমি এখন কী করছি?’ অথচ আমার কাছে এর কোনো স্পষ্ট উত্তর নেই। তাই ঈদ এলেও আর আগের মতো বাড়ি যাওয়া হয় না। অনিশ্চয়তা আর প্রশ্নের ভার যেন আনন্দের পথ আটকে রেখেছে।

ঈদ মানেই খুশি, কিন্তু চাকরির অনিশ্চয়তা, ভবিষ্যতের ভাবনা আর চারপাশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য সেই আনন্দ কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে। কেউ ক্যাম্পাসে ঈদ করছেন। আবার কেউ পরিবারের সান্নিধ্যে স্বস্তি খুঁজছেন। যারা ক্যাম্পাসে থাকছেন, তারাও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন।

ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স (এফটিএনএস) বিভাগের শিক্ষার্থী জয় সরকার বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষাজীবনের একটি বড় অধ্যায় শেষ করেছি। বিএসসি ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। কিন্তু এরপর কী আছে, কোথায় যাচ্ছি—সে উত্তর আমার কাছেও নেই। চাকরির অপেক্ষা, চারপাশের মানুষের প্রশ্ন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ—সব মিলিয়ে এক অদৃশ্য চাপ অনুভব করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ি ফিরছি, শৈশবের নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু এবার আনন্দের পাশাপাশি এক অজানা ভয়ও কাজ করছে। আত্মীয়দের প্রশ্ন, এখন কি করছো? এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর আমার কাছে নেই। জানি সবাই আমার ভালো চায়, কিন্তু এই প্রত্যাশাগুলোই যেন অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঈদ মানেই খুশি, কিন্তু চাকরির অনিশ্চয়তা, ভবিষ্যতের ভাবনা আর চারপাশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য সেই আনন্দ কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে। কেউ ক্যাম্পাসে ঈদ করছেন। আবার কেউ পরিবারের সান্নিধ্যে স্বস্তি খুঁজছেন। যারা ক্যাম্পাসে থাকছেন, তারাও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন।

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স (সিপিএস) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হেনামুল হাসান হিমু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যখনই ২-৩ দিনের ছুটি পেতাম, তখনই বাড়ির পথে রওনা হতাম। ঈদ এলে টিউশনির আয় বাড়িতে পাঠানোর তাগিদ থাকতো। কিন্তু এখন অনার্স শেষ, পরিস্থিতি বদলে গেছে। আত্মীয়-স্বজনদের মুখে বারবার একটাই প্রশ্ন, চাকরির কী অবস্থা? এ প্রশ্ন এড়াতেই এবার বাড়ি না গিয়ে হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঈদের পর বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা রয়েছে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য সময় নষ্ট করতে চাই না।

আরো পড়ুন: বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ পড়ায় ভেঙে যায় বিয়ে, হতাশায় আত্মহত্যার চেষ্টা

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ঈদ মানেই এক অনন্য অনুভূতি। পারিবারিক আবহে উৎসবের আনন্দ, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, আর বিশেষ এক উচ্ছ্বাস। প্রতি বছর পরিবারের সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করতাম, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সদ্য স্নাতক শেষ করেছি, সামনে বড় স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছি। তাই প্রথমবারের মতো বাড়ির বাইরে, ক্যাম্পাসেই ঈদ কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সঙ্গে না থাকার কারণে কিছুটা খারাপ লাগছে। কিন্তু লক্ষ্য পূরণের পথে এই সামান্য ত্যাগ খুব বড় কিছু নয়।

তিনি বলেন, সময় ও দূরত্ব বিবেচনায় ক্যাম্পাসেই ঈদ করাটাই যথাযথ মনে হয়েছে। সামনে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তাই নিজেকে প্রস্তুত করতে কিছুটা ত্যাগ করতেই হচ্ছে। তবে আমি একা নই, আরও অনেকে ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করবেন। সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ায় উৎসবের আমেজ অন্যরকম হবে। বাড়িতে ঈদ করা না হলেও ক্যাম্পাস তো আমাদের দ্বিতীয় পরিবার। সেই হিসেবে, অন্তত একটি পরিবারের সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করছি— এটাও কম আনন্দের নয়।


সর্বশেষ সংবাদ