‘তোমাকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না’—ফারদিনের বান্ধবীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

আরিশা আশরাফের মনিটরের স্ক্রিনে ফারদিন নুর পরশ
আরিশা আশরাফের মনিটরের স্ক্রিনে ফারদিন নুর পরশ  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আরও এক বান্ধবীর তথ্য সামনে এসেছে। তার নাম আরিশা আশরাফ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের (২০২২) সেশনের শিক্ষার্থী। ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর তার এবং ফারদিনের বিভিন্ন বিষয়ের স্মৃতিচারণ করে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা রীতিমতো ভাইরাল।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরিশা আশরাফ লিখেছেন, ‘‘ফারদিন নুর, এটা কেন মঞ্চ নাটকের দৃশ্যের মতো মনে হচ্ছে? এটা কি একটি খারাপ স্বপ্ন নাকি তুমি সত্যিই চিরতরে চলে গেলে? তোমাকে হারানোর বেদনা আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি ‘১৯৮৪’ শেষ করেছি। তুমি আমাকে বলেছিলে ধীরে ধীরে এগোতে, আমি তাই করেছি।’’

তিনি লিখেন, এখন, তুমি আমার কথা শোনার জন্য এখানে আসছো না কেন? আমি আগের সব বইয়ের মত এটি নিয়েও তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি এখন সেই (ইউকুলেলে) গানটি কিছুটা ভালো বাজাতে পারি। মনে আছে, তুমি এটা শুনতে চেয়েছিলে? আমি এটা তোমার জন্য গাইতে চাই।

‘‘আমি তোমাকে যে দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলাম তার উত্তরও তুমি দাওনি। আমি এখনও ন্যায়বিচার সম্পর্কে সেই দার্শনিক বক্তৃতাগুলি শেষ করতে পারিনি, যা তুমি আমাকে সাজেস্ট করেছিলে।’’

ফারদিনের সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করে আরিশা আরও লিখেন, আমি তোমাকে একটি সিনেমা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগও দাওনি। তোমার আর আমার  শত শত স্থগিত করা আলোচনা আছে যা আমি তোমার সাথে করতে চেয়েছিলাম।

আরও পড়ুন: মাদক কারবারির হাতে খুন হন ফারদিন!

বুয়েটছাত্র ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর তার বাবা নূর উদ্দিন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বুশরা নামে ছাত্রীসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেছেন। ফারদিন নিখোঁজের রাতে বুশরা তার সঙ্গে ছিলেন বলে তথ্য রয়েছে। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তার রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে বুশরা পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

আরিশার ওই স্ট্যাটাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার ব্যবহারকারী (স্যাড) প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। প্রায় ৫ হাজার মানুষ স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছেন। আরিশার এ পোস্টের কমেন্ট সেকশনে তার শুভাকাঙ্খীদের সমবেদনা জানাতে দেখা গেছে।

আরিশা ফারদিনকে নিয়ে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, আমি তোমার আর আমার বন্ধুত্ব আরও দীর্ঘ করতে চেয়েছিলাম। এই পৃথিবীতে আমার মতো করে চিন্তা করা একমাত্র ছেলে তুমি। আমি তোমাকে যেতে দিতে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি আর তোমার কথা শুনতে পাবো না; এটা ভাবতেই আমি যেন মরে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমি আর কোনোভাবেই তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবো না। এই পৃথিবীকে কেন এমন নিষ্ঠুর হতে হবে? কেন?

ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার কুতুবপুর এলাকার বাসিন্দা। ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর গত ৭ নভেম্বর তার মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জে একটি কটন মিলের পেছনে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত দলের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ ফরহাদ ৮ নভেম্বর জানান, ফারদিনের মাথায় ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ