৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)  © লোগো

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারি বিধি না মেনে আয়-ব্যয়, যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত, জনবল কাঠামো, বিভিন্ন আদায়-প্রাপ্তিসহ আর্থিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৫০টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে। শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।   

গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র নিরীক্ষা করে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর অনিয়মের এই প্রমাণ পায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব অনিয়ম হয়েছে বলে সরকারের শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরীক্ষায় ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৪ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ৪৩টি সরকারি কলেজ ও ৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অনিয়ম চিহ্নিত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো— শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেমিনার ফির নামে অর্থ আদায় করা হয়। সেই অর্থের ন্যূনতম ২০ শতাংশ দিয়ে সেমিনারের জন্য বই, জার্নাল ও পত্রিকা কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি। সাময়িকী প্রকাশের জন্য শিক্ষার্থীরা ফি দিলেও তা করা হয়নি। বিভিন্ন পরীক্ষায় শিক্ষকদের যে পরিমাণ সম্মানি পাওয়ার কথা, তারা উত্তোলন করেছেন তার চেয়ে বেশি। অনিয়ম করে আদায় করা এসব অর্থ ৪৫টি খাতে ব্যয় করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ৫০ স্কুল ও কলেজ
অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ৪৩টি সরকারি কলেজের তালিকায় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, বান্দরবান সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, সিলেটের সরকারি এম সি কলেজ, সন্দ্বীপের সরকারি হাজী এ বি কলেজ, টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি সংগীত কলেজ, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি কলেজের নাম রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ঢাকার সেরা ১০ কলেজ যেগুলো

এ তালিকায় আরও নাম রয়েছে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দোলা সরকারি কলেজ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ, মাগুরার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঝিনাইদহের সরকারি কে সি কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, নওগাঁর সাপাহার সরকারি কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, শেরপুর সরকারি কলেজ, মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, বগুড়া সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, যশোরের সরকারি এম এম কলেজ, যশোর সরকারি কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের।

অভিযোগ ওঠা সাতটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলো— সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পঞ্চগড়ের সরকারি বি পি উচ্চবিদ্যালয়, ঝালকাঠি বালক উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুল, পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল।

কোন খাতে কত টাকা অনিয়ম
নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টেন্ডার রেসপনসিভ না হওয়া সত্ত্বেও ‘কোটেশনের’ মাধ্যমে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা, যা মূলত অনিয়ম। শিক্ষক-কর্মচারীদের দেওয়া সম্মানী ও বিভিন্ন বিল থেকে আয়কর কেটে না রাখায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা। বিল থেকে মূল্য সংযোজন কর কেটে না রাখায় অনিয়ম হয়েছে ৩৭ লাখ টাকার বেশি।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, ভর্তি ফিসহ কয়েক ধরনের ফি আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে ৩৮ লাখ টাকা জমা করা হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাপ্য না হয়েও ঢাকার বাইরে সংযুক্ত শিক্ষকদের অনেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হারে বাড়িভাড়া নিয়েছেন। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯২ লাখ টাকার বেশি টাকা। বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের অগ্রিম বাবদ টাকা দেওয়া হলেও তা সমন্বয় না করে অনিয়ম করা হয়েছে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রীদের উপবৃত্তির অবিলিকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় পৌনে ৪৭ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা প্রায় ৯১ লাখ টাকা এক খাত থেকে আরেক খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এভাবে ৫৪টি খাতে ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৪ টাকার অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, অডিট আপত্তি উঠলে নিয়মানুযায়ী তা নিষ্পত্তির জন্য জবাব চাওয়া হয়। এ নিয়ম মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ