২৩ মার্চের পর নুর-রাব্বানীরা কি ভিপি-জিএস থাকছেন?
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২০, ০৮:০৮ PM , আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০, ১০:০৪ AM
প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মেয়াদ আগামী ২৩ মার্চ শেষ হচ্ছে। সে হিসেবে ওদিনের পর নুরুল হক নুর ও গোলাম রাব্বানীরা ভিপি-জিএস পদে থাকছেন কিনা— তা নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে নতুন নির্বাচন নিয়েও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন নির্বাচন না হলে তার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের নিয়ম রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালনকারীদের অধিকাংশের অনুমোদন থাকার রীতি রয়েছে। এ ব্যপারে ডাকসুর সর্বশেষ সভায় সুপারিশ উঠলেও বিষয়টি নিয়ে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক আপত্তি তোলেন। সে হিসেবে আগামী ২৩ মার্চের পর আসলেই ডাকসু কমিটি বহাল থাকবে কিনা— তা নিয়ে সদস্যদের অনেকে তো বটেই, স্বয়ং উপাচার্যের কাছে জানতে চেয়েও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডাকসুর মেয়াদ শেষ হতে চললেও নতুন করে নির্বাচন করার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ডাকসুর অধিকাংশ সদস্য ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তাদের ডাকসু নিয়ে তেমন একটা মাথা ব্যথা নেই। তবে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবি ডাকসু নির্বাচনের যে ধারা প্রায় তিন দশক পর চালু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকুক।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রের (সংশোধিত) ৬ এর ‘গ’ ধারায় বলা আছে, ‘সংসদে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারগণ ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্বপালন করবেন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে কার্যনির্বাহী পদাধিকারগণ অতিরিক্ত ৯০ দিন অথবা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ামাত্র আগের সংসদ বাতিল হয়ে যাবে।’
এদিকে ২৩ মার্চের পর ডাকসুর মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানো হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সে হিসেবে ডাকসুর ভিপি-জিএসসহ অন্যান্যদের মেয়াদও বাড়ছে। মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যতটা না আলোচনা তার চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে আবার নির্বাচন হওয়া নিয়ে।
২৩ মার্চের পর ডাকসুর মেয়াদ থাকবে কিনা— এ বিষয়ে জানতে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ডাকসুর যে সংবিধান সেটি আমি এখনও দেখিনি। তাই এ বিষয়ে অনুমান করে মন্তব্য করা যাবে না। যেটা যেখানে আছে, সেটা সেখানে থাকুক। সব বিষয় দেখে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
এদিকে ডাকসুর মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তার মতে, ডাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মত প্রকাশের সাহস পেয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে বলতে পারছে। তাই নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রাখার দাবি তার। তবে নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর ভিপি নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তিন মাস বাড়ানো যায়। যা গঠনতন্ত্রে রয়েছে। তবে, ভিসি স্যার চাইলে আরো রাখতে পারেন। ডাকসু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অতিরিক্ত সময় বাড়ানোর রেকর্ড আছে। শেষ ডাকসু ছয় বছর ছিলো।
ডাকসু মেয়াদ বাড়ানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আামি সময় বাড়ানোর পক্ষে না। আমি চাই, দায়িত্ব শেষ হওয়ার মধ্যেই যেন আরেকটি নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারি। নির্বাচন হওয়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার পথ সৃষ্টি হয়েছে। তাই নির্বাচনের ধারাবাহিকতা জরুরি। তবে ক্ষমতাসীনরা তা হতে দেবে কিনা জানি না।
ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক— চান জিএস গোলাম রাব্বানী। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “দীর্ঘ আটাশ বছরের অচলায়তন ভেঙে যে ডাকসু সচল হয়েছে, জিএস হিসেবে আমি চাই অবশ্যই তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে ডাকসুর সভাপতি, মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে আমাদের মনোভাবের কথা জানিয়েছি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিয়েছি। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক থাকবে।”
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত বছরের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন ভিপি নুরুল হক নুর এবং জিএস গোলাম রাব্বানীসহ আরও ২৩ জন প্রতিনিধি।