চলন্ত ট্রেনে তরুণী ধর্ষণ: যাত্রী নিরাপত্তায় কী ধরনের ব্যবস্থা আছে?

চলন্ত ট্রেনে তরুণী ধর্ষণ: যাত্রী নিরাপত্তায় কী ধরনের ব্যবস্থা আছে?
চলন্ত ট্রেনে তরুণী ধর্ষণ: যাত্রী নিরাপত্তায় কী ধরনের ব্যবস্থা আছে?  © সংগৃহীত

সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ট্রেনে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) আরো একজনকে নোয়াখালী থেকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট চারজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

আটক হওয়া চারজনই ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার পরিবেশন) প্রতিষ্ঠানের কর্মী। ট্রেনে ওই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য বলেছে তাদের কর্মীরা জড়িত প্রমাণিত হলে আইনি পদক্ষেপে তারাও সহযোগিতা করবে। ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘থানায় মামলা হয়েছে। আমরাও একটা মামলা করব। কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি অবশ্যই হতে হবে।’

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ঘটনা জানা মাত্র দ্রুততম সময়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসামিদের ধরছে। থানায় মামলা হয়েছে। আমরাও দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ধরনের ঘটনা রেলে নজিরবিহীন।’

এদিকে ঘটনার শিকার তরুণীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রাখা হয়েছে।

ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

বুধবার রাতে সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়া উদয়ন এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী। তার টিকিট ছিল না বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এবং তিনি ট্রেনে উঠে খাবার কারে (ট্রেনের যে বগিতে খাবারের ব্যবস্থা আছে) অবস্থান নিয়েছিলেন।

পুলিশ ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনটি ভোর রাতের দিকে লাকসাম পার হওয়ার সময় তরুণীটি ধর্ষণের শিকার হন। এর আগে, খাবার পরিবেশন করা প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা তাকে উত্ত্যক্ত করেছে বলেও পুলিশকে জানান তিনি।

ঘটনার পর ট্রেনে থাকা জিআরপি পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে ওই বগিতে যান এবং তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হন। আর একজন পালিয়ে যায়। তাকেই বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর কুতুবপুর থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।

তিনি জানান, আগে আটক হওয়া তিনজনকে বুধবারই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের সময় চেয়ে রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। তবে পুরো বিষয়টি জানাজানি হয় বুধবার সন্ধ্যার পর।

পুলিশ ও কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভুক্তভোগী তরুণী ভৈরবে তার এক নিকটাত্মীয়র বাসায় থাকেন। তিনি সিলেট গিয়েছিলেন তার এক ভাইয়ের বাসায়। সেখান থেকে বুধবার ট্রেনে করে তিনি বান্দরবানে যাওয়ার উদ্দেশে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন।

ওই তরুণীর বাবা হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং মা পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। তারা বান্দরবানেই বসবাস করেন। রেল কর্মকর্তাদের ধারণা, রেলের গার্ডদের যোগসাজশেই কোনো টিকিট ছাড়াই তিনি ট্রেনে উঠে খাবার পরিবেশনের বগিতে অবস্থান নিয়েছিলেন।

‘নজিরবিহীন ঘটনা’

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম উদয়ন এক্সপ্রেসে ধর্ষণের ঘটনাটিকে নজিরবিহীন আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি। ওয়ার্কিং গার্ডকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদেরই অবহেলা পাওয়া যাবে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাবার পরিবেশন কোম্পানিটির কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’

নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এটি জঘন্যতম অমার্জনীয় অপরাধ। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব এবং রেলের কারো গাফলতি পেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।’

প্রতিটি ট্রেনে খাবার পরিবেশন করে বেসরকারি কোম্পানি। সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের দুটি ট্রেনে খাবার পরিবেশনের কাজ করছে কুমিল্লার এস এ করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি সত্ত্বাধিকারী শাহ আলম বলেন, ট্রেনে জিআরপি পুলিশসহ নানা উইং কাজ করে থাকে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা খুবই অবাক করার মতো।

তিনি বলেন, ‘এখন ভিকটিম মামলা করেছে। আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের কোম্পানির সুনামের বিষয় জড়িত। আমাদের কোনো কর্মী অপরাধে জড়িত প্রমাণ হলে আইন মতো যা হওয়ার তাই হবে। আমরা সহযোগিতা করব। পুলিশের সাথে কোম্পানি থেকে যোগাযোগ আছে।’

ট্রেনে নিরাপত্তার তাহলে কী অবস্থা

বাংলাদেশের ট্রেন মাঝে মধ্যে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পড়লেও ট্রেনের অভ্যন্তরে থাকা যাত্রীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার ঘটনার নজির তেমন নেই বলে দাবি করেন মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।

কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত ভুল সিগন্যাল, বগি লাইনচ্যুত হওয়া কিংবা রেলক্রসিং যথাযথ না থাকার মতো কারণগুলোই রেলের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু ট্রেনের ভেতরে যাত্রীরা কোনো সমস্যায় পড়লে বা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে গার্ড ও জিআরপি পুলিশ সদস্যরা তাদের সহায়তা এগিয়ে আসেন। ট্রেনের ইঞ্জিন কারের পর গার্ড, এরপর খাবার কার এবং তারপর যাত্রীদের জন্য কার বা বগিগুলো রাখা হয়।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রেলওয়ে পুলিশ ও গার্ডরা সার্বক্ষণিক পরিদর্শনে থাকেন। কোনো যাত্রী কোনো অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাৎক্ষণিক। কাজেই যাত্রাকালে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এরপরেও উদয়ন এক্সপ্রেসের ঘটনায় কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির সুযোগ না থাকে। পাশাপাশি ট্রেনের ভেতরে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের আরো সতর্ক থাকার পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ [সূত্র : বিবিসি]


সর্বশেষ সংবাদ