চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২ লাখ টাকার কাজে ৩ লাখ চাঁদা দাবি ছাত্রলীগের চার নেতার
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৫ AM , আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৩ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটি নামফলক তৈরির কাজে যুক্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ঠিকাদারকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে অভিযুক্ত চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী।
জানা গেছে, ২ লাখ ১৩ হাজার টাকার কাজ হলেও এর চেয়েও প্রায় ৯০ হাজার টাকা বেশি চাঁদা দাবি করেছেন অভিযুক্তরা। গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে চবির নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তভোগী ঠিকাদার তামজিদ উদ্দিন হাটহাজারী থানায় মামলা করেন।
হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত হোসেন, উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মাশরুর কামাল অনিক ও সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ হৃদয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে একটি নামফলক নির্মাণ করার জন্য ডিন অফিস থেকে কাজ পায় মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা সেখানে কাজ করতে গেলে বাধা দেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। পরে অভিযুক্তরা ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় মারধর করা হয় তাদের।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, তার বাবা মো. সেকান্দর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বাত্ত্বাধিকারী। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তামজিদ নামফলকের নির্মাণকাজ করছেন। ঘটনার ৩ দিন আগে একটি ফোন নম্বর থেকে তামজিদের বাবাকে আসামিরা ফোন করেন।
সেখানে বলা হয়, নির্মাণকাজ পরিচালনা করতে হলে সাফায়েত হোসেন, মেহেদী হাসান, মাশরুর কামাল অনিক ও হৃদয়কে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে কাজ করতে দেবে না বলেও তামজিদের বাবাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
ভুক্তভোগী ঠিকাদার তামজিদ উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটি নামফলকের কাজ আমার বাবাকে দেওয়া হয়। তিনি হার্ট অ্যাটাক করায় আমি বাবার কাজটি শেষ করার জন্য আসি। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে আমার বাবাকে ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করা করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা আমাকে মারধর করে।’
এ সময় সঙ্গে থাকা বন্ধুকেও মারধর করে জখম করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদেরকে আব্দুর রব হলে নিয়ে গিয়ে ২৫ মিনিট আটকে রেখে হুমকি-ধমকি দেন। পরবর্তীতে আমি বের হয়ে প্রক্টর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিই। আমি মনে করি, তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এমন অপকর্ম করছে।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কেউ কল রিসিভ করেননি। ফলে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
আরো পড়ুন: প্রাথমিকের পরীক্ষায় জালিয়াতিতে তিন জেলায় আটক ৪৪, বহিষ্কার ২৬
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। কয়েকজন ছাত্র নামফলকের কাজে বাঁধা দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানিয়েছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম শিকদার বলেন, ‘একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী রোববার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। আমরা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’