‘ওসি মহসীন’ সেজে ৭৭১ মেয়ের সঙ্গে চ্যাট ফাইভ ফেল যুবকের, অবশেষে ধরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:০১ PM , আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৬ PM
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে সাইবার প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) গাইবান্ধা জেলার সদর থানা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা-পুলিশের একটি দল। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
আনোয়ার গাইবান্ধা জেলার সদর থানার খোলাবাড়ী গ্রামের সাইদার হোসেনের ছেলে। কাজ করেন স্থানীয় একটি প্রিন্টিং প্রেসে। সদর উপজেলার খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ফেল করে আর লেখাপড়া না করলেও দক্ষতার কারণে এলাকায় পরিচিত ফেসবুক মাস্টার নামে।
ফেসবুকে এই মাস্টারের রয়েছে নানা রকম পরিচয়। কখনো পুলিশের ওসি, রাষ্ট্রপতি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, অভিনেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিচয়ে ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে তার। ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন ভুয়া আইডি থেকে ৭৭১ নারীর সঙ্গে আনোয়ারের চ্যাট করার তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: দুধের শিশুসহ দুই সন্তানকে হত্যার পর ফাঁস নিলেন মা
গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ মহসীন (MD Mohshin) নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি চালিয়ে আসছিলেন। আইডিতে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের মূল আইডির অনুরূপ ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করেন তিনি। মেসেঞ্জারে সেই আইডি থেকে তিনি ওসি মহসীন সেজে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে চ্যাট করেন। এদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন, কারও কারও সঙ্গে আপত্তিকর ছবি আদান-প্রদান করেন, আবার কারও কারও কাছ থেকে টাকাও দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানা যায়।
তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আনোয়ারের পড়াশোনার দৌড় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি ওসি সেজে মেয়েদের সঙ্গে চ্যাট করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত ৭৭১ জন মেয়ের সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাট করেন তিনি। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল—সবাই আছেন তাঁর এই তালিকায়। মেসেঞ্জারে কথা বলার পরে হোয়াটসঅ্যাপেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বললেও কারও সঙ্গে ভিডিও কলে আসতেন না তিনি। আবার কেউ তাঁকে দেখতে চাইলে কিংবা সন্দেহ করলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ব্লক করে দিতেন। তিনি মূলত মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন। এদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে ছবিও আদান-প্রদান করেছেন। আবার কারও কারও কাছে টাকাও দাবি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আনোয়ার চাকরি করেন ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। চাকরির ফাঁকে ফাঁকেই তিনি ইউটিউব দেখে দেখে ফেসবুকের বিভিন্ন কলাকৌশল শেখেন। এভাবে শিখে শিখেই তিনি বিভিন্ন মানুষের ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেন। খোলাবাড়ী গ্রাম ও দাশ বেকারি মোড় এলাকায় তিনি ‘ফেসবুক মাস্টার’ নামেই পরিচিত। আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা, পেজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট কিংবা স্ট্রাইক খাওয়া পেজ রিকভারসহ ফেসবুকের যেকোনো সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে ওঠেন আনোয়ার।
ওসি মহসিন আরও জানান, কারও ফেসবুক আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করে দেন আনোয়ার। এ জন্য তাঁর কাছে বিভিন্ন মেয়েরা আইডি, পাসওয়ার্ড উদ্ধারেও যোগাযোগ করতেন। কিন্তু যে সব আইডি তিনি উদ্ধার করে দিতেন, সেসব আইডিই আনোয়ারের হয়ে যেত। আনোয়ার বিশেষ একটি কৌশল অবলম্বন করতেন, যার ফলে পরবর্তী সময় ওই আইডি আনোয়ারের কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যেত। পরে আনোয়ার সে আইডিই ব্যবহার করতেন। এসবের মধ্যে যে সব আইডি একটু পুরোনো হয়েছে, সেসব আইডির নাম পরিবর্তন করেই গণ্যমান্য ব্যক্তির নামে ভুয়া আইডি খোলেন। এসব ভুয়া আইডি রিপোর্ট করে বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবারও তা রিকভার করে ফেলেন আনোয়ার।