করোনায় স্বাস্থ্যের নিয়োগ

৮৯ শতাংশ খাতায় বিশেষ সংকেত, দুদক পেয়েছে ঘুষের প্রমাণও

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর  © ফাইল ছবি

দেশে মহামারি চলাকালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় সরকার জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও ক্যার্ডিওগ্রাফারসহ প্রায় দুই হাজার ৮০০ শূন্য পদে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা অসঙ্গতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জরুরিভিত্তিতে হওয়া এ নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি নিয়োগে অবৈধ লেনদেন হয়েছে ১৫-২০ লাখ টাকা, এমনকি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা অস্পষ্ট সংকেত পাওয়ারও প্রমাণ মিলেছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের পুরো এ প্রক্রিয়ার মুখোশ উন্মোচনে মাঠে নেমেছে দুদক।

২০২০ সালে সরকারের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ৭২ হাজারের বেশি আবেদন জমা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে টেকনিশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে উত্তীর্ণ হন চার হাজার ৪৫৩ জন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়া কথা।

পরবর্তীতে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করেন বা অনেক কম নম্বর পান। এমনকি খাতায় লেখা প্রশ্নের বিষয়ে যথাযথ জবাবও দিতে ব্যর্থ হন তারা। অথচ কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অনেক ভালো করলে এ নিয়োগের অস্বচ্ছতা আরও প্রকট হয়।

এরপরই সামনে আসতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ঘুষ লেনদেনের তথ্য। জানা গেছে, পদপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। যাদের পাস করাতে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র পরিবর্তন করা হয়। সন্দেহভাজন পরীক্ষার্থীদের প্রতিটি খাতায় নানা ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন, এমনকি হাতের লেখায়ও অমিল পাওয়া যায়। নানা বিতর্কে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রথমে স্থগিত এবং পরে বাতিল করা হয়। এরপর ঘুষ লেনদেনের ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে দুদক।

সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রায় ২৫০০ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ মেলে। যা মোট নিয়োগের প্রায় ৮৯ শতাংশ। যার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা।
 
অনুসন্ধানে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. হাসান ইমাম, সদস্য সচিব ও উপপরিচালক আ খ ম আখতার হোসেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

দুদকের অনুসন্ধানে প্রায় ২৫০০ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ মেলে। যার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা

অভিযোগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি হাসান ইমাম ‘এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই’—জানিয়ে তিনি কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।

আর নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব আ খ ম আখতার হোসেন বলেন, আমি সদস্য সচিব ছিলাম ঠিকই। তবে, নিয়োগের বিষয়ে আমার তেমন কাজ ছিল না। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত চলমান। এ বিষয়ে জানতে আপনি সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির বাকী সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান জানিয়েছেন, নিয়োগে পরীক্ষায় এ ধরনের কাজ জঘন্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এ নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সেখানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যদি তাদের সম্পৃক্ততা প্রতিবেদনে সঠিকভাবে উদঘাটিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি মামলার দিকে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ