বাকৃবিতে বহিরাগত তরুণ-তরুণীদের আপত্তিকর কর্মকাণ্ড, বিব্রত শিক্ষার্থীরা

বহিরাগতদের অশ্লীল আচরণ ও অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড
বহিরাগতদের অশ্লীল আচরণ ও অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বহিরাগতদের অশ্লীল আচরণ ও অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ক্রমেই বাড়ছে, এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধরনের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা এবং নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে বোটানিক্যাল গার্ডেন, বৈশাখী চত্বর, আমবাগান, টিএসসি লেকের পাড়, নদীর পাড় এবং মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের মাঠে এসব বহিরাগতরা অবাধে অশ্লীলতা এবং অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং শিক্ষার পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সত্ত্বেও এই বহিরাগতদের একের পর এক অনৈতিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা এইসব ঘটনায় ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন, যা তাদের মানসিক অস্বস্তি এবং নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে।

এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যার পর বসে মাদকের আসর। বিভিন্ন জায়গায় হরহামেশাই পরিত্যক্ত ফেনসিডিলের শিশি ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন স্কুলকলেজের পোশাক পরিহিত শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে এসে অবাধে জড়াচ্ছে অশ্লীলতায়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও তা তেমন কার্যকর না। বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ফটকে জোরালো কোনো তল্লাশি ব্যবস্থা নেই, যা নিরাপত্তার ঘাটতিকে আরও প্রকট করে তুলছে।

এমন পরিস্থিতি শিক্ষার শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার প্রতি একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে পুরো ক্যাম্পাসের পরিবেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, প্রশাসন যদি এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তবে ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

এ বিষয়ে ওবায়দুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, যা সকল মহলকে মর্মাহত করেছে। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সোচ্চার হয়ে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে।

মশিউর রহমান খান বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে সবসময় বহিরাগত কাপল এসে নোংরামি করে। নিয়মিত অভিযান চালানো হলে এমন নোংরামির ঘটনা ঘটত না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন । এটি শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সকলের জন্য খুবই বিব্রতকর। বিশেষত, ক্যাম্পাসে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। যদিও নিরাপত্তাকর্মী সংকট রয়েছে, তারপরও আমরা সেই সমস্যা সমাধানে যথাসম্ভব কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার সঠিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারব। পাশাপাশি, আগামী দিনে প্রক্টরিয়াল বডি আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে, যাতে ক্যাম্পাসে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আর না ঘটে।

এদিকে, বাকৃবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, পরিদর্শনের সময় এমন কোনো ঘটনা দেখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।


সর্বশেষ সংবাদ