একসঙ্গে দুই বোনের মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধ জয়ের গল্প

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তাসীন তাসফিয়া ও তানহা তাবাসসুম
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তাসীন তাসফিয়া ও তানহা তাবাসসুম  © টিডিসি সম্পাদিত

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার শিক্ষক দম্পতির দুই মেয়ে তাসীন তাসফিয়া ও তানহা তাবাসসুম দেশের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাসীন চান্স পেয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে, আর তানহা জায়গা করে নিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে।

তাদের এই অর্জনের পেছনে যেমন রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, তেমনি পারিবারিক শিক্ষার অনুপ্রেরণাও কম নয়। বাবা কামাল উদ্দিন সোহাগ চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং মা সুলতানা রাজিয়া আরজু দক্ষিণ জগৎপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। শিক্ষক বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে ছোটবেলা থেকেই তারা পেয়েছেন শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ।

পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, তাসীন ও তানহা প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন উদরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তারা পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। এরপর দাগনভূঞা আতাতুর্ক মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তাসীন তাসফিয়া মেধাক্রম ৭৬৩ এবং তানহা তাবাসসুম ১৬৫৪তম স্থান অর্জন করেছেন। এই সাফল্যের পেছনে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা, কঠোর অধ্যবসায় এবং সুপরিকল্পিত প্রস্তুতির বিশেষ ভূমিকা ছিল।

কামাল উদ্দিন সোহাগ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমার দুই মেয়ে ছোটবেলা থেকেই একই ক্লাসে পড়াশোনা করেছে। তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে এগিয়ে গেছে। কখনোই ওদের পড়াশোনা নিয়ে আমাকে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। নিজেদের মতো করেই ওরা শিক্ষা জীবন চালিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তাদের এই অর্জনে আমি অত্যন্ত গর্বিত এবং বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ নোয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক শ্রীকান্ত সাহার প্রতি, যিনি তাদের শিক্ষা ও পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

মা সুলতানা রাজিয়া আরজু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার দুই মেয়ে তাসীন ও তানহার পড়াশোনার শুরু আমার হাত থেকে। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি একটি বিশেষ আগ্রহ ছিল। তারা সবসময়ই তাদের ক্লাসে ভালো ফলাফল করেছে। এখন তারা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পেরেছে, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না। 

তাসীন তাসফিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমাদের দুই বোনের মধ্যে ছিল এক অনন্য প্রতিযোগিতা, যা আমাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও নিষ্ঠাকে বাড়িয়ে তুলেছিল। আমরা দুজনেই কে কী পড়ছি তা পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। একই সঙ্গে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য একে অপরকে উদ্বুদ্ধ করতাম। এই সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা ধীরে ধীরে নিজের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়েছি। আর সেই লক্ষ্যই আমাদের আজ দুজনকে মেডিকেলে নিয়ে এসেছে।

তার বোন তানহা তাবাসসুম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা দুইবোন একসাথে মেডিকেলে চান্স পেয়েছি এই অনুভূতিটা একেবারে আলাদা। এটি এমন একটি আনন্দ যা আমাদের জন্য স্বপ্নপূরণের থেকেও বেশি কিছু। তানহা আরও বলেন, মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতির সময় আমরা দুজনই একে অপরকে অনেক সাহায্য করেছি। কোচিংয়ে মডেল টেস্ট দিয়ে এসে ভুলগুলো আমরা নিজেরাই ধরিয়ে দিতাম। আমার ভুল সে সংশোধন করত, আর তার ভুল আমি। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল আমরা ডাক্তার হবো। আজ তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। তাদের মুখের হাসি দেখে আমাদের পরিশ্রম সার্থক মনে হচ্ছে।

নোয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক শ্রীকান্ত সাহা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তাসীন তাসফিয়া ও তানহা তাবাসসুম শুরু থেকেই অত্যন্ত মনোযোগী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী ছিল। তারা প্রথম বর্ষ থেকেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে এবং একাগ্রচিত্তে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। ক্লাসে তারা সবসময় মনোযোগী থাকত, পাঠ্যবিষয়গুলো গভীরভাবে অনুধাবন করত এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিত। তাদের অধ্যবসায় ও একাগ্রতা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ।

তিনি আরও বলেন, তারা শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় নয়, তারা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও ছিল সমানভাবে মনোযোগী। মূল বই দাগিয়ে পড়া, বিষয়গুলো গভীরভাবে বুঝে নেওয়া এবং নিয়মিত অনুশীলন তাদের প্রস্তুতির মূলভিত্তি ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রাখত এবং শিক্ষকদের পরামর্শ শতভাগ মেনে চলার চেষ্টা করত। তাদের অন্যতম বড় ত্যাগ ছিল স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকা। প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে অনেক শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে আসক্ত, সেখানে তারা নিজেদের সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়াশোনার দিকে নিবদ্ধ রেখেছিল, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।


সর্বশেষ সংবাদ