মুসলিমের কর্তব্য © সংগৃহীত
ইসলাম শান্তির ধর্ম, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান। আল্লাহ তায়ালা সূরা মায়েদার ১৫-১৬ নম্বর আয়াতে ইসলাম শান্তির ধর্ম এ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ইসলাম যেমন নারীর অধিকারের কথা বলে তেমনি একজন অমুসলিমের প্রতি একজন মুসলিমের কর্তব্য কী? চাই সে অমুসলিম মুসলিম দেশে জিম্মি হিসেবে বসবাসকারী হোক কিংবা সে নিজ দেশে বসবাসকারী হোক এবং ওই মুসলিম তার দেশে বসবাসকারী হোক? তার প্রতি কি আচরণ করতে হবে সেটাও শেখায় ইসলাম।
এ সম্পর্কে শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ চারটি ভাগে একজন অমুসলিমের প্রতি মুসলমানের কর্তব্য তুলে ধরেছেন।
এক
একজন মুসলমানের প্রথম কাজ হলো একজন অমুসলিমকে ইসলামের সৌন্দর্যের দিকে আহবান করা। তাকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া, সুযোগ হলেই তার কাছে ইসলামের স্বরূপ তুলে ধরা; যদি তার কাছে ইসলামী জ্ঞান থাকে। কারণ এটি হচ্ছে তার স্বদেশির প্রতি কৃত সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এবং তার সমাজে বসবাসকারী অন্য ইহুদি-খ্রিষ্টান ও মুশরিকদের প্রতি কৃত সবচেয়ে বড় সদাচরণ। এর সপক্ষে দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: ‘যে লোক কোন সৎ কাজের পথ দেখায়, তার জন্য উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে।’ এছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন খাইবারে প্রেরণ করছিলেন এবং ইহুদিদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন তখন তিনি তাকে বলেছিলেন: ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে হেদায়াত দেওয়া তোমার জন্য লাল উট থেকে উত্তম।’ তিনি আরো বলেন: ‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না।’
দুই
তার প্রতি জুলুম না করা। না তার জানের ক্ষেত্রে, না তার সম্পদের ক্ষেত্রে, আর না তার ইজ্জতের ক্ষেত্রে। যদি সে জিম্মি হয় কিংবা নিরাপত্তাপ্রার্থী কিংবা চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি হয়, তাহলে তার প্রাপ্য অধিকার তাকে প্রদান করবে। তার সম্পদ চুরি করা, খেয়ানত করা ও জালিয়াতি করার মাধ্যমে তার প্রতি জুলুম করা যাবে না। তার শরীরে আঘাত করা কিংবা তাকে হত্যা করার মাধ্যমে তার প্রতি জুলুম করবে না। কারণ সে চুক্তিবদ্ধ, জিম্মি কিংবা নিরাপত্তা প্রার্থী হওয়ার কারণে তাকে সুরক্ষা প্রদান করা হবে।
তিন
তাদের সাথে কেনা-বেচা করা এবং ভাড়া প্রদানের লেনদেন করতে কোনো আপত্তি নেই। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূর্তিপূজক কাফেরদের থেকে কিনেছেন এমনটি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। তিনি ইহুদির কাছ থেকেও কিনেছেন। এটা লেনদেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মারা যান তখন তার বর্ম একজন ইহুদির কাছে পরিবারের খাদ্যের বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রেখেছিলেন।
চার
অমুসলিমকে সে আগে সালাম দিবে না। কিন্তু সে সালাম দিলে উত্তর দিবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে আগ বাড়িয়ে সালাম দিবে না।’ এছাড়াও তিনি বলেন: ‘যখন আহলে-কিতাবরা (ইহুদি-খ্রিষ্টানরা) তোমাদেরকে সালাম দিবে তখন তোমরা বলবে: ওয়া-আলাইকুম।’ সুতরাং একজন মুসলিম কাফেরকে শুরুতে সালাম দিবে না। কিন্তু যদি ইহুদি বা খ্রিষ্টান বা অন্য কেউ আপনাকে সালাম দেয় তাহলে আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত করে বলবেন: ‘ওয়া আলাইকুম’।
এ হচ্ছে মুসলিম ও কাফেরের মধ্যকার অধিকারের বিবরণ। এমন আরও কিছু অধিকার হচ্ছে: উত্তম প্রতিবেশিত্ব। যদি সে আপনার প্রতিবেশী হয়ে থাকে, তাহলে আপনি তার সাথে সদাচরণ করবেন। প্রতিবেশী হিসেবে তাকে কষ্ট দিবেন না। সে দরিদ্র হলে তাকে দান করবেন, উপহার দিবেন। তার উপকার হয় এমন কিছুতে তাকে উপদেশ দিবেন। কারণ এটি তাকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং ইসলামে প্রবেশ করাবে। আর যেহেতু প্রতিবেশীর অধিকার রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘জিবরীল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এত বেশি উপদেশ দিতেন যে আমার মনে হয় যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন।’ [হাদীসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিম একমত] প্রতিবেশী যদি কাফের হয় তাহলে তার প্রতিবেশিত্বের হক থাকবে। আর যদি নিকটাত্মীয় ও কাফের হয় তাহলে তার দুটি হক থাকবে: প্রতিবেশিত্বের হক ও আত্মীয়তার হক।
প্রতিবেশীর অন্যতম অধিকার হলো সে যদি দরিদ্র হয় তাহলে তার প্রতি দান-সদকা করা।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে: আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মক্কাবাসীর যখন সন্ধি চলমান, তখন তার মা সাহায্যপ্রার্থী হয়ে তার কাছে আসেন। আসমা তখন তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: ‘তুমি তার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করো।’
তবে তাদের উৎসবে কোনো মুসলিম অংশগ্রহণ করে উ্ৎসব পালন করতে পারবে না। কিন্তু তাদের মাঝে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাকে সান্ত্বনা প্রদান করতে সমস্যা নেই। সান্ত্বনা হিসেবে তাদেরকে বলবে: ‘আল্লাহ আপনাদের বিপদ কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দান করুন। আপনাকে উত্তম বদলা দান করুন।’
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব