ইবাদত © সংগৃহীত
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে যেমন আনন্দের মুহূর্ত আসে, তেমনি আসে নানান ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় এই সমস্যাগুলো আমাদের বিচলিত করে তোলে, অস্থিরতায় ভোগায়। এতে করে জীবনের প্রতি এক ধরনের হতাশা ও বিষণ্ন সৃষ্টি হয়। অথচ ইসলাম আমাদের এমন কিছু সহজ আমল শিখিয়েছে যা করলে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পাশাপাশি মন শান্ত ও স্থির হয়, হৃদয় প্রশান্তি আসে এবং জীবনের প্রতিটি প্রতিকূলতাকেও সহজ মনে হয়।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য ৫টি গুরুত্বপূর্ণ আমল নিচে তুলে ধরা হলো:
যিকির ও তাসবীহ পাঠ:
আল্লাহর যিকির ও তাসবীহ পাঠে মন শান্ত হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের সূরা রাদ-এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, তারাই এ ধরনের লোক যারা (এ নবীর দাওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। সাবধান হয়ে যাও। আল্লাহর স্মরণই হচ্ছে এমন জিনিস যার সাহায্যে চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। রাসূল (সা:) বলেছেন, যিকির হৃদয়কে জীবিত করে এবং উদ্বেগ দূর করে। (সহিহ মুসলিম)।
বিশেষ করে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ', 'সুবহানাল্লাহ', 'আল হামদুলিল্লাহ', 'আল্লাহু আকবর' ইত্যাদি যিকির পাঠ করার মাধ্যমে মানুষের মন শান্ত থাকে।
নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা:
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার হৃদয়ে কোরআনের কিছুই নেই সে বর্জিত ঘরের মতো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৩)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে এক উপদেশ, অন্তরের রোগব্যাধির উপশম এবং মুমিনদের পক্ষে হেদায়াত ও রহমত।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৭)
দোয়া করা:
দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) কাছেই আছি। যখন কোনো বান্দা আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই। (সুরা বাকারা : ১৮৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য এই দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়াল আজাজি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজালি।’ (বোখারি : ২৮২৯)
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের নিপীড়ন থেকে। রাসূল সা: প্রতি ফরজ সালাত শেষে অন্যান্য দোয়ার সাথে এই দোয়াটিও করতেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ:
সমস্যার দিকে নয়, নেয়ামতের দিকে তাকালে মন হালকা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন, তা দিয়েছেন। আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুনে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৪)। আল্লাহ তায়ালা যা দান করেছেন তা নেয়ামত হিসেবে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং স্মরণ করা। আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন তা অনেককেই দেননি এটা ভেবে শুকরিয়া আদায় করা। সূরা আলে ইমরানের ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকে: ‘হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের সোজা পথে চালিয়েছো তখন আর আমাদের অন্তরকে বক্রতায় আচ্ছন্ন করে দিয়ো না, তোমার দান ভাণ্ডার থেকে আমাদের জন্য রহমত দান করো কেননা তুমিই আসল দাতা।’ এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শান্তি ও সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
ইখলাস:
মানসিক শান্তির অন্যতম রহস্য হলো ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। মানুষ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে এবং বিনিময়ে কারও প্রশংসা আশা করে না, তখন তার অস্থিরতা কমে যায়। কারণ সে জানে, প্রতিদান দেবে একমাত্র আল্লাহই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তাদের কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হলো সঠিক দ্বীন। (সুরা বাইয়্যেনাহ: ৫)
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা:
যে বান্দা আল্লাহর ওপর ভরসা করতে জানে, তার অন্তরে অস্থিরতা কখনো জায়গা পায় না। কারণ সে জানে তার বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষামাত্র। যা তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের বেশি বেশি করে থাকেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) থেকে শুরু করে সাহাবায়ে কেরাম— সবাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে বিপদে শান্তি পেয়েছেন। (সুরা আলে ইমরান: ১৭৩-১৭৪)।
ধৈর্য ধরা:
ধৈর্যশীলরা কখনো পরাজিত হয় না। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা: ১৫৩)।