খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় © টিডিসি সম্পাদিত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) আজ ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় একটি শক্তিশালী ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
১৯৮৭ সালে সরকারি গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
৩৫ বছর পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আজ দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় একটি শক্তিশালী ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এখানে রয়েছে ৮টি স্কুল, ১টি ইনস্টিটিউট, ২৯টি ডিসিপ্লিন এবং ৭,৫০০-এর বেশি শিক্ষার্থী। এটি দেশের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, ফলে ক্যাম্পাসে একটি শান্ত, সুশৃঙ্খল ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪ তলা বাড়িয়ে হয়েছে সাত, ‘অতি ঝুঁকি’ নিয়েই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বাস এই ভবনে
গবেষণার ক্ষেত্রেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, আরবান প্ল্যানিং, মেরিন রিসোর্স, ব্যবসায় শিক্ষা, ফোকলোর ও ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য নিয়ে পরিচালিত গবেষণা জাতীয় নীতিনির্ধারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বেলা ১১টায় সাংবাদিক লিয়াকত আলী অডিটোরিয়ামে মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কৃতী শিক্ষার্থী ও সংগঠনসমূহকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। এরপর ‘উদ্যম বাংলা’ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন বিভাগ ও ডিসিপ্লিনের অর্জন এবং আগামী বছরের পরিকল্পনা নিয়ে ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হবে।
বাদ জোহরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসনিক ভবনের মসজিদে দোয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাসে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। মেইন গেট থেকে শুরু করে আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ আলোকিত করে তোলা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা, গবেষণা ও দেশগঠনের লক্ষ্য নিয়ে একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষা ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে এটি দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস এবং গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও মানবিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমি এই ৩৫ বছরের পথচলায় সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী।’