অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ ফিরোজ হাসান © সংগৃহীত
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মোহাম্মদ ফিরোজ হাসানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মোহাম্মদ ফিরোজ হাসান পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের গড়পড়তা নম্বর দেন। এ ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়রানির পাশাপাশি নারীবিদ্বেষী আচরণও করেন তিনি। একই সাথে হল টিউটর থাকাকালে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করতেন বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। পরীক্ষা চলাকালীন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসে জানালে ফিরোজ স্যার, রাসেল স্যার এবং পরে ডিন স্যার এসে আমাকে অফিসে নিয়ে যান। ফিরোজ স্যার আমাকে বিশ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পরে পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলেন। আমি স্যারদের জানাই, আমার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, ডাক্তার বলেছেন ব্যথা বেশি হলে ইনজেকশন দিতে হবে। তখন ফিরোজ স্যার বলেন, তুমি ইনজেকশন দিয়ে কেন পরীক্ষায় আসোনি?
তিনি আরও জানান, ডিন স্যার আমাকে আশ্বস্ত করেন যে যদি পরীক্ষা দিতে পারি তবে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। কিছুক্ষণ পর মেডিকেলে নেওয়ার সময় আমি আবার ডিন স্যারকে বলি, ইমপ্রুভ পরীক্ষার সময় যেন আমাকে ওই কোর্সে সুযোগ দেওয়া হয়। ডিন স্যার সম্মতি দিয়ে ফিরোজ স্যারকে নির্দেশ দেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু ফিরোজ স্যার তখন বলেন, আমি ওকে চিনি, আমার কোর্সে আছে। ইনজেকশন দিয়ে এলে পরীক্ষা দিতে পারবে। অথচ মেডিকেলে গিয়ে আমাকে একসঙ্গে তিনটি ইনজেকশন দিতে হয় এবং বিশ্রামে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমার প্রশ্ন হলো এভাবে তিনটি ইনজেকশন দেওয়ার পর কি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব? এ সেমিস্টারে আমি দুটি পরীক্ষা দিতে পারিনি, আরেকটিতে অংশ নিয়েও শেষ করতে পারিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সায়মা তাসনিম বলেন, একবার আমি কুইজে আইডি লিখতে ভুলে যাই। পরে অনুরোধ করলেও উনি আইডি রাখেননি। বরং বলেছেন, অন্যদের আইডি নিতে হলে ওই বেয়াদব মেয়ের আইডিও নিতে হবে। আমি একা নই, আরও অনেক বান্ধবী এভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। ক্লাসে প্রায়ই মেয়েদের নিয়ে কটুক্তি করতেন।
পারভেজ হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সেকশনে সবাইকে কম নম্বর দিতেন। সর্বোচ্চ ৩.৫ পেলেও বেশিরভাগকেই ৩ এর নিচে দিয়েছেন। অথচ ক্লাসে আমার রিভিউ পেপারের প্রশংসা করেছিলেন, পরে রেজাল্টে দিলেন ২.৭৫। একেকবার একেক নিয়ম বানাতেন, আবার বাতিল করতেন। সানজিদা ইসলাম স্মৃতি বলেন, মেয়েদের তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। এমনকি ইচ্ছা করে ইজতেমার মধ্যে দুটি কুইজ নিয়েছিলেন।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সায়েদ হাসান ফয়সাল বলেন, ২ নম্বর হলে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার আচরণ শিক্ষকসুলভ ছিল না। শিক্ষার্থীদের তিনি সবসময় অপমান করতেন, সম্মান দিতেন না। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তামান্না ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কম্পাইলার ডিজাইন পরীক্ষার আগে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। পাঁচটি ইনজেকশন দেওয়ার পরও উন্নয়নমূলক পরীক্ষার আবেদন করলে উনি আমাকে টানা তিন দিন ডেস্কের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। বলেন, আমি নাকি পরীক্ষা দিতে পারতাম। স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিস পর্যন্ত গিয়েও আমি কেঁদেছি। পরে অনুমতি পেলেও অকারণে প্রচণ্ড হয়রানির শিকার হই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র লেকচারার মোহাম্মদ ফিরোজ হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগের বিষয় ডিপার্টমেন্ট দেখছে। আমি এসব অভিযোগের সাথে একমত নই। রেজাল্ট দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা যখন তাদের মন মতো ফলাফল পায়নি, তখন তারা এসব অভিযোগ আনছে। কিন্তু এমন কোনো ইস্যু নেই।
এ বিষয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ রাশেদ হায়দার নূরী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি ও প্রশাসন কাজ করছে। তারা বিষয়টি দেখবেন।