শেষ অধ্যায়টা কি লেখা হবে ক্যাম্প ন্যুয়ের সবুজ গালিচায়?

০৬ জুলাই ২০২৫, ০১:৩১ PM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৫ PM
লিওনেল মেসি

লিওনেল মেসি © ফাইল ছবি

‘তুমি নিজেকে হারাওনি, তুমি নিজের ছায়ার ভেতরেই চাপা পড়েছ।’ এটি কোনো কালজয়ী সংলাপ নয়। তবুও আমরা অনেক সময়ই স্নেহের মানুষটিকে উৎসাহ কিংবা অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু একটা বলতে এমনই কিছু বলে থাকি। তবে এ হার কখনোই পরাজয়ের কোনো ইঙ্গিত নয়, বরং নিজেদের ‘আসল অস্তিত্ব’কে উপেক্ষা করে অনন্য স্বরূপ থেকে দূরে সরে যাওয়ার বাস্তুশাস্ত্রও বটে। সহজ করে বললে, নিজেরা হারিনি, বরং আমরা আমাদের আসল ‘আমি’ থেকে বিচ্যুত হয়েছি, এমনই বার্তা দেয়।

তবে এ সংলাপের মূল মেসেজ কোনো না কোনোভাবে অবশ্য লিওনেল মেসির সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিলে যায়।

গত সপ্তাহে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ইন্টার মায়ামি। কিন্তু এক ‘হালি’ গোল হজম করে মাঠ ছাড়ে মেজর লিগ সকারের ক্লাবটি। সেদিন নিজের সেরাটা নিগড়ে দিয়েই লড়ছিলেন বয়সের ভারে প্রায় নুইয়ে পড়া আর্জেন্টাইন ক্ষুদ্রে জাদুকর। তবুও তার লড়াইয়ের ধাঁচ বরাবরই ইঙ্গিত করছিল, নিজের আপন সত্ত্বা থেকে বিচ্যুত হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার।

অবশ্য এখনো বেশ চমকপ্রদ আর জাদুকরী মুহূর্তে সমর্থকদের মাতিয়ে রাখতে পারেন মেসি। সেদিন লুইস সুয়ারেজকে এমনই এক দুর্দান্ত নৈপুণ্যে সাজানো পাস দিয়েছিলেন এই লিটল ম্যাজেশিয়ান। দেখলে যে কেউ বলে উঠবেন, এ তো সেই পুরোনো মেসি! তবে প্রতিপক্ষ যখন বিশ্ব সেরাদের কেউ, তখন মেসির এতটুকু পারফরম্যান্স যথেষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: রাবির ৭৩ বছর: শিক্ষা-গবেষণা-র‌্যাঙ্কিংয়ে সফলতা থাকলেও কাটেনি সংকট

অবশ্য সেদিন ম্যাচ শেষে মেসির প্রতিক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট শান্ত ও সংযত। মেসির ভাষ্যমতে, ‘ওরা (পিএসজি) দুর্দান্ত দল, ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি, ক্লাব বিশ্বকাপে আমরা অন্তত একটি ভালো ছাপ রাখতে পেরেছি।’

এরপরই প্রশ্ন উঠে, এমন ‘ভালো ছাপ’ রাখাই কি এখন মেসির ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত লক্ষ্য? যদি বলি হ্যাঁ; কারণ, মায়ামির পথে-প্রান্তরে হয়তো স্বস্তি আর স্থিতির পুরোটাই পাচ্ছেন মেসি। কিন্তু তবুও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। কোথায় হারাল মেসির সেই জৌলুস, গোল করার তীব্র খিদে কিংবা আগ্রাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা তাকে কালের বিবর্তনে ‘কিংবদন্তি’ বানিয়েছে। নাকি ‘স্রোতে ভেসে যাচ্ছি কই!’ অবস্থা এখন আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের।

প্রশ্ন আর চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্যেই নতুন করে গুঞ্জন আবার ইউরোপে ফিরছেন মেসি। ইএসপিএন আর্জেন্টিনার সাংবাদিক এস্তেবান এদুল জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে ইন্টার মায়ামির সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পর ইউরোপের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগে ফেরার কথা ভাবতে পারেন মেসি। সেটি হতে পারে তার পুরোনো ঘর, বার্সেলোনা। উদ্দেশ্য—২০২৬ বিশ্বকাপের আগে নিজেকে আরেকবার শাণিয়ে নেওয়া।

তবে বিষয়টি এতটা সরল নয়; বরং জটিল, এমনকি ঘোলাটেও। মেসির ঘনিষ্ঠ স্প্যানিশ ফুটবল বিশ্লেষক গিয়েম বালাগে বিষয়টির ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘মেসি নিজেই জানেন না, ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না। আপাতত ধাপে ধাপে এগোচ্ছেন। সবাই চায় তাকে আমেরিকায় বিশ্বকাপ খেলতে দেখতে, কিন্তু কাউকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাননি।’

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক থেকে জুলাইয়ের শেষ কারণ— ‘প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি’

অন্যদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টার মায়ামির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের ব্যাপারে আগ্রহী মেসি এবং আলোচনাও ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে।

তবে বাস্তবতা হলো আগামী বৈশ্বিক মহারণে মেসি খেললে এবং বড় ভূমিকা রাখতে চাইলে এমএলএসে থাকাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ, ইউরোপের ক্লাব আর প্রতিযোগিতা থেকে বেশ পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লিগটি কিংবা ক্লাবটি।

ক্লাব বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখায় মায়ামি। মেসির অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে পোর্তোকে হারিয়ে ইতিহাসও গড়ে। এ ছাড়া আল আহলি আর পালমেইরাসের সঙ্গে ড্রয়ে শেষ ষোলোয় উঠে তারা, যা এমএলএসের ইতিহাসেই প্রথম। কিন্তু পিএসজির বিপক্ষে নিজেদের আসল রূপ দেখায় দলটি। ম্যাচের প্রথমার্ধে এক হালি গোল হজম করে বসে। মনে হচ্ছিল, অসহায় আত্মসমর্পণ করছে মেসির দল। শেষমেশ ‘মান বাঁচানো’ পরাজয় নিয়েই মাঠে ছেড়েছিল মায়ামি।

ম্যাচ শেষে মেসির সাবেক সতীর্থ জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বলেই উঠেন, ‘১০টা মূর্তি সঙ্গে নিয়ে খেলছে মেসি! ওর সতীর্থদের দেখে মনে হয়েছে যেন সবাই সিমেন্টের বস্তা নিয়ে দৌড়াচ্ছে।’

অবশ্য মেসি ছাড়াও মায়ামিতে লুইস সুয়ারেজ, জর্দি আলবা, সের্হিও বুস্কেতসরা রয়েছেন। পাশাপাশি কোচ হাভিয়ের মাচেরানোও আছেন। কিন্তু এর বাইরে চোখে পড়ার মত আর কিচ্ছু নেই। সেই দুর্বলতার সুযোগই নেয় ফরাসি জায়ান্টরা।

আরও পড়ুন: সেদিন ‘হুইলচেয়ারের বীর’ ফাদি আবু সালাহ’র মতো রাজপথে নেমে এসেছিল হাসিবরা

সেই হিসেবে, ইব্রার বক্তব্যটা আসলে অপ্রিয় হলেও সত্যি—বাস্তবতাকে ঠিকই ধরেছেন তিনি। মেসি আজ যেন সীমাবদ্ধ এক পরিসরে আটকে থাকা অতল প্রতিভা। তাকে ঘিরে মায়ামির দলটি অনেকটাই যেন অপটু একদল শিশুর মত। যারা মেসির কৌশল বোঝে না, গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। আর আধুনিক ফুটবল ব্যক্তিনির্ভর নয়; বরং সম্মিলিত শক্তি ছাড়া বিজয় দূরধিগম্য।

সুতরাং পুরোনো টগবগে মেসিকে ফেরানোর সহজ ও একমাত্র উপায়—সম্মিলিত ও প্রতিযোগিতামূলক একটি দলের ছায়া। যারা কেবল মেসিনির্ভর হবে না; বরং মেসির তালে তালে নিজেদেরও মেলে ধরবে। মেসির রং আর ঢঙে নিজেদেরও আলোয় আলোয় ভরিয়ে তুলবে। 

এখন সিদ্ধান্তটা কেবলই বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। তিনি এখন কঠিন দুটি সিঁড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে; যার এক পাশে মায়ামির অঢেল প্রশান্তি, অন্য পাশে ইউরোপের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ঝুঁকি। তবে চাবি মেসির হাতেই, সিদ্ধান্তও তারই!

দেশজুড়ে তীব্র শীতে কষ্টে মানুষ, শৈত্যপ্রবাহ থাকবে কতদিন?
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
ঝালকাঠিতে আ. লীগ নেতাসহ ২৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নির্বাচন নিয়ে জোটের সিদ্ধান্তকেই আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মেন…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে পরিবার
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
অত্যন্ত সংকটময় সময় অতিক্রম করছেন বেগম খালেদা জিয়া: ডা. জাহিদ
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সহকর্মীর গুলিতে আনসার সদস্য নিহত, অভিযুক্ত আটক
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫