রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

জুনেই মেয়াদ শেষ হলেও এখনো ভিত্তিও দাঁড়ায়নি বহুতল ভবনের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবন  © টিডিসি ফটো

জুনেই মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নমূলক তিন প্রকল্প। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালকের বলছেন, ড্রয়িং- ডিজাইন পেতে দেরি হওয়া, করোনার প্রভাব এবং শ্রমিক স্বল্পতার কারণে এসব প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহৎ তিন প্রকল্পের মধ্যে ১০তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল এবং ২০তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবনের ভিত্তির কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়নি। মাঝে মাঝে চললেও এর কাজ বন্ধ ছিল বেশির ভাগ সময়। তা ছাড়া এখনও ধীর গতিতে চলছে ঢালাইয়ের কাজ।

কামারুজ্জামান হল ও শেখ হাসিনা হলের ভিত্তির কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে বিজ্ঞান ভবনে ভিত্তির কাজ অনেকটা বাকি রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের সাড়ে পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে কোনো ভবনে কলাম উঠেনি।  এসব প্রকল্পের মেয়াদ চলতি জুনে শেষ হচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ এই প্রকল্পগুলো। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৩৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এর আওতায় ওই তিন ভবন ছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং আনুষাঙ্গিক খরচের দিক বিবেচনায় প্রকল্পের সংশোধিত বাজেট পাশ হয় । ফলে ২০১৪ সালের রেট শিডিউলের পরিবর্তনে ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুসারে ২০১৯ সালে ৫১০ কোটি  ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক। এতে বাড়তি অর্থ লাগে ১৪৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধন) শীর্ষক প্রকল্পের অন্তর্গত ১০তলা বিশিষ্ট ভবন শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সাড়ে পাঁচ বছর (জানুয়ারী ২০১৭ - জুন ২০২২) মেয়াদী এ প্রকল্প। ভবনটি নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিস্টেম আর্কিটেকস। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ঢাকার দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন লিমিটেড। 

এদিকে একই সময়ের মধ্যে নির্মিত প্রকল্পের অন্তর্গত ১০তলা বিশিষ্ট ভবন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল ও ২০তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ঢাকার মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। 

নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার শাহরিয়ার রহমান বলেন, মূলত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের রেট শিডিউলে ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের ডিজাইন ও ড্রয়িং হাতে পাই। ততদিনে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই প্রকল্পের বাজেট ২০১৮ সালের রেট শিডিউলে করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। 

তিনি বলেন, প্রকল্পে নতুন রেট শিডিউল অনুসারে মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট পাশ করতে প্রায় ২০২০ সাল শেষ হয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে নতুন রেট শিডিউলে টেন্ডার দেয়া হয়। এরমধ্যে দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল।

পরিচালক বলেন, ২০২১ সালের মাঝ থেকে কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রক্রিয়াগত কিছু কারণে কাজ ধীরগতি হয়। কেননা মন্ত্রনালয়ে ৩০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেয় না। কিন্তু ২০ তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবন প্রকল্প ১০০ কোটি টাকা। সেটা জাতীয় ক্রয় কমিটি থেকে অনুমোদন পেতে প্রায় ২০২১ সাল শেষ হয়ে গেছে। মূলত ৭-৮ মাস একটানা কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন: শিক্ষকের কোলে সন্তান, হলে পরীক্ষা দিলেন ছাত্রী

কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে এ পরিচালক  বলেন, সময়ের তুলনায় কাজের অগ্রগতি ভালোই।  ২০তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবনসহ ১০তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল ও শহীদ কামারুজ্জামান হলের প্রায় ২০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তা ছাড়া সার্বিক কাজের প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। 

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ পরিচালক।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া বিধি-নিষেধের ফলে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কাঁচা মাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। তাই কাজের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ে কাঁচা মাল পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। তা ছাড়া ধানের মৌসুম চলছে। অনেক শ্রমিক বাড়িতে থাকায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা কমেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মূলত বাজেট পাস হতে সময় লাগায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। তবুও দ্রুত কাজ করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানানো হচ্ছে। তা ছাড়া কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কাজের অগ্রগতি কমে যাচ্ছে।

উপাচার্য বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই করোনার প্রকোপ বেড়ে গেল। ফলে কাজ বন্ধ ছিল। তা ছাড়া দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষার্থী হিমেলের মৃত্যু সকলকে ব্যথিত করেছে। যার জন্য কাজ অনেকদিন বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের কাঁচামাল সরবরাহের কিছু বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল সরবরাহ কম হওয়ায় কাজের অগ্রগতি কমে যাচ্ছে। যদিও কাজগুলো সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুতই এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। তাহলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট কিছুটা হ্রাস পাবে এবং একাডেমিক অগ্রগতি বৃদ্ধি পাবে।


সর্বশেষ সংবাদ