স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

স্বাধীনতা রৌদ্রতপ্ত খোলা প্রান্তরে এক বট গাছ, সেখানে আমার বিশ্রাম

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা
স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা   © টিডিসি ফটো

গত শনিবার (২৬ মার্চ) দেশব্যাপী স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। এদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্ণ হয়। স্বাধীনতার এ মাসটি বাঙালি জাতির কাছে অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ মুক্তিকামী জনগোষ্ঠী পাকিস্তান রাষ্ট্রযন্ত্রের শৃঙ্খল ছুড়ে ফেলে স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বস্তুত বাংলাদেশকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।

দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের ফসল এ স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মাস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা যোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটার বর্ণচ্ছটায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ, সাহস যোগায় নতুন শপথ নেয়ার। আর এ কারণেই স্বাধীনতা মাসের তাৎপর্য এত বেশি। মহান এই স্বাধীনতার মাসে তরুণদের ভাবনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তাদের কথাগুলো শুনেছেন রিফাত হক

তানভীর হাসান শান্ত
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

স্বাধীনতা রক্তের কণিকায় মিশে থাকুক আমৃত্যু
স্বাধীনতার মাস আমাদের প্রাণের অস্তিত্বের জানান দেয়। দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা, আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন, আমাদের পরিচয়। মহান স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে সেই চেতনায় আগামীর সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে।

এ দেশ আমার, এ স্বাধীনতা আমার। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর তীব্র অহংকার আমার। আমি তরুণ, আমিই আমার দেশের প্রতিনিধিত্বকারী, আমিই আমার জাতিকে সকল পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবো বারংবার। এ স্বাধীনতা আমার রক্তের কণিকায় মিশে থাকুক আমৃত্যু। এটাই স্বাধীনতা দিবসে আমার হৃদয়ের চাওয়া পাওয়ার সম্মিলন।

আরেফিন আলভী
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ

স্বাধীনতা একটা অনুভূতি
স্বাধীনতা মানে নিজের অস্তিত্বের অনুভূতি। একই ভূখণ্ডে ভালোবাসার মানুষজনের সঙ্গে পরম মমতায় থাকতে পারা। নিজের ভুখণ্ডের মাটির গন্ধের সঙ্গে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়ার সূক্ষ্ম টান অনুভব করা। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে থেকেই আমরা লড়াই করে যাই নিজেদের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এই অন্যায়, নিষ্পেষণ থেকে নিজের অস্তিত্বকে আবিষ্কার করতে ২৬ মার্চের চেতনায় স্বাধীনতা শব্দটি আমরা ব্যবহার করছি।

আরও পড়ুন: সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত ২৬ মার্চ

স্বাধীনতার ৫১ বছর পর ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্বপ্নের পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্পের অগ্রগতি, মেট্রোরেলের মতো সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখায়। সরকারের কাজে সহায়তার মাধ্যমে এই সোনার বাংলাকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্নের সোনার বাংলা করতে চাই।

তানভীরা ইয়াসমিন অনু
ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

স্বাধীনতার মানে মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন
বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করে স্বাধীনতার সেই রক্তিম সূর্য না দেখা এই আমার কাছে স্বাধীনতা বলতে বোঝায়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র তোরণের পাশের ফুটপাতে শুয়ে থাকা ওই অবুঝ শিশুটির মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন।

ভীষণ-২১ এর একটি উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বলবে। পেপার-পত্রিকায় এসব নিয়ে হাজারো রচনাও রচিত হয়। ঠিক এই সময়ে আমার মনে পড়ে যায় তাবিব মাহমুদের গানের সেই বিখ্যাত লাইনগুলো - ‘শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে! আমাদের ঘর নাই সেকথা কে বলবে?’ আর তাই আজ আমার কাছে স্বাধীনতা মানে রানা-রাজুর মতো পথশিশুদের শিক্ষার আলো জ্বালবার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা।

শাহিদ রহমান রাহাত
বাংলা বিভাগ

স্বাধীনতা রৌদ্রতপ্ত খোলা প্রান্তরে এক বট গাছ, সেখানে আমার বিশ্রাম
স্বাধীনতা আমার অনেক সাধের। আমি যে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করি এ আমার বড় পাওয়া। বড় গলায় বলতে পারি আমি স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করি। আমার ঘর আমার, আমর দেশ আমার। আমি অবাধ, আমি বাঁধাহীন। এমনটিই তো হবার কথা। শোষণ বঞ্চনার হাত থেকে রেহাই মিলেছে এ তো কম সৌভাগ্যের কথা নয়।

তবে স্বাধীনতার একান্ন বছর পরও আমরা কি সেই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি? শোষকের হাত থেকে রেহাই মিলেছে ঠিকই তবে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমার দেশের পথে পথে গৃহহীন মানুষের বিচরণ। রাতের শহরের ফুটপাথ দেখলে আমার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর অশালীন ব্যবহার শুনলে আমার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবুও স্বাধীনতা যেন রৌদ্রতপ্ত খোলা প্রান্তরের মাঝে একখানি বট গাছ। সেখানে আমার বিশ্রাম।

শেখ রাফিদ করিম
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগ

তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত হওয়া সহজ ছিল না
স্বাধীনতার মাসে ব্যক্তি হিসেবে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতার স্বাদ রাষ্ট্রের কাছ থেকে এখনও হয়তো আমরা সেভাবে পাচ্ছি না। তবে বেশ কিছু মৌলিক জায়গাগুলোতে অসাধারণ অগ্ৰগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। অর্থনীতি, বিদ্যুৎখাত, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বেশ কিছু জায়গায় দারুন সাফল্য অর্জন, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত হওয়ার এই পথটা সহজ ছিল না।

তরুণ প্রজন্মের একজন সদস্য হিসেবে দেশের এই অগ্ৰগতি দেশ নিয়ে আমার মনে আশার সঞ্চার ঘটায়। তাই স্বাধীনতার মাসে প্রত্যেকের প্রত্যাশা হোক সকল অশুভ শক্তি বাংলাদেশ থেকে মুছে যাক। আনন্দে মুখরিত হোক বাংলার আকাশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক অদম্য গতিতে।


সর্বশেষ সংবাদ