সোমবার ঢাবির মঞ্চে ‘ওয়েটিং ফর গডো’

ওয়েটিং ফর গডো নাটকের দৃশ্য
ওয়েটিং ফর গডো নাটকের দৃশ্য  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবার মঞ্চে নিয়ে আসছে স্যামুয়েল বেকেট রচিত নাটক ‘ওয়েটিং ফর গডো।’

দেশবরেণ্য নির্দেশক এবং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীন- এর নির্দেশনায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের অভিনয়ে আগামী ১৪, ১৫, ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যমন্ডল মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭ টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটি।

পাশাপাশি, ‘ওয়েটিং ফর গডো’ নাটকটি ১৮, ১৯, ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চাস্থ হবে। ‘ওয়েটিং ফর গডো’ নাটকটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন আসাদুল ইসলাম। নাটকটিতে সহযোগী নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে বিভাগের শিক্ষক নাভেদ রহমান।

আরও পড়ুন: বিনাশর্তে ২৪ ঘণ্টা ‘হাফ পাস’ চায় শিক্ষার্থীরা, সড়ক অবরোধ

নাটকে অভিনয় করেছে আহম্মেদ রাউফুর রহিম, রুদ্র সাওজাল, ফারজিয়া হক ফারিন, মোসা. সায়মা আক্তার, সৈয়দ আল মেহেদী হাসান, সোনিয়া পারভীন অনা, মো. আখলাকুজ্জামান অনিক, অদিতি চ্যাটার্জী।

নাটকে মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছে নাটকের সার্বিক সমন্বয়ক এবং বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন, দেহবিন্যাস ও চলন অমিত চৌধুরী, পোশাক পরিকল্পনা করেছে ওয়াহীদা মল্লিক, কাজী তামান্না হক সিগমা, রূপসজ্জা পরিকল্পনা করেছে রহমত আলী।

পাশাপাশি, নাটকের দ্রব্য পরিকল্পনা করেছে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা, আলোক প্রক্ষেপণ করেছে তানভীর নাহিদ খান, নাভেদ রহমান, আশরাফুল ইসলাম সায়ান, সংগীত প্রয়োগ করেছে ওয়াজেদ শাহরিয়ার হাশমী, প্রণব রঞ্জন বালা, পোস্টার ডিজাইন করেছে দেবাশীষ কুমার দে প্রশান্ত এবং প্রচার ও প্রকাশনা করেছে তানভীর নাহিদ খান, আহসান খান।

নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক বলেন, গত শতকের গুরুত্বপূর্ণ নাটকগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত ওয়েটিং ফর গডো। নাটকের অন্যতম দুই চরিত্র ভ্লাদিমির ও এস্ট্রাগন যেমনি অবিচলতার সাথে দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি ভাঙার ‘আশা’য় অর্থ, অস্তিত্ব, স্বভাব ও উদ্দেশ্যের সহজাত অনুসরণ করে, একুশ শতকে এসেও আমরা সম্ভবত তেমনি ‘অভ্যাস’ ও ‘অপেক্ষা’র ক্ষয়ে যাওয়া অর্থহীনতাকে প্রতিনিয়ত বয়ে চলি।

তিনি আরও বলেন, ভ্লাদিমির ও এস্ট্রাগন উভয়েই অনন্তকালের কষ্টকর ধরাবাঁধা রুটিন থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। যদিও আশাহীনতার নিরবধি প্রবাহের মাঝেও আশাকে আঁকড়ে ধরে থাকাই যেন তাদের বেঁচে থাকতে সক্ষম করে এবং মানবিক অবস্থার একটি কালজয়ী রূপক হিসেবে দৃশ্যমান করে।

বর্তমান সময়ে নাটকটির ‘প্রসঙ্গিকতা’ প্রসঙ্গে নাটকটির নির্দোশক বলেন, ‘ওয়েটিং ফর গডো’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এমন এক সময়ে লেখা হয়েছে যখন মানুষ পৃথিবীতে তার অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বর্তমানকালেও এই প্রশ্নটি অমূলক নয়। এমন ভাবনা থেকেই ওয়েটিং ফর গডো নাট্য নির্মাণ প্রয়াস।

প্রযোজনাটিতে ‘অভিনয়’ প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশক বলেন, ‘ওয়েটিং ফর গডো মহড়ার কর্মপ্রক্রিয়ায় নিবিড় অভিনয় অনুশীলন গুরুত্ব পেয়েছে।অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ দর্শক হিসেবে নিরন্তর পাণ্ডুলিপি পাঠ করেছে এবং দর্শক হিসেবেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে। প্রতিনিয়ত পাঠ করার মাধ্যমে অভিনেতা তাঁর চিন্তা ও মননশীলতাকে শাণিত করেছে। পাঠ, ভাবনা, যুক্তি, ব্যাখ্যা, কল্পনা, অনুশীলনের সৃজনশীল কর্মপ্রক্রিয়া দ্বারা নির্মিত হয়েছে প্রযোজনা ওয়েটিং ফর গডো।

আরও পড়ুন: ঢাবির ‘ক’ ইউনিটে যে বিভাগগুলো জনপ্রিয়

নাটকের অনুবাদক আসাদুল ইসলাম বলেন, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এই প্রযোজনায় অনুবাদক সিহেবে শরিক হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। একাডেমিক জায়গা থেকে নাটক মঞ্চায়নের সাথে যুক্ত হওয়া আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তাই বিভাগের চেয়ারম্যানসহ সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

নাটকের নির্যাসঃ মানুষের শ্রেণিসংগ্রাম, নানাবিধ বিভেদ, শোষণের বিরুদ্ধে জীবনসংগ্রাম, শূন্যতাবোধ, অন্তহীন ক্লান্তির প্রেক্ষাপটে রচিত স্যামুয়েল বেকেটের নাটক ওয়েটিং ফর গডো। বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদীদের ক্ষমতার অপব্যবহার, দম্ভ ও দাপটের বিরুদ্ধে জনমানুষের অসহায়ত্ব ও টিকে থাকার লড়াইয়ের আখ্যান এই নাটক। যুগ যুগ ধরে চলে আসা মানুষের যন্ত্রণা ও নিপীড়নগাথা নাটকে গোধূলির মতো রূপায়িত। ব্যক্তি এবং সমষ্টির জীবন, অস্তিত্ব ও অস্তিত্বের সঙ্কট, সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের বাসনা আবার সেই বাসনার অর্থহীনতা এই মায়াজালই ওয়েটিং ফর গডো।


সর্বশেষ সংবাদ