ক্যাম্পাসে নবজাতক উদ্ধার হলেই শিক্ষার্থীদের জড়ানো হয় কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত নবজাতক উদ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক কমেন্টের ঝড় বইছে। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের জড়িয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন-দিচ্ছেন কেউ কেউ। অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসে কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতক উদ্ধারের পরও এমন সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে কেন এই সমালোচনার ঝড়? প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানীর কাছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা রুচিশীলতার পরিচয় দেয় না। একজন রুচিশীল মানুষ কখনোই এমন মন্তব্য করতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যারা জানে না; তারাই এ ধরনের মন্তব্য করেছে।

সবাইকে ঢাবি সম্পর্কে জেনে মন্তব্য করার অনুরোধ জানিয়ে প্রক্টর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওপেন এরিয়া। এখানে সবাই যাতায়াত করতে পারে। এছাড়া ভৌগলিকভাবে আমাদের ক্যাম্পাসের অবস্থানটাও দেখতে হবে। আমাদের ক্যাম্পাসের পাশে তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। এখান থেকেও এই ঘটনাগুলো ঘটানো সম্ভব। তবুও মানুষ ঢাবিকেই দোষারোপ করে। আমি সবার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের অনুরোধ করছি।

এর আগে বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই খবর ফলাও করে প্রচার হয়। খবর প্রচারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দায়ী করছেন কেউ কেউ। যদিও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস ও হলগুলো বন্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাবি ক্যাম্পাসের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ফলে এই জায়গাগেুলো থেকে এই ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া শুধু ঢাবি ক্যাম্পাস নয়, যেকোনো ক্যাম্পাসেই নবজাতক উদ্ধারের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জড়ানো একেবারেই মূর্খতার পরিচয়।

শুধু আজকের এই ঘটনাই নয়; সাম্প্রতিক সময়ে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে উদ্ধার হওয়া সব নবজাতকের ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়িয়ে এমন মন্তব্যের অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে যতগুলো নবজাতক মৃত কিংবা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তার একটির সাথেও ঢাবির কোনো শিক্ষার্থী কিংবা কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সাধারণ মানুষের এমন মন্তব্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাবির বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ঘটনা ঘটলেই মানুষ মনে করে এটির সাথে ঢাবির কেউ জড়িত। দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নিয়ে মানুষের এমন কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য চরম হতাশার। যারা এমন মন্তব্য করে তাদের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা করা দরকার বলেও মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাবির ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. ছানোয়ার বলেন, ক্যাম্পাসের মতো উন্মুক্ত স্থানে এ ধরণের ঘটনার দায় নির্দিষ্ট কাউকে দেয়া যাবে না। বহিরাগতরাও এটি করতে পারে। যেহেতু ক্যাম্পাসের দুই পাশে দুটি বড় বড় হাসাপাতাল রয়েছে। সেখান থেকেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বর্তমানে ক্যাম্পাস বন্ধ। বোঝাই যাচ্ছে এটি বহিরাগতদের কাজ।

আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ নিপুন বলেন, মানুষের কতটা অধপতন হলে না জেনে না বুঝে এই ধরনের মন্তব্য করে থাকেন। যারা এমন কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা দরকার।


সর্বশেষ সংবাদ