জাবিতে সেশনজট, মরার ওপর খাঁড়ার ঘা করোনা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একে তো সেশনজট দুর্ভোগ তার পরে আবার শিক্ষার্থীদের ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনা মহামারি। বিগত দুই বছরে কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক ও দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকে। এর আগে বিভিন্ন বিভাগে ছিলো একরকম উত্তরাধিকারী সূত্রে পাওয়া (?) সেশনজট। এরপর বিগত ১৮ মার্চ হতে করোনা মহামারি প্রতিরোধে ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে ক্যারিয়ার ও স্বপ্ন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তরুণ শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও।

এতে মানসিকভাবে দুর্বল ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে অনেকে। কারণ চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আটকে যাওয়াই চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদনও করতে পারছেন না। এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আটকে থাকা চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় অনেকের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান, কারও পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত আবার অনেকের শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়েছে। এমনকি কিছু বিভাগের পরীক্ষা শেষ হলেও ‘মৌখিক ও ল্যাব পরীক্ষা’ রয়েছে বাকি।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস জানায় ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, সরকার ও রাজনীতি, প্রত্নতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৩০টিরও বেশি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান, পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত ও শিক্ষাবর্ষ শেষ এমন অবস্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষাজীবন শেষ হলেও কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পড়ে আছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। আবার অধিকাংশ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়নি স্নাতকোত্তর পরীক্ষা। অথচ এবার নিয়মিত স্নাতকোত্তর ব্যাচ হলো ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৪৫তম আবর্তন। ফলত বেশ কিছু বিভাগে একই সময়ে তিনটি ব্যাচ মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

সেশনজটের বিষয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমাদ উদ্দিন বলেন, ‘এতোদিনে আমাদের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমার এখনো তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাই শুরু হয়নি। পুরো একটি বছর নষ্টের আশঙ্কায় আমার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ক্ষীণ হয়ে আসছে।’

দীর্ঘ সেশনজটে বিপর্যস্ত শিক্ষাজীবন হতাশা ব্যক্ত করে রসায়ন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষ) শিক্ষার্থী শাহদাত হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ করতে পারলেও আমাদের এখনো ল্যাব ও মৌখিক পরীক্ষা হয়নি। ফলে ছয়-সাত মাসের জন্য বিলম্বিত হচ্ছে আমার শিক্ষাবর্ষ। এতে সময়ক্ষেপণের কারণে নিজস্ব ক্যারিয়ার গঠন ও স্বপ্নপূরণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’

পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ৪৫ ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী সিকদার সঞ্চিতা তাসনিম বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর পরই ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেল। এমন অবস্থায় আমরা না স্নাতক শেষ করতে পারছি, না অন্য চাকরিতে আবেদন করতে পারছি। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত আটকে থাকা চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো কর্তৃপক্ষ নেওয়ার ব্যবস্থা করুক। আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি দিলেই এখন তা সম্ভব।’

সবচেয়ে বেশি সেশনজটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা গত এক বছর পার হলেও তাদের তৃতীয় বর্ষের ফল পাননি। অথচ তাদের চতুর্থ বর্ষের কোর্স শেষ। ফলে আটকে আছে অন্যান্য বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা।

দীর্ঘ সেশনজট ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘মহামারি প্রতিরোধে দীর্ঘবন্ধের ফলে বড় রকমের সেশনজটের আশঙ্কা রয়েছে। তা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শীতকালীন ছুটি বাতিল, সাপ্তাহিক বন্ধ দুই দিন থেকে এক দিন করা এবং অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে ক্লাস ও যেসব শিক্ষার্থীর কেবল মৌখিক পরীক্ষা ও গবেষণাপত্রের প্রতিবেদন জমা দেওয়া বাকি রয়েছে তাদের মৌখিক পরীক্ষা ও গবেষণাপত্রের প্রতিবেদন অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডির মৌখিক পরীক্ষাও অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, নিয়মিত পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়া যাবে কিনা তা যাচাই করার জন্য উপ-উপাচার্যকে (শিক্ষা) প্রধান করে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ১৫ দিনের মধ্যে মতামত জানালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ