ডাকসু নির্বাচনে জেতার জন্য প্রার্থীদের জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা কতটা প্রভাব ফেলবে?
- তাওসিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৩ AM , আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৭ AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা পিছিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ কমিটিগুলো এখনো আচরণবিধি প্রণয়ন ও গঠণতন্ত্র সংশোধনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এ কারণে ঈদের আগে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও মার্চে রমজানের কারণে ঈদের পর এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
এই বিলম্বের ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে বাড়তি সময় পাচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে জুলাই অভ্যুত্থানে প্রার্থীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কেএম জুলকার নাঈন মনে করেন, ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের জুলাই অভ্যুত্থানের ভূমিকা বিচার করা উচিৎ।
শিক্ষার্থী ও ছাত্র নেতারা বলছেন, নির্বাচনের ফলাফলে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রভাব থাকবে, তবে সেটি একমাত্র নির্ধারক হবে না। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা প্রার্থীরা কিছুটা সুবিধা পেলেও তাদের ইশতেহার, প্রচারণা কৌশল, ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা, সংগঠনের শক্তি এবং শিক্ষার্থীদের আস্থাভাজন হওয়ার ক্ষমতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
এ শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ ছিল, তখন যারা ন্যায্য দাবির জন্য লড়াই করেছে, তারা নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে কাজ করবেন। তবে শুধু জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা নির্বাচন জয়ের প্রধান শর্ত হবে না। ইশতেহার ও প্রচারণাও বড় ভূমিকা রাখবে।’
শিক্ষার্থী ও ছাত্র নেতারা বলছেন, নির্বাচনের ফলাফলে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রভাব থাকবে, তবে সেটি একমাত্র নির্ধারক হবে না। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা প্রার্থীরা কিছুটা সুবিধা পেলেও তাদের ইশতেহার, প্রচারণা কৌশল, ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা, সংগঠনের শক্তি এবং শিক্ষার্থীদের আস্থাভাজন হওয়ার ক্ষমতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে প্রার্থীদের ভূমিকা শিক্ষার্থীরা বিবেচনায় রাখবে বলে মনে করেন শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘শুধু আন্দোলনে অংশগ্রহণই যথেষ্ট নয়। ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা, আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বিতর্ক মুক্ত থাকা, শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা—এসব বিষয়ও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি অর্পিতা গোলদার বলেন, ‘অভ্যুত্থানে প্রার্থীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানের নেতা হওয়ার জন্য তার নেতৃত্বের গুনাবলি আছে কিনা, অভ্যুত্থানের আগে ও পরে তার কার্যক্রম কেমন ছিল- সেটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করবেন বলে আমি মনে করি।’
জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা না থাকলেও কেউ আলোচনায় আসতে পারেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। তিনি বলেন, আন্দোলনে সক্রিয়রা শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাবে। পাশাপাশি প্রার্থীর দক্ষতা, অবিচলতা ও নেতৃত্বের সক্ষমতাও বিবেচ্য হবে।
ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির আহবায়ক শেখ মো. আরমানের মতে, ‘জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা প্রার্থীরা নির্বাচনে সুবিধা পাবে। কারণ আন্দোলনের আবেগ কয়েক বছর টিকে থাকবে। তবে কেবল আন্দোলনই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে না। পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, অনেক বামপন্থী নেতা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তাদের গ্রহণযোগ্যতা কম হওয়ায় তারা নির্বাচনে জিততে নাও পারেন।
আরো পড়ুন: ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পরীক্ষা পুনরায় হবে কি না, যা জানাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, আন্দোলনে ভূমিকা রাখা গুরুত্বপূর্ণ, তবে নির্বাচনের ফল নির্ধারণে তা একমাত্র ফ্যাক্টর নয়। যদি কেউ আন্দোলনে ভূমিকা রাখার পরও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে না পারেন, অসৎ হন, তাহলে তার জয়ের সম্ভাবনা কম। আবার কেউ যদি আন্দোলনে বড় ভূমিকা না রেখেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হন, তাহলে তিনি নির্বাচিত হতে পারেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর সম্পাদক ওয়াসি তামি বলেন, আমার কাছে মনে হয় বর্তমানে এটাই সবচেয়ে বড় ক্রাইটেরিয়া হবে। সেইসাথে সবগুলো প্যানেলই জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের নেতাকর্মীদের অবদানের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে প্রচার-প্রচারণাও চালাবে বলে আমার ধারণা। তবে দিনশেষে যেহেতু সকল ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে, এই ক্রাইটেরিয়া দিয়ে কোন বিশেষ প্যানেলকে খুব বেশি এগিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে।