সুপার সানডে-মেগা মানডেসহ বছরজুড়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজে আলোচিত যত ঘটনা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ  © ফাইল ছবি

২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল অন্যতম ঘটনাবহুল একটি বছর। ছাত্রদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশে হয়েছে সফল গণঅভ্যুত্থান। এ গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিলা পালন করেছে। তেমনি একটি শিক্ষাঙ্গন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এক নজরে জেনে নিই, কলেজে ঘটে যাওয়া এ বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো।

১১ ফেব্রুয়ারি
সোহরাওয়ার্দী কলেজের অফিসার্স কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্পাদক অধ্যাপক মো. মোতালিব হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক এএমএম মেহেদী হাসান নির্বাচিত হন।

২১ ফেব্রুয়ারি
যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালিত হয়। কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।

২৯ মে
সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের উদ্যোগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিবস উপলক্ষে ‘রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী’ পালন করা হয়। হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনায় নজরুল শিরোনামে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উৎসবে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। 

৯ জুন
সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির (সোকসাস) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৯টি পদের বিপরীতে ১৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

৪ জুন
সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ক্রীড়া ও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

১০ জুলাই
২০২৪ সালের ১ জুলাই সৃষ্টি হয় একটি সংগঠন, যার নাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মূলত এটি হলো বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়। এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এ আন্দোলনকে সফল করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। 

১৮ জুলাই
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী। তিনি সোহরাওয়ার্দী কলেজের ডিগ্রির সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

১১ আগস্ট 
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের পটপরিবর্তনের পর সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর পদত্যাগ করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা, কলেজের শিক্ষার মান ও অবকাঠামোর উন্নয়ন না করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার এবং অপরাজনীতি বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পদত্যাগ করেন তিনি।

২৭ আগস্ট 
দেশের বৃহত্তর কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীর আকস্মিক বন্যায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজ থেকে বন্যার্তদের জন্য শুকনা খাবার, শিশুর খাবার, মোমবাতি, খাবার স্যালাইন, নাপা ট্যাবলেট, নারীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড, পুরোনো জামা-কাপড় নিয়ে যাত্রা করে দু’টি মিনি ট্রাক। একটি ট্রাক কুমিল্লা ও ফেনীতে এবং অপর একটি ট্রাক যায় নোয়াখালীতে। 

৯ সেপ্টেম্বর 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোহরাওয়ার্দী কলেজের নতুন অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়ের নাম। তিনি আগে ফরিদপুরে সদরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

৮ অক্টোবর
ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে কাওয়ালী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গজল, হামদ, কাওয়ালি সংগীত, দেশাত্মবোধক ও লালন–বাউল গান পরিবেশন করেন আগত শিল্পীরা।

২১ অক্টোবর 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সম্মান (প্রথম বর্ষ) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিন একযোগে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ১৭টি বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

১৪ নভেম্বর 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ তিন মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এ অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে ছিলেন।

২৪ নভেম্বর
ভুল চিকিৎসায় সহপাঠীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সুপার সানডে ঘোষণা দিয়ে রাজধানীর ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল, কবি নজরুল কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলমান ছিল। 

আকস্মিক এ আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজ। প্রতিটি বিভাগ, অফিসরুম, বিভাগীয় প্রধানের কার্যালয় ও গবেষণাগারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। টাকার হিসেবে এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বলে জানায় কলেজ প্রশাসন। 

আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় সমকক্ষের স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পাচ্ছে সাত কলেজ

২৫ নভেম্বর 
কলেজের হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে মেগা মানডে ঘোষণা দিয়ে কবি নজরুল, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মাতুয়াইল এলাকা।

১ ডিসেম্বর 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম ফিরতে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

১৬ ডিসেম্বর 
সোহরাওয়ার্দী কলেজে যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩তম বর্ষ উদযাপন করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ