বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মারামারি, আহত ৭

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটেছে
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটেছে  © প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর বাঘায় একটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রবিবার (৫ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাঘা উপজেলার আড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ (চাঁদ) এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনের (উজ্জ্বল) অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয় বলে বিদ্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে আড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন পলাশের স্ত্রী জুবাইদা বেগম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন। দেশের পটপরিবর্তনের পর ওই বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির জন্য আবেদনপত্র জমা দেন আনোয়ার হোসেন পলাশ। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের অনুসারী। এ ছাড়া আরেকজন বিএনপি সমর্থক পল্লিচিকিৎসক মহসিন আলীও আবেদন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদের অনুসারীরা রোববার বেলা ১১টার দিকে দলবল নিয়ে একই পদে আরেকটি আবেদন জমা দিতে আসেন। তাদের প্রার্থী কলেজশিক্ষক ওয়ালিউর রহমান (বিকুল)। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় তারা বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেন। সেই সময় কয়েকজন শিক্ষক প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে বসে ছিলেন। প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তারা বাইরের চেয়ার ও বিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা কম্পিউটারের কি-বোর্ড, মাউথপিস ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে আনোয়ার হোসেনের অনুসারীরা স্থানীয় লোকজন নিয়ে এসে বাধা দিলে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এই নিয়ে দুই পক্ষ হাতুড়ি-রড, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হন।

তারা হচ্ছেন আনোয়ার হোসেনের অনুসারী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মানিক হোসেন (৪০), একই গ্রামের রুহান আলী (২৩) ও সুজন হোসেন ওরফে বাবু (৩৩)। আবু সাইদ চাঁদের অনুসারী হেদাতিপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩৮), তেঁতুলিয়া গ্রামের জাফর আলী (৪০), বাউসা মাঝপাড়া গ্রামের রানা ইসলাম (১৮) ও হেদাতিপাড়া গ্রামের ইনামুল হকও (৩৫) আহত হন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুল হক জানান, গুরুতর আহত মানিক হোসেন ও রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, তারা ওয়ালিউর রহমানের পক্ষে সভাপতির পদে আবেদনপত্র জমা দিতে যান। মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু লোক বিদ্যালয় মাঠে নামতেই আনোয়ার হোসেন পলাশের পক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে থাকা আরও লোকজন একত্র হয়ে পাল্টা আক্রমণ করলে সংঘর্ষ বাধে। নাসির উদ্দিন বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে তাদের লোকজন নিয়ে চলে আসেন। তবে বিদ্যালয়ের চেয়ার, মাউথপিস ও কি–বোর্ড ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন পলাশ বলেন, একই দল করলেও আবু সাইদ চাঁদের অনুসারীরা প্রভাব বিস্তার করে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের লোককে সভাপতি করার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। একইভাবে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়েও প্রভাব বিস্তার করে ওয়ালিউর রহমানকে সভাপতি করার জন্য তার পক্ষে আবেদন জমা দিতে আসে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে সংঘর্ষ বেধেছে।

প্রধান শিক্ষক আজিবর রহমান বলেন, তিনি উপজেলা সদরে মিটিংয়ে ছিলেন। এর কারণে বিদ্যালয়ে ছিলেন না। পরে শিক্ষকের মাধ্যমে চেয়ার, মাউথপিস, কি–বোর্ড ভাঙচুরের বিষয়টি জেনেছেন।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আশাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ