তবুও থামল না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমরমা মাদকের কারবার

বাইকের পাশে দুইজন মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছেন। বাম পাশের মহিলার হাতেও মাদক দেখা যাচ্ছে। তিনি বিক্রি করেছেন। সোমবারের ছবি
বাইকের পাশে দুইজন মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছেন। বাম পাশের মহিলার হাতেও মাদক দেখা যাচ্ছে। তিনি বিক্রি করেছেন। সোমবারের ছবি  © টিডিসি ফটো

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সুপরিসর নগর উদ্যান। তবে ঐতিহাসিক এ উদ্যানটি ঘিরে অপরাধীদের নানান অপকর্ম চলার অভিযোগ রয়েছে। অবাধে চলে মাদকের কারবারি। তবে প্রশাসনের শিথিল অবস্থানের সুযোগ নিয়ে গোপনে নয়, এখন প্রকাশ্যে খোলামেলাভাবে বিক্রি হচ্ছে মাদক। এতে মাদকসেবীদের ভিড় বেড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকা। এসব রোধে প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিলেও তা তেমন কাজে আসেনি।

জানা গেছে, টিএসসির পাশেই অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে প্রকাশ্যে মাককদ্রব্যের সেবন। কারবারিরা প্রকাশ্যে এসব দ্রব্য বিক্রি করছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের উদ্যানের এসব অপকর্মে যুপ্ত হয়ে পড়ার শংকা রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গ্যাং আকারে উদ্যানে অপরাধে লিপ্ত থাকার প্রমাণও মিলেছে।

গত বছর ‘প্রলয় গ্যাং’ নামে একটি গ্যাংয়ের সন্ধান পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর সাথে জড়িত সবাই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। তাদের সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও সতর্কবার্তা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতেও আরও অনেক গ্যাংয়ের অস্তিত্ব থাকার কথা জানা গেছে।

পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই উদ্যানে। ফলে প্রকাশ্যে চলছে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন। উদ্যানের টিএসসির পার্শ্ববর্তী গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন পয়েন্টে প্রকাশ্য গাঁজা বিক্রি করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকে কিশোর-কিশোরী। সঙ্গে আছে পূর্ণ বয়স্ক কয়েকজন। হাতে পলিথিন ভর্তি গাঁজা নিয়ে তারা লোকজন দেখে জিজ্ঞাসা করছে, ‘কতটুকু লাগবে?’

সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই উদ্যানে। ফলে প্রকাশ্যে চলছে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন। উদ্যানের টিএসসির পার্শ্ববর্তী গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন পয়েন্টে প্রকাশ্য গাঁজা বিক্রি করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকে কিশোর-কিশোরী। সঙ্গে আছে পূর্ণ বয়স্ক কয়েকজন। হাতে পলিথিন ভর্তি গাঁজা নিয়ে তারা লোকজন দেখে জিজ্ঞাসা করছে, ‘কতটুকু লাগবে?’

উদ্যানের মধ্যে যারাই প্রবেশ করছেন, প্রায় সবার কাছে দৌঁড়ে গিয়ে গাজা নেবে কি না জিজ্ঞাসা করছে বিক্রেতারা। এতে উদ্যানে মাদকসেবনকারী লোকজনের আনাগোনাও বেড়েছে।

ছদ্মবেশে এক বিক্রেতার সঙ্গে কথার মাঝে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগে আমরা প্রকাশ্যে গাঁজা বেচতে পারতাম না। ছাত্রলীগের যারা ছিলেন, তারা অর্ধেক জোর করে নিয়ে যেতেন। ফলে এখানে আসতাম না। বাইরে বিক্রি করতাম। এখন ছাত্রলীগও নাই, পুলিশেরও ভয় নাই। তাই এখানে এসে বিক্রি করি। বিক্রিও ভালো হয়। হাফ কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয় রাতে।’

পলিথিনে করে গাঁজা বিক্রি করছিল ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। তার ভাষ্য, ‘আমার আরেক ভাই অন্য দিকে বিক্রি করছে। আমি এই দিকে। আমরা আগে এগুলো করতাম না। কিন্তু এখন কোনো সমস্যা হয় না। পুলিশও আসে না, কেউ কিছু বলেও না।’

এদিকে বিকেল হলেই বহিরাগতদের ভিড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে টিএসসি এলাকায়। বিকেল হতে না হতেই বাইরের এলাকা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। টিএসসি এলাকায় বেড়েছে নানা ধরনের খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকানের সংখ্যাও। ফলে বহিরাগতরা এসে টিএসসি ও উদ্যান এলাকায় ভীড় জমান। এতে উদ্যানের গেট ও টিএসসির মধ্যবর্তী সড়কসহ আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি চালু না থাকায় টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বেড়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। ফলে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ এ এলাকায় প্রবেশ করে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা শঙ্কা ও ভোগান্তর শিকার হচ্ছে। তবে নবনিযুক্ত প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের ওপর আস্থা রাখছেন তারা। দ্রুত সব স্বাভাবিক হবে বলেও আশা তাদের।

আরো পড়ুন: ঢাবিতে সকল রাজনীতি বন্ধে উপাচার্যকে স্মারকলিপি, ২ দাবি শিক্ষার্থীদের

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যানের অপকর্ম বিমুখ করতে টিএসসি সংলগ্ন গেইটটি বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ গেটটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) গেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই গেইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি টিএসসি কেন্দ্রিক যত ভ্রাম্যমাণ দোকান আছে, সেটি মঙ্গলবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। আজকে একটি দল সেখানে মাইকিং করে এসেছে। বিকেল ৪টা থেকেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। পাশাপাশি আমাদের টিম ওখানে সজাগ দৃষ্টি রাখবে, যাতে আর কেউ এসে দোকান বসাতে না পারে।


সর্বশেষ সংবাদ