বিজয় একাত্তরের চেয়ে ছোট কুয়েত মৈত্রী হলের বিদ্যুৎ বিল তিন গুণ বেশি

ঢাবির কুয়েত মৈত্রী ও বিজয় একাত্তর হল
ঢাবির কুয়েত মৈত্রী ও বিজয় একাত্তর হল  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল আকার, কক্ষ ও শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে কুয়েত মৈত্রী হলের প্রায় তিণ গুন বড়। তবে বিদ্যুৎ বিলের হিসাব করলে দেখা যায়, বিজয় একাত্তর হলের চেয়ে কুয়েত মৈত্রী হলের বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলকভাবে তিন গুণ বেশি। এটিকে অস্বাভাবিক বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যথাযথ জবাব দিতে পারেনি।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহ্যিক দিকগুলো সবার চোখে পড়লেও অভ্যন্তরীণ দিকগুলো অনেকের অজানা। সে অজানা তথ্যের মধ্যে একটি হলো, ঢাবির হলের বিদ্যুৎ বিল। হলের শিক্ষার্থী এমনকি হল প্রশাসনও জানে না, প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল কত। এ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জানার আগ্রহ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের বিদ্যুৎ শাখায় বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তারা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে তারা ঢাবির যেকোনো একটি হলের তথ্য দেখাতে রাজি হয়। অতপর ঢাবির দুই (বিজয় একাত্তর হল এবং বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী) হলের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মূল তথ্য। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিজয় একাত্তর হলে মোট কক্ষ আছে ২৫০টি। প্রতিটি কক্ষে দু’টি করে ফ্যান চলে। রিডিং রুম, গণরুম মিলিয়ে ৬০০ ফ্যান, চারটি লিফ্ট এবং হল অফিসে এসি চলে। অন্যদিকে  কুয়েত মৈত্রী হলের মোট কক্ষ ৮৬টি। ৫ তলা ভবনের এ হলে নেই কোনো লিফ্ট বা এসি। এরপরও বিদ্যুৎ বিলের পাহাড় গড়েছে কুয়েত মৈত্রী হল। এ দুই হলের পৃথক দু’মাসের বিদ্যুৎ বিলের তথ্য পাওয়া গেছে।

সে অনুযায়ী, বিজয় একাত্তর হলের ২০২২ সালের মে মাসের বিদ্যুৎ বিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৯৩২ টাকা। সেখানে কুয়েত মৈত্রী হলের ২০২৩ সালের মে মাসের বিদ্যুৎ বিল ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৬ টাকা। আর একই বছরের জুলাই মাসের বিজয় একাত্তর হলের বিদ্যুৎ বিল ৭ লাখ ৭৪ হাজার একত্রিশ টাকা। সেখানে পরের বছরের কুয়েত মৈত্রী হলের জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল ৯ লাখ ২৭ হাজার ১৭১ টাকা।

আকারের দিক দিয়ে বিজয় একাত্তর হল কুয়েত মৈত্রী হলের প্রায় তিন গুন বড়। তবে কক্ষ সংখ্যার দিক দিয়ে বিদ্যুৎ বিলের হিসাব করলে দেখা যায়,  বিজয় একাত্তর হলের চেয়ে কুয়েত মৈত্রী হলের বিদ্যুৎ বিল তিন গুন বেশি। এটি অস্বাভাবিক বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হল কর্তৃপক্ষ।

আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে কুয়েত মৈত্রী হলে। জানুয়ারি মাসেও মৈত্রী হলের বিদ্যুৎ বিল বিজয় একাত্তর হলের চেয়ে প্রায় লাখ টাকা বেশি। অথচ কুয়েত মৈত্রী হলে ৮৬ কক্ষে ৭৩২ জন এবং বিজয় একাত্তর হলে আড়াই শতাধিক কক্ষে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের প্রভোস্ট বলেন, প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোনোদিন জানতে পারলাম না, আমার হলের প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিল কত। এটা আমার জানা নেই। এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, প্রত্যেক হলের বিদ্যুৎ বিল প্রতিটি প্রভোস্টকে জানা উচিত, না জানাটা তাদের ব্যর্থতা। বিজয় একাত্তর হলে থেকে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল অনেক ছোট। পাহাড় সমান বিদ্যুৎ বিল কখনোই হতে পারে না। 

আরো পড়ুন: ঢাবিতে বিষয়প্রাপ্তরা ভর্তিতে অনাগ্রহী হলে বরাদ্দ বাতিল আজকের মধ্যে

বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী  হলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের হলে সিলিং ফ্যান নেই বললেই চলে। প্রত্যেকে নিজস্ব ফ্যান ব্যবহার করে, নেই কোনো লিফ্ট। নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হলে এতো টাকার বিদ্যুৎ বিল কখনো আসতে পারে না। এটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। বিদ্যুৎ বিলের কোনো না কোনো কারচুপি থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েত মৈত্রী হলের বিদ্যুৎ জোনের দায়িত্বগত প্রিন্সিপাল টেকনিক্যাল অফিসার আনন্দ কুমার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ব্যাপারে না জেনে আমি কোনো তথ্য দিতে পারবো না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। 

আর বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহারের ভাষ্য, কুয়েত মৈত্রী হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলের তুলনায় অনেক ছোট। আমার হলের মাত্র ৮৬টি কক্ষ ও একটি টিভি রুম আছে। হলের একটি লন্ড্রির দোকান আছে। তাও প্রায়ই বন্ধ থাকে। আমার হলে কোনো লিফ্ট ও এসি নেই। তারপরও এত টাকার বিদ্যুৎ বিল কীভাবে আসে? এটা আমার কাছে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ