তথ্য চাওয়ায় ‘সাংবাদিক লাঞ্ছনার’ অভিযোগ ঢাবির এস্টেট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভেতর প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত দোকানের তথ্য চাওয়ায় দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) কোষাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক সাব্বিরুল ইসলাম। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এস্টেট ম্যানেজার।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ভাসমান দোকান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য আমি এবং অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক এস্টেট অফিসে যাই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত দোকান সমূহের তালিকা চাইতে এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফার সাথে যোগাযোগ করি।’

‘‘কিন্তু তিনি আমাদের কোনো প্রকার সহায়তা না করে তথ্য চাওয়ায় মৌখিকভাবে তিরস্কার করেন। তিনি আমাদের তার অফিসের দরজার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে রূঢ়ভাবে বলেন, ‘তোমরা কি পুলিশ নাকি সিন্ডিকেট মেম্বার যে, তোমাদের এ তথ্য দিতে হবে? লিখিত আবেদন নিয়ে আসো আগে।’ তার ভাষ্যমতে, আমরা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই, যাদের তিনি এ তথ্য দেবেন।”

লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত দোকানের তালিকা এমন কোনো তথ্য নয়, যেটা দিতে তার আপত্তি থাকার কথা। এর মাধ্যমে তাঁর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। যদি এটি প্রশাসনের কোনো গোপনীয় তথ্য হয়ে থাকতো এবং লিখিত আবেদনের প্রয়োজনীয়তাও থাকতো, তাহলেও তিনি যেভাবে তিরস্কার করে কথা বলেছেন- সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি আমাদের তার অফিসের দরজার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে রূঢ়ভাবে বলেন, ‘তোমরা কি পুলিশ নাকি সিন্ডিকেট মেম্বার যে, তোমাদের এ তথ্য দিতে হবে? লিখিত আবেদন নিয়ে আসো আগে।’

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালায়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি লিখিত অভিযোগের বিষয়ে মাত্রই জানলাম। তবে আজকে দুপুরের সময় সাব্বির (ভুক্তভোগী সাংবাদিক) আমাকে এসে তার  বিষয়ে বলল যে, তিনি (অভিযুক্ত) রেসপন্স করেনি উল্টো খারাপ ব্যবহার করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘পরে আমি ফাতেমাকে ডেকেছি। সে বলল, স্যার আমাকে লিখিত ভাবে কিছু দেয়নি। লিখিত ছাড়া আমি কোন তথ্য দেব না। আমি তখন তাকে বললাম, আপনি খারাপ ব্যবহার করেন কেন? সে বলে, না স্যার, আমি কিছু করিনি। তিনি আরো বলেন, এখন যেহেতু আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, কাল আমি এটা অবশ্যই দেখব।

এদিকে সংবাদ প্রকাশের স্বার্থে এস্টেট অফিসে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকদের নানাভাবে অপমান ও হেনস্তা করার অভিযোগ করেছেন আরো কয়েকজন সাংবাদিক। ডেইলি অবজারভারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাওসিফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসায় অবৈধভাবে বাহিরাগতদের ভাড়া দেওয়া নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। যেহেতু, বাসা বরাদ্দ বিষয়টি এস্টেট অফিস দেখেন, তাই আমি এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা আপাকে কল দিই। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলতে অসম্মতি জানান এবং অফিশিয়াল বিষয় অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।

তাওসিফুলের ভাষ্য, ‘‘আমি ৪ মার্চ তার অফিসে যাই। তবে যাওয়া মাত্র উনি মেজাজ হারিয়ে বলেন, ‘আমি অনেক ব্যস্ত। তোমাদের কাজ করব নাকি আমার কাজ করব? তোমাদের আর কোনো কাজ নাই? তুমি যাওতো ভাই যাও।’ তিনি আমাকে একটা কথাও বলার সুযোগ দেননি। তিনি অফিশিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। সেটি আমাকে স্বাভাবিকভাবে বললে আমি তার অবসর সময়ে যোগাযোগ করতাম। কিন্তু তার ভাষা ছিল খুবই রুঢ় এবং আচরণ ছিল আক্রমণাত্মক।’

আরো পড়ুন: ১৪ বছর পর ২৯তম বিসিএসের ভাইভা দিলেন দেবদাস বিশ্বাস

দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমিও বেশ কয়েকবার সংবাদের উদ্দেশ্যে তার কাছে তথ্য চেয়ে পাইনি। বরং হয়রানির শিকার হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, বাসা বরাদ্দসহ সব কাজ এস্টেটের অধীনে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এস্টেট অফিসের প্রধান হিসেবে এসবের দায় তাকে নিতে হবে। দায় এড়ানোর জন্যই তিনি সাংবাদিকদের সাথে বিরূপ আচরণের পথ বেছে নিয়েছেন।’

হেনস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বলেন, ‘কোনো তথ্য পেতে হলে তাকে প্রথমত লিখিত দিতে হবে। নয়তো অপরিচিত মানুষকে আমি  কীভাবে তথ্য দিবো? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে অবশ্যই সে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে হবে। তাকে তথ্য না দেওয়াটা হেনস্তা মনে হলে আমার কিছু করার নেই।’


সর্বশেষ সংবাদ