চাপে পড়ে চবির বিজ্ঞাপনের খরচ কি উপাচার্যই দিচ্ছেন?

উপাচার্য ও চবি লোগো
উপাচার্য ও চবি লোগো  © ফাইল ছবি

একাধিক জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবনিযুক্ত দুজন মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। গত বুধবার (বুধবার) এসব বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তার ব্যক্তিগত খাত থেকে বহন করবেন জানানো হয়।

তবে, পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞাপনের ওয়ার্ক অর্ডারের একটি কপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। সেখান থেকে জানা গেছে, বিজ্ঞাপন ছাপানোর অনুরোধ থেকে শুরু করে বিল পরিশোধের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।

আরও পড়ুন: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দুই মন্ত্রীকে অভিনন্দন চবি ভিসির

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিজ্ঞাপনের খরচ উপাচার্য নাকি চবি প্রশাসন দেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিজ্ঞাপন ব্যয় উপাচার্য ব্যক্তিগত খাত থেকে দেবে বলে জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ওয়ার্ক অর্ডার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ইস্যু করার কথা নয়। তাই প্রশাসনের বক্তব্য এবং বাস্তবতার মধ্যে যথেষ্ঠ গরমিল দেখা যাচ্ছে। হয়ত চাপে পড়ে এখন মত পাল্টানো হচ্ছে, যা খুবই রহস্যজনক।

এদিকে, গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) পত্রিকার বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো চবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত এক ওয়ার্ক অর্ডারে বলা হয়, “বিষয়: এতৎসঙ্গে সংযুক্তি বিজ্ঞপ্তিটি পত্রিকায় প্রচার প্রসঙ্গে। জনাব, এতৎসঙ্গে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিটি অনধিক ৫ ইঞ্চি x ৩ কলাম আয়তনে/সীমিত পরিসরে প্রথম পাতায় আগামী ১৭ জানুয়ারির (বুধবার) মধ্যে একদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মনোগ্রামসহ অবিকল প্রকাশ করার ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত/নির্ধারিত রেইট অনুযায়ী ৩ কপি বিল ও প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটির ২টি কপিসহ নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট প্রেরণ করলে তা নিয়মানুযায়ী পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার 

জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে সংসদ সদস্য হওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গত বুধবার একাধিক জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো পর চবি কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চায় ইউজিসি। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের খরচ কোন খাত থেকে করা হচ্ছে, সেটিও জানতে চায় কমিশন।

চবি রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া চিঠিতে ইউজিসি বলেছে, এ বিজ্ঞাপন কয়টি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং এ ব্যয় কোন খাত থেকে নির্বাহ করা হবে, তার তথ্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য ৫ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করেছে ইউজিসি।

আরও পড়ুন: দুই মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞাপন, খরচ দেবেন চবি উপাচার্য

পরে গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এই বিজ্ঞাপনের ব্যয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে না বলে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, “পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পত্রিকায় দেওয়া ওই বিজ্ঞাপনের ব্যয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই।”

বিজ্ঞাপনের ওয়ার্ক অর্ডার 

জানতে চাইলে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বক্তব্যে বলেছেন যে বিজ্ঞাপন ব্যয় উপাচার্য ব্যক্তিগত খাত থেকে দিবেন। যদি তাই হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করার কথা নয়। সেক্ষেত্রে উপাচার্য নিজে বা অন‍্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিশোধ করাই ছিল স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় যখন কোনো বিষয়ে ডিল করবে তখন সেটার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকেই যায়। তাই প্রশাসনের বক্তব্য এবং বাস্তবতার মধ্যে যথেষ্ঠ গরমিল দেখা যাচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানতে না চাইলে হয়ত এই বিজ্ঞাপনের ব্যয়টা বিশ্ববিদ্যালয়কেই বহন করতে হতো। হয়ত চাপে পড়ে এখন মত পাল্টানো হচ্ছে, যা খুবই রহস্যজনক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ এই প্রতিনিধিকে বলেন, এটা নিয়ে তোমাদের (সাংবাদিকদের) এতো পোস্টমর্টেমের কি দরকার? ম্যাডামের (উপাচার্য) পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিতে পারে না? বিল তো এখনো আসে নি। যখন আসবে বিলটা পে অর্ডার বা ক্যাশ করে দিয়ে দিতে পারবে।

ব্যক্তিগত খাত থেকে বিজ্ঞাপন বিল দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডার কেন দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বিরক্তির সাথে বলেন, তোমাদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো কথা নাই। বক্তব্য যেটা গেছে ঐটাই। আমরা বক্তব্যে বলেছি বিজ্ঞাপনের ব্যয় উপাচার্য ব্যক্তিগত খাত থেকে দিবেন। 

এ বিষয়ে চবির ফটোগ্রাফি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসকে জানান, অফিসিয়ালি কিছু না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ