ক্যাম্পাসে মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার রাবি শিক্ষার্থী, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১২ PM , আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১২ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক শিক্ষার্থী মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরেক শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে তা অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. জুয়েল হোসাইন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম তাসনিম আলম শান্ত। তিনি উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে জুয়েল লিখেছেন, গতকাল মঙ্গরবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় আমি ক্যাম্পাসে অবস্থিত BCS কনফার্মের সামনে দিয়ে শেরে বাংলা হলে ফিরছিলাম। পথিমধ্যে একটা ছেলে আমাকে ডাকে এবং স্টেডিয়ামের সামনে অবস্থিত মাঠের নির্জন জায়গা নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে অপেক্ষাকৃত ৫ জন ছেলে আমাকে ছুরি প্রদর্শন করে এবং আমাকে আমার ফোন দিতে বলে। এমতাবস্থায় তাদের সাথে আমার বাগবিতণ্ডা হয় এবং বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা ৫ জন আমাকে অনবরত কিল, ঘুষি, থাপ্পড় মারতে থাকে।
“মারধরের এক পর্যায়ে আমি মাটিতে পড়ে গেলে তারা আমাকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে একজন আমার পকেট থেকে পড়ে যাওয়া আমার ফোন, আমার ম্যানিব্যাগ যার মধ্যে প্রায় ১৪০০ টাকা ছিল এবং আমার ব্যবহৃত স্বর্ণের আংটি নিয়ে যায়।”
তিনি আরও লিখেছেন, যাওয়ার সময় আমি চিৎকার করলে লোকজন চলে আসে তারা ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজনকে চিনতে পারে। তার নাম তাসনিম আলম সান্ত। সে শেরে বাংলা হলে থাকে। পরে হলে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
মো. জুয়েল হোসাইন আরও জানান, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এখন রামেকের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি। ডাক্তার বলল, আমার মাথার ভেতরে নাকি রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন।
এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর বরাবর পাল্টা লিখিত অভিযোগ দেন মো. তাসনিম আলম শান্ত। লিখিত অভিযোগে শান্ত জানান, গতকাল আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে আমি টিএসসির পাশ দিয়ে হলে ফিরছিলাম। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় জুয়েল ভাই (ভুক্তভোগী) ও একটি মেয়ে এবং কিছু শিক্ষার্থীকে বাগবিতণ্ডায় জড়ানো অবস্থায় দেখি। জুয়েল ভাইয়ের সাথে পূর্ব-পরিচিত থাকায় তাকে চিনতে পেরে সেখানে যাই এবং শিক্ষার্থীদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, জুয়েল ভাই আর ঐ মেয়ে অপ্রীতিকর অবস্থায় টিএসসিসির পাশে দেখতে পায় এবং সেই বিষয়ে বাগবিতণ্ডার জড়ায়।
তিনি আরও লিখেছেন, বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আমি জুয়েল ভাইকে যথেষ্ট সেভ করার চেষ্টা করি এবং এক পর্যায়ে আমি সে স্থান ত্যাগ করি। পরবর্তীতে জুয়েল ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলে, তুই ঐ ছেলেদের চিনিস? আমি তাদেরকে চিনি না বলে জানালে তারা আমারই চাচাতো ভাইকে জিম্মি করে ও আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এই অবস্থায় আমি হল ছেড়ে অনিরাপদ জীবন পার করছি।
এ বিষয়ে জুয়েল জানান, ঘটনার সময় কোনো মেয়ে তার সঙ্গে ছিল না। বরং তার এক নারী বন্ধুকে হলে রেখে নিজের হলে ফিরছিলেন তিনি।
এদিকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছিনতাই ও মারধরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এমন ঘটনাই প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা ভঙ্গুর।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আজকে দুপুরে জুয়েল (ভুক্তভোগী) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারপর সন্ধ্যায় যার নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন সেই শান্ত পাল্টা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আগামীকালকে বসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।