ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিস বিভাগে ছাত্রীদের নির্যাতনের শিকার ছাত্ররা

পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ
পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিস বিভাগের নারী সহপাঠীদের হাতে বুলিং, হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিভাগটির এক ছাত্র। এ ঘটনায় তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোনো প্রতিকার পাননি। পরে এ ঘটনার বিচার দাবিতে পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সমনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভাগটিতে নারী শিক্ষার্থীদের বুলিংয়ের এ ঘটনা নিয়মিত বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের হাতে বুলিং ও হেনস্থার বিচার দাবি করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এসে বিচারে আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাই বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

আমরা একটা অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই বিষয়টি সমাধান করবো। -অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান, প্রক্টর, ঢাবি

শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রক্টর ড. মুহম্মদ মাহবুবুল রহমানের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রথম বর্ষ থেকে হেনস্তার শিকার হচ্ছি। বিভাগে নারী সমতার কথা বলা হলেও মেয়েদেরকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। নারী শিক্ষার্থীদের আধিপত্য কায়েম করে উল্টো আমাদেরকে সেক্সুয়াল হ্যারাজার এবং রেপিস্ট বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ম্যামের কাছে অভিযোগ করেও বিচার পাইনি।

এসময় বিভাগের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক অমিও সৃজন সাম্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের হেনস্তার সঙ্গে তিনিও জড়িত। তিনি একটা গ্রুপের কথা শুনে আমাদের উপর চড়াও হন এবং সে সময় তিনি একজন ছাত্রকে পরবর্তী টার্গেট বলে আখ্যায়িত করেন। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই।

তবে অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক সৃজন সাম্যের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা যায়, বিভাগে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি থাকায় ছেলেরা প্রতিনিয়ত বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বিভাগের একটি অভিজাত গ্রুপ রয়েছে। যার পুরোটাই চলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নুজহাত মেহজাবিনের নেতৃত্বে। অভিযোগ আছে, বিভাগের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশি খারাপ আচরণ করে এ গ্রুপটি। তাদের হাতে আরও অনেক ছাত্র হেনস্তার শিকার হয়েছে। বিভাগের শিক্ষকরা তাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের উদ্ধত আচরণের মাত্রা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই ঘটনা সম্পূর্ণ একটি ভুল বোঝাবুঝি। এর বাইরে তারা যা বলছে তা সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। -ঘটনায় জড়িত নুজহাত মেহজাবিন

গ্রুপটির হাতে বুলিংয়ের শিকার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জানান, ক্লাসে অভিজাত গ্রুপকে পরিচালনা করে নুজহাত মেহেজাবিন। এরা সবসময় প্রান্তিক শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তা করে। আমি এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করি বলে আমার নামে যা নয় তাই অভিযোগ করে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে বিভাগে অভিযোগ জানানো হলে উভয়কে সংযত আচরণের কথা বলা হয়। কিন্তু তাদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য থেমে নেই।

ইমরান অভিযোগ করে আরও বলেন, তারা আমাদেরকে (ছেলেদের) সেক্সুয়াল হ্যারাজার বলে বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন। বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র সবার সামনে তারা এ ধরনের কথা বলছে। কিছু দিন আগে আমরা ৬০ জন মিলে একটা ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেটাকে তারা সেক্সুয়াল হ্যারাজারদের ট্যুর বলে ছড়িয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলেও তিনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। ফলে আমাদের আজ আন্দোলনে নামতে হয়েছে।

ইমরান নিজকে সবচেয়ে বেশি বুলিংয়ের শিকার দাবি করে বলেন, আমি সবসময় নারী অধিকার নিয়ে কাজ করি। বিভাগেও আমার একটা ভালো ইমেজ রয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে থামাতে না পেরে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার নামে মিথ্যা বিভিন্ন অভিযোগ এনে হেনস্তা করছে। এসব কারণে আমার বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজনের সাথেও এখন আমার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব চলছে।

এদিকে, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা আখ্যায়িত করে নুজহাত মেহজাবিন বলেন, ‘এই ঘটনা সম্পূর্ণ একটি ভুল বোঝাবুঝি। এর বাইরে তারা যা বলছে তা সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।’ এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিস বিভাগে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেন।

আমি সবসময় নারী অধিকার নিয়ে কাজ করি। তারা আমাকে থামাতে না পেরে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার নামে মিথ্যা বিভিন্ন অভিযোগ এনে হেনস্তা করছে। -ভুক্তভোগী ইমরান

ইউমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক উম্মে বুশরা ফাতেহা সুলতানা বলেন, ‘‘দুইদিন আগে কয়েকজন শিক্ষার্থী একটা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। সেখানে শুধু একটা মেয়ের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনা হয়। আমরা মেয়েটার সাথে কথা বলে জানতে পারি, মেয়েটা ভুলে একটা মেসেজ এক গ্রুপে দিতে গিয়ে অন্য গ্রুপে দিয়েছে।’’

বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে দাবি করেন বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা শিক্ষকরা কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। পরে শুনেছি, তারা নাকি সুষ্ঠু বিচার পায়নি। নতুন করে এ অভিযোগ তুলে আজকে পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি করেছে।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুল রহমান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তিনি এ ঘটনা তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীরা তার মৌখিক আশ্বাসে সকাল সাড়ে ১০টায় তাদের অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা একটা অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই বিষয়টি সমাধান করবো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence