ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক ঢাবি শিক্ষার্থীকে আদালতে প্রেরণ

সাফিন শেখ
সাফিন শেখ  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাই ও মারধরের অভিযোগে ঢাবির এক শিক্ষার্থীকে আদালতে প্রেরণ করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম সাফিন শেখ। জানা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নরত এবং হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়।

ঘটনার ভুক্তভোগীর নাম মোঃ. জাকারিয়া। তার বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি রাজধানীর পুরান পল্টন এলাকায় থাকেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ বলেন, ঐদিনের ঘটনায় ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে লোকজন মিলে সাফিনকে আটক করে এবং আমাদের কাছে তুলে দেয়। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। আমরা সাফিনসহ অজ্ঞাতনামা আরো দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছি। পরবর্তীতে সাফিনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: এশিয়ার সেরা দেড়শ’র তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২২ অক্টোবর ভোর ৫ টায় জাকারিয়া ও বন্ধুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্রিকেট খেলছিল। এসময় অভিযুক্ত শাফিন শেখ তাদের কাছে মাঠের ভাড়া দাবি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরবর্তীতে ছুরি দেখিয়ে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বিকাশের পাসওয়ার্ড চায় এবং ১ লাখ টাকা দাবি করে। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শাফিন শেখ ও তার বন্ধুরা মিলে জাকারিয়াকে বেধড়ক মারধর করে তার পকেটে থাকা ৪৮০০ টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে গত ৫ নভেম্বর সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঢোকার সময় আবারো জাকারিয়াকে দেখে চিনে ফেলে শাফিন শেখ। সেসময় শাফিন শেখ আবারো জাকারিয়াকে মারধর করতে এগিয়ে আসে। তখন জাকারিয়া ভয়ে চিৎকার করলে লোকজন এগিয়ে আসে এবং ঘটনাস্থলে থাকা শাহবাগ থানা পুলিশ গিয়ে শাফিন শেখকে আটক ও জাকারিয়াকে উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জাকারিয়া শাফিন শেখকে মারধর ও ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়।

ভুক্তভোগী জাকারিয়া জানান, আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্রিকেট খেলি। অভ্যাসবশত গত ২২ অক্টোবর ভোর ৫ টা ৩০ মিনিটে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই খেলার জন্য ঠিক তখনি বিবাদী সাফিন হোসেন এবং তার সাথে থাকা দুর্বৃত্তরা আমাকে মাঠে খেলার ভাড়া দিতে বলে বেদম মার শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আমার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বিকাশের পিন নাম্বার চেয়ে একলাখ টাকা দাবি করে। আমি দিতে রাজি না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা আমার পকেট থেকে ৪৮০০ টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। কিল ঘুষি মেরে আমাকে জখম করে। এরপর গত ৫ নভেম্বর আমার আবার দেখা হয় বিবাদী সাফিন শেখের সাথে উদ্যানে। আমাকে দেখেই আক্রমণাত্মকভাবে এগিয়ে এলে আমার সঙ্গী সাথীরা আমাকে রক্ষা করে অতঃপর শাহবাগ থানা পুলিশ এসে বিবাদীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

শাহবাগ থানা থেকে বলা হচ্ছে, অভিযুক্ত শাফিন শেখের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওদের একটা গ্রুপ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্ত সাফিন শেখের নাম্বারে ফোন দিলে জানান, আমি সাফিনের বন্ধু। সাফিন এখানে নেই। আমার ফোন যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাৎক্ষণিক তিনি কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে চাইলে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হক শিশিরে কাছে তার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এরকম নামে কাউকে আমি চিনি না। আমার সাথে রাজনীতি করলে অবশ্যই চিনতাম।

এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী জানান, আমরা ইতোমধ্যে একজন শিক্ষার্থীর বেআইনি কাজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি শুনেছি এবং তার বিরুদ্ধে মামলা রজুর কপিটা দেখছি। আপনারাও একটু সহযোগিতা করুন। ঘটনাটির সাথে সত্যতা প্রমাণ হলে বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবে।


সর্বশেষ সংবাদ