জুমার দিনের কিছু আমল ও ফজিলত

জুমার নামাজ
জুমার নামাজ  © প্রতীকী ছবি

শুক্রবার বা জুমার দিনকে মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়। জুমা এটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার দিনে মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে জোহর নামাজের পরিবর্তে যে নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সেই নামাজকে ‘জুমার নামাজ’ বলা হয়।

ইসলামের শুরুর যুগ থেকেই জুমার নামাজের এই প্রচলন চলে আসছে। প্রথম হিজরিতে মুসলমানদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ হয়। যার প্রেক্ষাপট এমন ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছান এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় অবতরণ করেন জোহরের ওয়াক্তের সময়। সেখানেই সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে এই নামাজ।

অন্যান্য নামাজ থেকে এ নামাজের ফজিলত অত্যধিক, মর্যাদাও সীমাহীন। এমনকি এই নামাজের কারণে এ দিনের সম্মান বেড়ে গেছে বহু গুণ। হাদিসে এসেছে এ দিনের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে সবার আগে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল।’

দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কোরবানি করল, তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন বের হয়ে এসে মিম্বরে বসেন খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান। -সহিহ বুখারি, হাদিস-নং ৮৮১।

আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষা নকলমুক্ত রাখতে সভা সোমবার।

জুমার এই ফজিলতপূর্ণ দিনের অনেক আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত তার সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে। -আবু দাউদ, হাদিস-নং ৩৪৩।

জুমার দিনের কিছু আমল নিচে উল্লেখ করা হলো:

১। জুমার দিন ফজরের ফরজ নামাজে সুরা সাজদা ও সুরা দাহর/ইনসান তেলাওয়াত করা।

২। জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করা।

৩। নিজের সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরা।

৪। সুগন্ধি ব্যবহার করা, যদি থাকে।

৫। জুমার নামাজের জন্য আগেভাগে মসজিদে যাওয়া।

৬। শুক্রবার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা।

৭। মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজের আগে কমপক্ষে ৪ রাকাত সুন্নত আদায় করা।

৮। জুমার নামাজে ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা।

৯। মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা। খুতবা চলাকালে কোনো কথা না বলা।

১০। দুই খুতবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা এবং জুমার দিনের অন্য সময়ও দোয়া করা। কারণ এদিনে দোয়া কবুল হয়।

আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে জুমার দিনের হক আদায় করার তাওফিক দান করেন, আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।


সর্বশেষ সংবাদ