ডাবের পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা
- আরমান শান্ত
- প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১০:১৪ AM , আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১০:১৪ AM
বসন্তের বিদায় লগ্নে প্রখর তাপদাহ গ্রীষ্মকে আলিঙ্গন করছে দেশ। ফলে পানি ছাড়া যখন সকাল পার করা কষ্টকর, তখন রোজার জন্য পানাহার বিহীন দিন পার করছে মানুষ। তাই প্রায় প্রত্যেকের দেহে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। দিন শেষে ভর করে ক্লান্তি ও অবসাদ। কোনো কাজে তেমন আগ্রহ থাকে না। তবে এসময় শরীর চাঙা করতে ডাবের পানি এক অনন্য উপকরণ।
গ্রীষ্মে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ডাবের পানি এক মহৌষধ। কেননা পানি শরীরে তাৎক্ষণিক প্রশান্তি দেয়। শরীরে পানির অভাব পূরণ করতে ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাছাড়া দেহে কিছু ফ্রি-র্যাডিক্যাল বিভিন্ন কোষকে ধ্বংস করে। কিন্তু ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এই কোষ ধ্বংসকে প্রতিরোধ করে।
আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য গুণে মেথি
ডাবের পানি কিডনি ও ডায়বেটিস রোগীর জন্য উপকারী এক প্রকৃতিক পানীয়। গবেষনায় দেখা যায়, ডাবের পানিতে থাকা যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিনেরর কার্যকারিতা বাড়ায়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে এই ডাবের পানি।
ডাবের পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে পুষ্টিবিদরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন। নিয়মিত ডাবের পানি সেবনে প্রকৃতিকভাবে সুস্থ থাকার কথাও জানান তারা। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ সামিনা জামান কাজরী বলেন, প্রচন্ড তাপদাহে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। এসব পানিস্বল্পতা দূর করতে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকর।কারণ ডাবের পানিতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বো-হাইড্রেড, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। যা শরীরকে তরতাজা রাখতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁঁচার উপায়
গবেষণা বলছে, ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে ৯৪ গ্রামই থাকে পানি। অল্প পরিমাণে ফ্যাট, কার্বো-হাইড্রেড ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। এমনকি এ পানিতে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের রয়েছে ভালো সমন্বয়। তাছাড়া ডাবের পানিতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র অঙ্গপ্রতঙ্গ কার্যকর হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে ডাবের পানির স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জানা যায়। এ পর্যায়ে ডাবের পানির কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
হজম শক্তি বৃদ্ধি
ডাবের পানিতে থাকা বিশেষ ধরণের প্রাকৃতিক এনজাইম পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা; যেমন, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। খাবারের রুচি ঠিক থাকে।
ত্বকের যত্নে
ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যায় বেশ কার্যকর। এছাড়া ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করতে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এমনকি ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টিস শরীরের দাগ ও বলিরেখা দূর করে ত্বককে রাখে সতেজ।
হাড় মজবুত করে
হাড়কে মজবুত রাখার জন্য দরকার ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পুষ্টিগুণ। তাই ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের উপাদান হাড়কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষুধা কমায়-শক্তি বাড়ায়
ডাবের পানি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। ফলে ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। খাওয়া কম হয়। এতে চর্বি না থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাছাড়া ডাবের পানিতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল শরীরকে শীতল ও আর্দ্র রাখে। এছাড়া ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি দেওয়া হতো। ।
কিডনি ভালো রাখে
ডাবের পানিতে রয়েছে ডাই-ইউরেটিক উপাদান, যা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী। কিন্তু এ পানি ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
ডাবের পানি কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কেননা এ পানিতে থাকা প্রচুর পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা ডাবের পানি খেতে পারবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ডাবের পানিতে থাকা যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিনেরর কার্যকারিতা বাড়ায়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা সুস্থ্য থাকে।
আরও পড়ুন: লাউয়ে আছে যত উপকার
তবে কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ডাবের পানি পানে কিছু সতর্ক অবলম্বন করার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় তারা সপ্তাহে তিন দিন এক গ্লাস করে ডাবের পানি খেতে পারেন। তবে ডাবের পানি খেলে সেদিন পটাশিয়াম যুক্ত অন্য ফল কম পরিমাণে খাওয়া ভালো।
এই গরমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মন সতেজ রাখতে ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত এক গ্লাস ডাবের পানি পান করাই যেতে পারে।